স্নেহা সেনগুপ্ত
৫০ বছরে পা দিল বাংলার গ্রুপ থিয়েটারের দল ‘সায়ক’। আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত হবে সায়কের ৫০তম ‘জন্মদিন’ উৎসব। মধ্য কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চস্থ হবে কিছু বিখ্যাত নাটক। ৫০ বছর ধরে দারুণ কিছু নাটক দর্শককে উপহার দিয়েছে সায়ক নাট্যদল। সেই নাটকগুলির তালিকা দখল করে রয়েছে ‘আত্মজন’, ‘ভালোলোক’, ‘প্রেমকথা’, ‘পুনরুত্থান’, ‘দায়বদ্ধ’র মতো কিছু নাটক। ১৯৭৩ সালের ২ ডিসেম্বর ১১জন নাট্যকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় সায়কের পথচলা। কীভাবে শুরু হয়েছিল সায়কের যাত্রা? নেপথ্যের কাহিনি TV9 বাংলাকে শোনালেন নাট্যদলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মেঘনাদ ভট্টাচার্য।
বাংলার ঘরে-ঘরে সায়কের ‘সুনাম’ ছড়াতে থাকার পাশাপাশি মেঘনাদও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে। ৫০ বছর ধরে এই দলটির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন তিনি। বলেছেন, “জানেন তো, আমাদের সায়ক কীভাবে শুরু হয়েছিল? সে এক বিচিত্র কথা। ১১ জন সদস্য ছিলাম আমরা। যদিও পরবর্তীকালে অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন দল থেকে। কিন্তু আমি এখনও টিকে আছি। আমাদের দলটা তৈরি হয়েছিল একটা বেডরুমে।” সেই সঙ্গে মেঘনাদের সংযোজন, “দেখুন, থিয়েটার সবসময়ই অর্থনৈতিক সংকটে ভোগে। আমাদেরও সেই প্রতিকূলতা ছিল। মহড়া দেওয়ার জায়গা ছিল না আমাদের। এক থিয়েটার-বন্ধু তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। ছোট্ট বাড়ি ছিল তাঁর। মায়ের সঙ্গে থাকত। বেডরুম বড়, হল ঘর ছোট। আমাদের বেডরুমটাই ছেড়ে দিয়েছিল মহড়া দেওয়ার জন্য।”
বেডরুম থেকে পথচলা শুরু করে সায়ক। ৬ বছর পর তৈরি করে নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ। মেঘনাদ বলেছেন, “বেডরুম থেকে পথচলা শুরু করে সোজা স্টেজ তৈরি করি আমরা। ১৯৭৯ সালে বিজন থিয়েটার তৈরি করে সায়ক-ই। ওখানে নাটক করতাম। কারও পরোয়া করতাম না।”
৫০ বছরে একটি দিনের জন্যেও বন্ধ হয়নি সায়কের কোনও নাটক। ছন্দপতন ঘটেনি এক লহমার জন্যেও। তবে নন্দীগ্রামে গুলি চলেছিল বলে নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে সরে এসেছিল সায়ক। মেঘনাদ বলেছেন, “তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের ফিরিয়ে এনেছিলেন।” সিনেমা-সিরিয়ালের তারকাদের নিয়ে সায়ক কাজ করেনি কোনওদিন। কণ্ঠে গর্বের সুর শোনা যায় মেঘনাদের। বলেন, “৫০ বছর ধরে স্টার তৈরি করছে সায়ক। আমাদের কোনওদিনও স্টারের ভরসায় থাকতে হয়নি। এটাই সায়কের ইউএসপি।”