“একটা বাংলা গান করে দে না, ‘করতে পারি, যদি বাংলাটা শেখাস’, বলেছিলেন কেকে”, ২৪ বছরের বন্ধুর মৃত্যুর পর প্রথম বাংলা গান গাওয়ানোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই কথাগুলোই বললেন সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সুরেই ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ ছবিতে একমাত্র বাংলা গান গেয়েছিলেন কেকে। জিতের একাধিক হিন্দি ছবিতে ততদিন গেয়ে ফেলেছেন কেকে। বাড়ির সদস্য তিনি। ‘আকাশের নীলে’ গানটি ল্যাটিনোতে করা। আর এর জন্য কেকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেই পারেননি জিৎ। কিন্তু বাংলা না শিখে তো গাইবেন না কেকে। অতএব জিৎপত্নী চন্দ্রানী হলেন গৃহশিক্ষক। বাংলা শিখে গাইলেন ‘আকাশের নীলে’।
কেকের খুব কাছের ছিলেন শান, পলাশ, জিৎ। তিন বাঙালির সঙ্গে থাকতে থাকতে কখন নিজেও যেন বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হয়ে যান কেকেও। বাংলার সরষে মাছ তাঁর ছিল অত্যন্ত প্রিয় খাবার। জানালেন জিৎ। তবে কেকের সব কিছু ছিল পরিমিত। “আমাকে সব সময় বলত, একটু শরীরের দিকে নজর দিতে। আর কাল রাতেও আমি চন্দ্রানীর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেয়ে বেরিয়ে এই ভয়ানক খবরটা পাই। ছুটে যাই হাসপাতালে, যদি খবরটা ভুল হয়। নাহ, হল না। ওরঁ হাতটা ধরে বলি, আমায় ফিট হতে বলে, এত ফিট তুমি এইভাবে ছেড়ে চলে গেলে?” ভাই-বন্ধুর অন্তিম সময়ে শুধু এই কথাগুলোই মনে পড়েছিল জিতের।
গায়ক ভাল-মন্দ হতেই পারেন। কিন্তু মানুষ ভাল পাওয়া যায় খুব কম। কেকে ছিলেন সেই মানুষ, যাঁর ভাল ছাড়া কোনও মন্দ বলা সম্ভব নয়। ‘আশিকি ২’, ‘সড়ক ২’, ‘রাজ’-এর মতো বহু ছবির গায়ককে নিয়ে মত জিতের। “একটা মানুষ যাঁর মধ্যে কোনও নেগেটিভিটি ছিল না। বরং ছিল প্রচুর পজিটিভ ভাইভস”, বলছেন জিৎ। তিনি যখন পৌঁছান হাসপাতালে তখনও ঘাম ছিল শরীরে। ‘দেখে মনে হচ্ছিল একটু বিশ্রাম নিচ্ছে, এখুনি উঠে আবার গাইতে যাবেন কেকে’, বন্ধুর মৃত্যুর একদিন পরও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল ফোনের ওপার থেকে জিতের কথাগুলো শুনে।
তিনি ছিলেন মৃত্যুর পর থেকেই। কেকের মৃত্যু নিয়ে নানা মহলে নানা মত। জিৎ কী মনে করছেন, সত্যিই কি অতিরিক্ত দর্শকের কারণেই এমন হল? “সেটা বলতে পারব না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তো ছিলাম না। আর অতিরিক্ত দর্শক এসে যাওয়া মানে ৮ থেকে ৮০ কেকের অনুরাগী, এটাই বোঝা যাচ্ছে। প্রিয় শিল্পীকে সামনে দেখে নিজেদের সামলাতে পারাটাও কঠিন। ওঁর মতো ফিট মানুষ, কী যে হয়ে গেল! তবে ঘটনা যাই হোক বড় অসময়ে চলে গেল কেকে। কলকাতায় এসে বলেছিল অনুষ্ঠানে যেতে। আমার কাজ থাকায় পারলাম না। শেষ দেখাটা তাই বলে এমনভাবে দেখা দিয়ে গেলে বন্ধু!” যেন স্বগতোক্তি শোনালো জিতের শেষ কথাগুলো।