সরস্বতী পুজো, থুড়ি বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে। দিনের শুরুটা দেবী সরস্বতীর আরাধনা দিয়ে হলেও, সকাল থেকেই মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও। সেই বাঙালির প্রেম দিবস নিয়ে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন এমন এক বাঙালি যাঁকে তাঁর শ্রোতা, ফ্যান, ফলোয়াররা চেনেন ‘সদা সিঙ্গল’ আরজে অগ্নি বলে। এহেন ‘সদা সিঙ্গল’ অগ্নির সরস্বতী পুজো কেমন কাটে, আসুন, জেনে নেওয়া যাক…
সরস্বতী পুজোকে ঘিরে তৈরি হওয়া সামাজিক চল আর অগ্নির স্ট্রেট ড্রাইভ:
বাঙালি একটু অজুহাত খোঁজে প্রেম করার। মানে একটা মারাত্মক প্রেশার থাকে যে প্রেম করতেই হবে। আর সরস্বতী পুজোতে বাঙালি পুরো লাইসেন্স পেয়ে যায়। তুমি যার সাথে ঘোরো, যাকে ইচ্ছে নিয়ে ঘোরো, পাশের পাড়ার রঞ্জনাকে নিয়ে ঘোরো, কেউ দেখতে আসবে না। এটাই বাঙালি যুব সমাজের ওপর একটা পিয়ার প্রেশারের মতো কাজ করে যে আমাকেও একটা প্রেম করতে হবে।
বাসন্তী রঙের শাড়ি আর সদা সিঙ্গল অগ্নির প্রথম প্রেম:
আশুতোষ কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় একটা প্রেম করতাম। সেই প্রেমটা ৬ মাস চলেছিল। বুঝতেই পারছো, আমার প্রেমের অভিজ্ঞতা বিস্তর। তখন আমার প্রেমিকা আবদার করেছিল, সরস্বতী পুজোর দিন তোমার সঙ্গে একটু দেখা করবো। দেখা করেছিলাম রবীন্দ্র সরোবরে। পৌঁছে দেখি তিনি বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে। এখানে একটা ব্যাপার আছে। গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ১১ মাস যে শাড়িগুলোর রঙের নাম হলুদ, এই একমাসে সেগুলোর নাম বাসন্তী হয়ে যায়। ওগুলো কিন্তু হলুদ শাড়ি।
ভোগ আগে নাকি প্রেমিকা, কাকে বেছে নিয়েছিল অগ্নি?
এবার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন এক ঘটনা ঘটল। আমার স্কুলের এক মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে সরস্বতী পুজোয় বন্ধুদের গেট টুগেদার হয়। সেখানে বেশ জমিয়ে আড্ডা হয়। আমি আমার বান্ধবীকে বললাম, আমায় তো ওখানে একটু যেতে হবে। উত্তরে বলেছিল, একটা ছেলে যার ১৮ বছর বয়স, সে জীবনে প্রথমবার সরস্বতী পুজো কাটাচ্ছে প্রেমিকার সঙ্গে, সে এখন বলছে মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি যাবে খিচুড়ি খেতে? মোটামুটি সেই দিন থেকেই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত ছিল।
সরস্বতী পুজোর ঠিক কোন জিনিসটা ভাল লাগে অগ্নির?
আমি যদি মাসখানেক শেভ না করি বা চুল না কাটি, আমার মা ছাড়া আমায় কেউ বলে না যে আমায় ভাল দেখতে লাগছে। সরস্বতী পুজোতে এই যে ছেলেমেয়েরা সুন্দর সেজেগুজে বেরোয়, এটা দেখতে সত্যিই খুব ভাল লাগে। এত মানুষ একসঙ্গে সুন্দর সাজ নিয়ে রাস্তায় হাঁটছে। ৩ তারিখ থেকে আবার স্কুল কলেজ খুলে গেল। মানে অফসাইডের সমস্ত ফিল্ডারকে সরিয়ে নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলিকে বলা হচ্ছে অফসাইড খেলো।
শাড়ির সঙ্গে অগ্নির যোগাযোগটা একটু অন্যরকম…
আমি কিন্তু বিনে পয়সায়, সরস্বতী পুজোতে প্রচুর মেয়েদের কুঁচি ঠিক করে দিয়েছি। শাড়ির কুঁচি ধরা একটা আর্ট। শাড়ির কুঁচি যে ঠিক করে ধরতে পারে, তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, আমার যদিও তা সত্ত্বেও কিছু হয়নি। শাড়ির কুঁচি যে ঠিক করে ধরতে পারে, তার থেকে বড় হিরো সরস্বতী পুজোয় আর কেউ নেই। সেই-ই হচ্ছে আসল রাজহাঁস, যার পিঠে চড়ে সরস্বতী আসবেন। অফিসেও আমি প্রচুর মহিলার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিই। সরস্বতী পুজোয় হাতে-হাত ধরে ঘোরাটা যেমন ইম্পর্ট্যান্ট, শাড়ির কুঁচি ধরাটাও তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট।
আজকের যুব সমাজের জন্য ইনফ্লুয়েন্সার অগ্নির টিপস…
আমি এই মতামত দেওয়ার আগে সৃজিত মুখার্জির লেখা আর সোমলতার গাওয়া একটা গানের লাইন বলব, “নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার”। আমার ব্যক্তিগতভাবে এটা খুবই মনে হয় যে আমি যাই-ই পরি, যাই-ই সাজি না কেন, সেটা আমার নিজের ভাল লাগার জন্য। তবে এটা একটা অদ্ভুত ফিলিং যে, আমি যার সঙ্গে আছি, তার আমার সাজ দেখে কেমন লাগছে, সেই এক্সপেকটেশন একটা কাজ করে। এই ফিলিংটা কোনওরকমভাবে আমাদের কেড়ে নেওয়ার অধিকার বা এক্তিয়ার নেই।
কেন ভাল লাগে সরস্বতী পুজো?
