আজ (০৫.১০.২০২২) শুভ বিজয়া। মা দুর্গাকে জল-মিষ্টি খাইয়ে বিদায় দেওয়ার দিন আজই। আজ ফেসবুকে বিজয়া দশমী নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন শিলাজিৎ মজুমদার। তিনি যা লিখেছেন, তাই তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
শিলাজিতের ফেসবুক পোস্ট:
জানি না পৃথিবীর অন্য কোথাও এ দর্শন আছে কি না। তিলে-তিলে তৈরি করো, সাজাও ,দারুন যত্নে,অনন্ত আদরে ,ভীষণ ভালোবাসায় সুন্দর করার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খড়ের উপর মাটির প্রলেপ বুলিয়ে, আস্তে- আস্তে করে তোলো তাকে সুন্দরের থেকেও সুন্দর। দিন নেই, রাত নেই মুহূর্তের পর-মুহূর্ত নিদারুণ ভালবাসায় সব কিছু উপেক্ষা করে প্রায়, সমস্ত মন, শরীর দিয়ে একটাই বাসনা, একটাই কামনা তুমি শক্তি হও, তুমি সুন্দর হও। নানা উপকরণে তাঁকে করে তোলো মায়াময়ী। সাজিয়ে দাও তাঁর সামনে নৈবেদ্য। আলোর রোশনাইয়ে তুমি হয়ে ওঠো আরও আলো। আরও আনন্দ আরও-আরও। নিজেকে নিঃশেষ করেও, নিদ্রাহীন হয়েও এভাবে নিখুঁত করে সাজানো তোমাকে যাতে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকুক সমগ্র পৃথিবী। তোমার প্রতি সবার দৃষ্টিতে, আরামে, শান্তিতে ঘুম আসে শিল্পীর চোখে।
তারপর?
মণ্ডপ ফাঁকা করে, সমস্ত বাতি যায় নিভে। শরীর থেকে কে যেন খুবলে বের করে নেয় হৃদপিণ্ডটা। বাজনা বেজে ওঠে বিদায়ের। ভাসিয়ে দিই তোমাকে। একী অদ্ভুত উপাচার। এত যত্নে লালন করা তোমাকে আমরা ভাসিয়ে দিই। নিজেকে খালি করে দিই। শূন্য করে দিই। চূড়ান্ত উল্লাসে। অযত্নে নয়, পরম যত্নে ডুবিয়ে দিয়ে আসি তোমাকে জলের কাছে। ডুবে যাও তুমি। ভেসে যাও তুমি। আমরা নিশ্চিন্তে এসে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে সেই মুহূর্তকে বলি শুভ। বলি শুভ বিজয়া।
কেন?
কেন লক্ষ-লক্ষ শিল্পীর অসাধারণ সৃষ্টির গায়ে জল লেগে গেলে যায় মাটি, খসে-খসে যায় আবরণ। প্রতিটা নিষ্ঠুর ঢেউয়ের আঘাতে আবার সে খড় হয়ে যায়।
হাজার-হাজার বছরের এ সংস্কৃতি কি শেখায় আমাদের? বিসর্জন বিষাদের নয়? বিদায় দেওয়াতেই, ভাসিয়ে দেওয়াতে, ভুলে যাওয়ার উৎসব করে বেঁচে থাকাটাই জীবন। অবাক লাগে বড়। এ দর্শন বড় কড়া দর্শন।
মায়া কাটানোর যন্ত্রনাকে অভ্যেস করা শিখিয়ে দেওয়ার একি অদ্ভুত সিলেবাস।
না চাইলেও পড়তে হবে। না বুঝলেও অভ্যস্ত হতে হবে। শক্ত হই। শক্তি সঞ্চয় করি। ভুলে যাওয়ার ভয় কমতে থাকে।