নন্দন পাল
বিজ্ঞাপন, শোয়ের অফার আর অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে যেখানে তাঁকে ‘পাবলিক’ চাইছে ‘সত্যজিৎ লুক’-এ, সেসব নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিচ্ছেন জিতু ‘অপরাজিত’ কামাল। আয়োজকরা খুঁজছেন ‘অপরাজিত’র সত্যজিতকে। কিন্তু জিতু এখন ‘তিতু’। দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘তিতুমীর’-এর জন্য এখন থেকেই মীর নিসার আলির চরিত্রে ঢুকে পড়েছেন জিতু কামাল। বাড়িয়েছেন চুল-দাড়ি। রীতিমত কৃচ্ছসাধন করছেন জিতু। গত দেড়-দু’মাস ধরে ছেড়েছেন মটন। রীতিমত কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ মেনে করছেন খাওয়াদাওয়া, থুড়ি ডায়েট। রোজ সকালে তিন-চার ঘণ্টা তিরন্দাজি আর লাঠিখেলার অনুশীলন করছেন জিতু। তারপর হাড়-ভাঙ্গা জিম সেশন। তিতুমীরের চরিত্রে খাপ খাওয়াতে ছিপছিপে নির্মেদ হতে চলছে কসরত। চলছে স্ক্রিপ্ট-সেশন। রাত দু’টো পর্যন্ত স্ক্রিপ্টেই ডুবে থাকছেন জিতু কামাল।
জিতু জানাচ্ছেন, ‘অপরাজিত’ এখন অতীত। সত্যজিতের চরিত্র থেকে বেরিয়ে তিতুমীরের চরিত্রে ঢোকাটা চ্যালেঞ্জিং। ‘অপরাজিত’র সময়ে পরিচালক অনীক দত্তের ছবির প্রতি ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা দেখে জিতু নিজে থেকেই দাঁতের সেটিং পাল্টে ফেলেন। আর এবার তিতুমীরের জন্য চুল-দাড়ি বাড়িয়েছেন আগেভাগে। জিতু বলছেন, এটাও সেই একই রকম ‘ইনভ্লভমেন্ট’। জিতু বিশ্বাসী: স্ক্রিপ্ট যা হয়েছে, তাতে তিতুমীরও একটা ইতিহাস তৈরি করবে বাংলা সিনেমায়। তিতুমীরের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক অন্য রুটিনে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন জিতু।
উৎপল দত্তের ‘তিতুমীর’ নাটক পড়ে পরিচালক দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগ্রহ জাগে তিতুমীরের ওপর ছবি করার। তবে দেবাদিত্য বলছেন: ‘‘এই ছবি কখনওই উৎপল দত্তের নাটকের দ্বারা অনুপ্রাণিত বা সেই নাটকের ছায়া অবলম্বনে নয়। বরং চিত্রনাট্যের নিরিখে একটি স্বতন্ত্র গল্প হয়ে উঠেছে তিতুমীর।’’
বেহালার নতুন সংঘের খুঁটি পুজোকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ছবির লোগো প্রকাশিত হল। মীর নিসার আলির তিতুমীর হয়ে ওঠা এবং বাঁশের কেল্লা থেকে লড়াই সংগঠিত করার প্রেক্ষাপটে এই ছবি। ছবিতে অভিনয় করছেন পুরুলিয়ার ৩০ জন আদিবাসী তীরন্দাজ আর ৫০ জন লাঠিয়াল। পাঠ্যবইয়ে বাঁশের কেল্লার ছবি দেখেছেন পরিচালক। তবে তার থেকে বেরিয়ে এসে একটি বড় সৃজন করছে টিম-তিতুমীর। বিশাল কেল্লার ওপরে পড়বে কম্পিউটার গ্রাফিক্স। বানতলার স্টুডিয়োয় তৈরি হচ্ছে সেই বাঁশের কেল্লা।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে তিতুমীরের শুট। ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। ঐতিহাসিক এই ছবির জন্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়াও ব্যবহৃত হবে বাংলার লোক সঙ্গীতের অনুষঙ্গ।
ছবিতে এক জমিদারের চরিত্রে ‘মন্দার’-খ্য়াত দেবাশিস মণ্ডল। তিনিও এসেছিলেন দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘তিতুমীর’ এর লোগো রিলিজের অনুষ্ঠানে। হাজির দর্শকদের মধ্যে তাঁকে দেখেই ফিসফাস: ‘‘এই, মন্দার এসেছে।’’ ‘মন্দার’ যদিও এখন জমিদার। জমিদার দেবনাথ রায়। বিদেশে পড়াশোনা যার, অস্ত্রচালনা আর ঘোড়ায় চড়তে যিনি পারঙ্গম। তিতুমীরের গল্প ছোটবেলা থেকে পড়া। তাই ঐতিহাসিক এই ফিল্মের জন্য নিজেকে তৈরি করতে দেবাশিস এখন কড়া ট্রেনিংয়ে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন। ‘মন্দার’-এর ছায়া কাটিয়ে তিতুমীরে দেবাশিস কতটা জমিদার দেবনাথ রায় হয়ে ওঠেন, তা সময়ই বলবে।