আমার সরস্বতী পুজো ভাল লাগে কারণ এটা একটা ভালবাসার দিন। কোভিডের পর পৃথিবীজুড়ে এত হানাহানি চলছে, সেখানে একটা ছেলে আর মেয়ে প্রেম করুক না… এই যে, প্রথম-প্রথম শাড়ি পরতে শেখার যে অপ্রস্তুত ভাবটা, কুঁচিটা পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে মনে হওয়াটা, হয়তো প্রথমবার খোঁপা করেছে মেয়েটা… এটাই মাধুর্য। ইম্পারফেকশনের মধ্যেই কিন্তু ওই ভালবাসা, ওই সৌন্দর্যটা লুকিয়ে আছে। ‘চ্যাপ্টা গোলাপ’ গানে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, “দু’জনেরই নেই নিয়ম ভাঙার বয়েস, তবু দু’জনেরই আছে নিয়ম ভাঙার মন”।
‘এখানেই বাঙালি সবার থেকে আলাদা…’
ইলেভেন-টুয়েলভের একটা ব্যাপার এখনও কিছুটা থেকে গেছে। সেটা হল আর্চিজ় গ্যালারি। এই জন্যই বাঙালি আর অন্য কিছু জাতির থেকে আলাদা। বাঙালির ভালবাসাকে ওভাবে বিচার করা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে, আমার তো তাই-ই মনে হয়।
অলঙ্করণে: অভীক দেবনাথ
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা:
আরও পড়ুন: Encanto-Lowri-Disney: ডিজ়নির চশমা পরা হিরোইন, স্বপ্নপূরণ ছোট্ট লোরির
সরস্বতী পুজো, থুড়ি বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে। দিনের শুরুটা দেবী সরস্বতীর আরাধনা দিয়ে হলেও, সকাল থেকেই মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও। সেই বাঙালির প্রেম দিবস নিয়ে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন এমন এক বাঙালি যাঁকে তাঁর শ্রোতা, ফ্যান, ফলোয়াররা চেনেন ‘সদা সিঙ্গল’ আরজে অগ্নি বলে। এহেন ‘সদা সিঙ্গল’ অগ্নির সরস্বতী পুজো কেমন কাটে, আসুন, জেনে নেওয়া যাক…
সরস্বতী পুজোকে ঘিরে তৈরি হওয়া সামাজিক চল আর অগ্নির স্ট্রেট ড্রাইভ:
বাঙালি একটু অজুহাত খোঁজে প্রেম করার। মানে একটা মারাত্মক প্রেশার থাকে যে প্রেম করতেই হবে। আর সরস্বতী পুজোতে বাঙালি পুরো লাইসেন্স পেয়ে যায়। তুমি যার সাথে ঘোরো, যাকে ইচ্ছে নিয়ে ঘোরো, পাশের পাড়ার রঞ্জনাকে নিয়ে ঘোরো, কেউ দেখতে আসবে না। এটাই বাঙালি যুব সমাজের ওপর একটা পিয়ার প্রেশারের মতো কাজ করে যে আমাকেও একটা প্রেম করতে হবে।
বাসন্তী রঙের শাড়ি আর সদা সিঙ্গল অগ্নির প্রথম প্রেম:
আশুতোষ কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় একটা প্রেম করতাম। সেই প্রেমটা ৬ মাস চলেছিল। বুঝতেই পারছো, আমার প্রেমের অভিজ্ঞতা বিস্তর। তখন আমার প্রেমিকা আবদার করেছিল, সরস্বতী পুজোর দিন তোমার সঙ্গে একটু দেখা করবো। দেখা করেছিলাম রবীন্দ্র সরোবরে। পৌঁছে দেখি তিনি বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে। এখানে একটা ব্যাপার আছে। গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ১১ মাস যে শাড়িগুলোর রঙের নাম হলুদ, এই একমাসে সেগুলোর নাম বাসন্তী হয়ে যায়। ওগুলো কিন্তু হলুদ শাড়ি।
ভোগ আগে নাকি প্রেমিকা, কাকে বেছে নিয়েছিল অগ্নি?
