Dress Code Controversy: ‘ছেলের ন্যাকা বায়না শুনে ছুটে নালিশ… কোন ভবিষ্যৎ তৈরি করছি আমরা?’ প্রশ্ন ‘কোনি’-রচয়িতার মেয়ে মনামী নন্দীর

Monami Nandi: কোনও শিক্ষিকা যদি পেশাগত দিক থেকে সফল হন বা কাজটা সঠিকভাবে করেন, তারপর কর্তৃপক্ষের আর কিছুই বলার থাকে না।

Dress Code Controversy: ‘ছেলের ন্যাকা বায়না শুনে ছুটে নালিশ... কোন ভবিষ্যৎ তৈরি করছি আমরা?’ প্রশ্ন ‘কোনি’-রচয়িতার মেয়ে মনামী নন্দীর
Follow Us:
| Updated on: Aug 15, 2022 | 5:05 PM
‘‘ফাইট, কোনি ফাইট’’—সংস্কৃতিপ্রবণ, শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত বাঙালির জনজীবনে ‘সাঁতার পোশাক’ বা ‘সুইমিং কস্টিউম’-এর সবথেকে পরিচিত ‘রেফারেন্স পয়েন্ট’ সম্ভবত ‘কোনি’। সেই ছবিতেই কোনির উদ্দেশে ক্ষীদ্দা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত সংলাপ: ‘‘ফাইট, কোনি ফাইট।’’ সুইমিং কস্টিউম পরে কোনি-র ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন হওয়া শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়, যিনি নিজেও একজন শিক্ষিকা। সুইমিং কস্টিউম-বিতর্কে ‘কোনি’র রচয়িতা মতি নন্দীর মেয়ে মনামী নন্দীর চোখে এই গোটা ঘটনাটা কেমন? কীভাবে দেখছেন তিনি বিষয়টি? TV9 বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সরাসরি ভবিষ্যৎ গড়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন মনামী। তিনি যা বললেন:
যে বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তা যে কোনও আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পড়তে পারে, তাই-ই যথেষ্ট লজ্জার। আমার বাবা মতী নন্দীর লেখায় খেলা সবসময়ই একটা বড় জায়গা নিয়ে থেকেছে। কোনি যখন আমরা পর্দায় দেখেছি, তখনও একজন মহিলা সাঁতারুকে খুব স্বাভাবিকভাবে সুইম-স্য়ুটেই দেখেছি। সেটা নিয়ে কারও কোনও সমস্যা তো হয়নি। অথচ পরবর্তীতে টেনিস প্লেয়ার সানিয়া মির্জ়াকে তাঁর স্কার্টের মাপ নিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়তে হল—যথেষ্ট হাস্যকর একটা বিষয়। সেটা নিয়ে যখন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তখন আমরা অন্তত এটাই ভেবেছি, একজন খেলোয়াড় তাঁর পোশাক বাছবেন নিজের পছন্দে। সেটা কেন আপত্তিজনক, তা কিন্তু বোঝা যায় না।

এই সমস্যা কার বা কাদের, সেটা একটু ভাবার দরকার রয়েছে। আমি নিজে একজন ক্ল্যাসিকাল ডান্সার। পেশাগত কারণে স্টেজে আমার একরকম ‘অ্যাপিয়ারেন্স’ হবে এবং সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু স্টেজের বাইরে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কী করছি, কী ছবি দিচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি, কী খাচ্ছি—সেটা কিন্তু কারও চিন্তার বিষয় হওয়ার কথা নয়। একইভাবে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছ থেকে নানা ধরনের ভ্যালুর এক্সপেক্টেশন থাকে সমাজের। এখন আমার প্রশ্ন: এই ধরনের এক্সপেক্টেশন শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রেই থাকে কেন?
কোনও শিক্ষিকা যদি পেশাগত দিক থেকে সফল হন বা কাজটা সঠিকভাবে করেন, তারপর কর্তৃপক্ষের আর কিছুই বলার থাকে না। চাকরি থেকে বরখাস্ত করার তো প্রশ্নই ওঠে না। যে ছাত্রের এই অসুবিধেটা হয়েছে, আমি তার সমস্যার কারণটা জানতে বিশেষ আগ্রহী। পাশাপাশি তাঁর অভিভাবকেরও কোথায় অসুবিধে, সেটাও জানতে চাই। একজন অভিভাবক তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের এমন ন্যাকা বায়না শুনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে নালিশ করার বদলে এটা বুঝতে ব্যর্থ হলেন যে, তাঁর সন্তানের আসলে কাউন্সেলিং প্রয়োজন। সেই অভিভাবকেরও কোথাও গভীরে সমস্যা রয়েছে।

এভাবেই মহিলাদের উপর অপরাধ বাড়তে থাকে। আজ যে ছাত্র এমন একটা কাজ করে পার পেয়ে যায়, সে নিজেই বুঝে যায় যে তার ‘পাওয়ার প্লে’ (Power Play)-তে এক ধরনের ‘প্রিভিলেজ’ (পড়ুন বিশেষ বা বাড়তি সুবিধে পাওয়ার অধিকার) রয়েছে, লিঙ্গ-বৈষম্যগত সমস্যা, পরবর্তীতে এই কার্ডগুলোকে চেলে সে আরও খারাপ অপরাধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। কর্তৃপক্ষ এটা বুঝতে ব্যর্থ। উল্টে তাঁরা যদি সাহস দেখিয়ে আরও বড় কোনও পদক্ষেপ করে শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়ে একটা কড়া বার্তা দিতেন, তাহলে সেটা একটা বড় উদাহরণ হয়ে থেকে যেত।

একটা তুচ্ছ, অবাস্তব এবং অকল্পনীয় অভিযোগকে সমর্থন না-করে, যদি অভিভাবক ও ছাত্র দু’জনের সঙ্গেই কর্তৃপক্ষ কথা বলতেন, তাহলেই সমাজ এগিয়েছে বলেই বোঝা যেত। শেষে শুধু এইটুকুই বলব; ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ—কী ভবিষ্যৎ তৈরি করছি আমরা? সেটা ভেবে দেখার অত্যন্ত জরুরি সময়টা এবার এসেছে।