রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সাসপেনশন বহাল, TV9 নাইন বাংলার কাছে ফোঁস করলেন পরিচালক, ‘মস্তানির একটা সীমা আছে’

Director-Federation Fight: ফোঁস করলেন বাঙালি পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। আগামী তিনমাস পরিচালনার কাজ করতে পারবেন না তিনি। তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেডারেশনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে একটি শুটিং করেছেন তিনি। ফলে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পাল্টা 'মস্তানি' করার অভিযোগ এনেছেন রাহুল। পাশে পেয়েছেন টলিপাড়ার অন্যান্য পরিচালকদেরও।

রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সাসপেনশন বহাল, TV9 নাইন বাংলার কাছে ফোঁস করলেন পরিচালক, 'মস্তানির একটা সীমা আছে'
রাহুল মুখোপাধ্যায় এবং স্বরূপ বিশ্বাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 24, 2024 | 12:26 PM

পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের তিনমাসের সাসপেনশন বহাল থাকছে। ফেডারেশনকে লুকিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে শুটিং করে আসার জন্য তাঁকে তিনমাসের জন্য কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা এমনই, আগামী তিনমাস তিনি ফ্লোরেই ঢুকতে পারবেন না। এই ঘটনার পর লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন রাহুল। তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। তাঁকে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না ফেডারেশন। তাঁর নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় রাহুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন টলিপাড়ার পরিচালকেরা। রাহুলকে সমর্থন জানিয়ে তাঁরা ফেসবুকে লম্বা পোস্ট করছেন। ইতিমধ্যেই পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পোস্ট করে লিখেছেন, “আমি ফেডারেশনের তরফে রাহুলের বিরুদ্ধে এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করি। তাঁকে তাঁর কাজ করতে নিঃশর্ত অনুমতি দেওয়া হোক – এই আবেদন রাখছি।” পরিচালক রাজ চক্রকর্তীও রাহুলকেই সমর্থন করেছেন এবং স্বরূপ ঘোষ ও ফেডারেশনের দিকে উল্টো পিঠ দেখিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই, ২০২৪) বিকেল ৫টায় ডিরেক্টার্স গিল্ডের একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন পরিচালকেরা।

এ ব্যাপারে ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুদেষ্ণা রায় বলেছেন, “রাহুলকে যে আমরা কর্মবিরতির কথা বলেছি, তাতে আমাদের খুবই খারাপ লেগেছে। কারও কাজ বন্ধ হয়ে যাক, এটা আমরা চাই না। রাহুল একটি প্রজেক্ট কলকাতায় শুরু করেছিল। সেটার চারদিন শুটিং হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। তারপর কাউকে না জানিয়ে, কেবল ডিওপিকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। এই ধরনের গোপনে শুটিং করলে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়।”

রাহুল মুখোপাধ্যায়কে পরিচালক হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হিসেবে তাঁকে ছবিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্দিষ্ট প্রযোজনা সংস্থা। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস দাবী করেছেন, এরকম কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই। সেরকম কোনও পদ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। টাকা পয়সার সমস্যার কারণে মাত্র চারদিন শুটিং করে বন্ধ হয়েছিল ছবির কাজ, এমন তথ্য মিলেছে। এ ব্যাপারে টিভি নাইন বাংলা সরাসরি কথা বলে স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, “টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা হয়নি। শব্দটা ভুল। ওয়েজেস নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। সেটা মিটে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা ফুল পেমেন্ট পাইনি।” স্বরূপ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাহুলকে তিন মাসের জন্য কাজ থেকে বিরতই থাকতে হবে। তাঁর উপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে।

এই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় একাধিক পরিচালক-প্রযোজক রাহুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। টলি অন্দর থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাহুলের সমর্থনে জোট বাঁধছেন টলিউডের পরিচালকেরা। বৃহস্পতিবার ডিরেকটার্স গিল্ডের তরফ থেকে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে সরব হয়েছেন কুণাল ঘোষও। তিনি লিখেছেন, “পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ঘোষণায় ভুল থাকলেও শাস্তি সমর্থন করি না। আলোচনা হতে পারত। ফেডারেশনের কিছু কাজ টলিউডের ক্ষতি করছে। প্রযোজক, পরিচালকরা বিরক্ত হচ্ছেন। কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আজ কেউ মুখ খুলছে না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকছে। আরও কাজ আসার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হচ্ছে।”

রাগে ফুঁসছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও। টিভি নাইন বাংলাকে তিনি বলেছেন, “একটা প্রজেক্টের সব দায়িত্বই যখন পরিচালকের, সেখানে তিনি কাজ করবেন কি না, সেই দায়িত্ব ফেডারেশন করে নিচ্ছে? আমাদের পরিচালকদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব ফেডারেশনকে কে দিয়েছেন? আমরা তো অফিসে কাজ করি না। ফলে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে কেন?”

যাঁকে ঘিরে এত বিবাদ, সেই পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন টিভি নাইন বাংলার কাছে। তিনি বলেছেন, “ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হিসেবে আমাকে কাজ করতে বলেছে প্রযোজনা সংস্থা। সেই দায়িত্ব আমি নিশ্চয়ই পালন করব। কাজটা কিন্তু আমি আমার মতো করেই করছি। ডিরেক্টর হিসেবে সমীক হালদার কাজটা করবেন। আমার ফেডারেশনকে কিছুই জানানোর নেই এই মুহূর্তে।”

সাসপেনশন থাকার কারণে ফ্লোরেই যেতে পারবেন না পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হয়ে কীভাবে কাজ করবেন রাহুল, সেই সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “আমাকে ডিরেক্টর হিসেবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমার ভুল কী, আমি জানি না। সেটা নিয়ে পরবর্তী আলোচনাও হবে। কিন্তু ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার মানে, একজন প্রোডিউসারকে আমি রিপ্রেজ়েন্ট করছি। সেটা থেকে আমাকে ফেডারেশন কীভাবে আটকাবেন, এটা বলুন আগে… এটা কোথাকার আইন।”

রাহুল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশের একটি বিষয়বস্তুর জন্য, বিদেশি কোম্পানির কাজ করতে তিনি সেখানে শুটিং করতে গিয়েছেন। সেটার জন্য তিনি ফেডারেশনের কাছে জবাবদিহি করবেন কেন। পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন রাহুলও। জানিয়েছেন, কোনও টাকা বয়েকা নেই। প্রত্যেক টেকনিশিয়ানকে ডবল পেমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বলেছেন, “যদি কারও টাকা বাকিও থাকে, সেটা পরিচালকের মাথা ব্যথার কারণ নয়। সেটা ফেডারেশন বুঝে নেবে প্রযোজক কিংবা চ্যানেলের সঙ্গে। আর আমি যতটুকু জানি, সকলের ডবল পেমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমার এটা ভেবেই খারাপ লাগছে, ফেডারেশন নিজেদের ইগোতেই আটকে আছে। তারা মস্তানি করে কাজ আটকে চাইছে। সেই মস্তানির জন্যই আমাকে তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করেছে। এ পর্যন্ত তাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হয়েও নাকি তারা আমাকে কাজ করতে দেবে না। মস্তানির একটা সীমা আছে!”