এবার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন এক ঘটনা ঘটল। আমার স্কুলের এক মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে সরস্বতী পুজোয় বন্ধুদের গেট টুগেদার হয়। সেখানে বেশ জমিয়ে আড্ডা হয়। আমি আমার বান্ধবীকে বললাম, আমায় তো ওখানে একটু যেতে হবে। উত্তরে বলেছিল, একটা ছেলে যার ১৮ বছর বয়স, সে জীবনে প্রথমবার সরস্বতী পুজো কাটাচ্ছে প্রেমিকার সঙ্গে, সে এখন বলছে মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি যাবে খিচুড়ি খেতে? মোটামুটি সেই দিন থেকেই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত ছিল।
সরস্বতী পুজোর ঠিক কোন জিনিসটা ভাল লাগে অগ্নির?
আমি যদি মাসখানেক শেভ না করি বা চুল না কাটি, আমার মা ছাড়া আমায় কেউ বলে না যে আমায় ভাল দেখতে লাগছে। সরস্বতী পুজোতে এই যে ছেলেমেয়েরা সুন্দর সেজেগুজে বেরোয়, এটা দেখতে সত্যিই খুব ভাল লাগে। এত মানুষ একসঙ্গে সুন্দর সাজ নিয়ে রাস্তায় হাঁটছে। ৩ তারিখ থেকে আবার স্কুল কলেজ খুলে গেল। মানে অফসাইডের সমস্ত ফিল্ডারকে সরিয়ে নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলিকে বলা হচ্ছে অফসাইড খেলো।
শাড়ির সঙ্গে অগ্নির যোগাযোগটা একটু অন্যরকম…
আমি কিন্তু বিনে পয়সায়, সরস্বতী পুজোতে প্রচুর মেয়েদের কুঁচি ঠিক করে দিয়েছি। শাড়ির কুঁচি ধরা একটা আর্ট। শাড়ির কুঁচি যে ঠিক করে ধরতে পারে, তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, আমার যদিও তা সত্ত্বেও কিছু হয়নি। শাড়ির কুঁচি যে ঠিক করে ধরতে পারে, তার থেকে বড় হিরো সরস্বতী পুজোয় আর কেউ নেই। সেই-ই হচ্ছে আসল রাজহাঁস, যার পিঠে চড়ে সরস্বতী আসবেন। অফিসেও আমি প্রচুর মহিলার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিই। সরস্বতী পুজোয় হাতে-হাত ধরে ঘোরাটা যেমন ইম্পর্ট্যান্ট, শাড়ির কুঁচি ধরাটাও তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট।
আজকের যুব সমাজের জন্য ইনফ্লুয়েন্সার অগ্নির টিপস…
আমি এই মতামত দেওয়ার আগে সৃজিত মুখার্জির লেখা আর সোমলতার গাওয়া একটা গানের লাইন বলব, “নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার”। আমার ব্যক্তিগতভাবে এটা খুবই মনে হয় যে আমি যাই-ই পরি, যাই-ই সাজি না কেন, সেটা আমার নিজের ভাল লাগার জন্য। তবে এটা একটা অদ্ভুত ফিলিং যে, আমি যার সঙ্গে আছি, তার আমার সাজ দেখে কেমন লাগছে, সেই এক্সপেকটেশন একটা কাজ করে। এই ফিলিংটা কোনওরকমভাবে আমাদের কেড়ে নেওয়ার অধিকার বা এক্তিয়ার নেই।
কেন ভাল লাগে সরস্বতী পুজো?
আমার সরস্বতী পুজো ভাল লাগে কারণ এটা একটা ভালবাসার দিন। কোভিডের পর পৃথিবীজুড়ে এত হানাহানি চলছে, সেখানে একটা ছেলে আর মেয়ে প্রেম করুক না… এই যে, প্রথম-প্রথম শাড়ি পরতে শেখার যে অপ্রস্তুত ভাবটা, কুঁচিটা পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে মনে হওয়াটা, হয়তো প্রথমবার খোঁপা করেছে মেয়েটা… এটাই মাধুর্য। ইম্পারফেকশনের মধ্যেই কিন্তু ওই ভালবাসা, ওই সৌন্দর্যটা লুকিয়ে আছে। ‘চ্যাপ্টা গোলাপ’ গানে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, “দু’জনেরই নেই নিয়ম ভাঙার বয়েস, তবু দু’জনেরই আছে নিয়ম ভাঙার মন”।
‘এখানেই বাঙালি সবার থেকে আলাদা…’
ইলেভেন-টুয়েলভের একটা ব্যাপার এখনও কিছুটা থেকে গেছে। সেটা হল আর্চিজ় গ্যালারি। এই জন্যই বাঙালি আর অন্য কিছু জাতির থেকে আলাদা। বাঙালির ভালবাসাকে ওভাবে বিচার করা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে, আমার তো তাই-ই মনে হয়।
অলঙ্করণে: অভীক দেবনাথ
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা:
আরও পড়ুন: Encanto-Lowri-Disney: ডিজ়নির চশমা পরা হিরোইন, স্বপ্নপূরণ ছোট্ট লোরির