বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের মাঝ আকাশে যে তারাটি সবচেয়ে বেশি জ্বলজ্বল করত, তাঁর নাম উত্তমকুমার। প্রতি ছবি পিছু ৪-৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক চাইতেন উত্তম। বর্তমান সময়ের নিরিখে তা প্রিয় এক কোটি টাকার কাছাকাছি। তাঁকে ছবিতে নেওয়ার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে রাজি হতেন প্রযোজকেরাও। টাকা পয়সার অভাব ছিল না উত্তমকুমারের। কিন্তু তা সত্ত্বেও টালিগঞ্জে ভিক্ষা করেছিলেন উত্তম। কী ঘটেছিল মহানায়কের জীবনে, সত্যি জানিয়েছেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। ক্যামেলিয়া প্রযোজনা সংস্থার সাইটে আপলোড হয় সেই ভিডিয়ো। যেখানে মাধবীকে বলতে শোনা যায় কথাগুলো। তিনি বলেছেন, “সবটাই আমার চোখের সামনে ঘটেছে। সহকারীদের সঙ্গে নিয়ে টালিগঞ্জের রাস্তায় ভিক্ষা করেছিলেন আমাদের মহানায়ক…।” ঠিক কী ঘটেছিল, কেন উত্তমকুমারের মতো একজন মহানায়ককে রাস্তা নেমে লোকের কাছে টাকা ভিক্ষা করতে হয়েছিল, জানিয়েছিলেন মাধবী। শুনলে চমকে যাবেন।
সেই সময় বন্যা হয়েছিল। বীভৎস বন্যা। চারিদিকে হাহাকার। মানুষের আর্তনাদ মোটে সহ্য করতে পারতেন না উত্তম। তাঁর নরম মন কাঁদত তা শুনে। নিজের সবটুকু উজাড় করতে দিতে চাইতেন। মাধবী জানিয়েছিলেন, মহানায়ক উত্তমকুমারকে তারকা হিসেবেই সকলে চেনেন, কিন্তু মানুষ উত্তমকে চেনার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল। বলেছিলেন, “বন্যার সময় চারদিকের পরিস্থিতি, মানুষের হাহাকার দেখে উত্তমদা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর কাছে যা টাকাপয়সা ছিল, তা দিয়ে তো ত্রাণের কাজ সম্পূর্ণ হত না। তাই সহকারীদের সঙ্গে নিয়ে টালিগঞ্জের রাস্তায়-রাস্তায় ভিক্ষাও করেছিলেন তিনি।”
কেবল তাই নয়, মাধবী জানিয়েছিলেন, উত্তমকুমার কারও কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর কাছে কেউ এসে সমস্যার কথা জানালে তিনি যথা সম্ভব সাহায্য় করতে এগিয়ে যেতেন। কোন মেকআপ আর্টিস্টের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। কোন দুস্থ শিল্পীর হাতে টাকা নেই। তাঁদের প্রত্যেককে আর্থিক সাহায্য় করেছিলেন উত্তমকুমারই। বয়স্ক-অসহায় শিল্পীদের জন্য তৈরি করেছিলেন ‘শিল্পী সংসদ’। মাধবীর কথায়, “ওরকম পরোপকারী মানুষ দ্বিতীয়টা আর হবে না। আজ তাঁর বড্ড অভাব অনুভব করি।”