সাজি চৌধুরি (Shaji Chowdhary)। নাহ্! এই নাম বললে হয়তো আপনার চিনতে অসুবিধে হবে। কিন্তু ওয়েব সিরিজ ‘মির্জাপুর’ (Mirzapur)-এর ‘মকবুল’কে (maqbool) দর্শক এক ডাকে চেনেন এই নামেই। তিনিই সাজি। মুম্বই থেকে এক্সক্লুসিভলি কথা বললেন TV9 বাংলা ডিজিটালের সঙ্গে। নেপোটিজম, কাস্টিং কাউচ, স্ট্রাগল… আড্ডায় উঠে এল বিবিধ প্রসঙ্গ।
২০০৪ থেকে মুম্বইতে কেরিয়ার শুরু করেছেন। ১৬ বছরের জার্নি কতটা কঠিন ছিল?
১৬ বছরের জার্নি খুবই কঠিন ছিল। অনেক কম্পিটিশন। অনেক স্ট্রাগল। মুম্বইতে কাজের মানুষ অনেক। ছোট-ছোট কাজের জন্যও অনেক ঘুরতে হত। অনেক অডিশন দিতে হত। অনেক লোকের সঙ্গে দেখা করতে হত। বাড়ি থেকে দূরে থেকে এই কাজটা করতে হত আমাকে। কারণ আমার বাড়ি রাজস্থানের জয়পুরে। পরিবারের সকলেই ওখানে থাকেন। আমি একা কাজের জন্য মুম্বইতে থাকি। জীবনে ভাল কিছু সুযোগ পাব, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব, এটা ভেবেই ১৬ বছর ধরে ঘুরে চলেছি।
আরও পড়ুন, গ্রাসরুটে পলিটিশিয়ান কম, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি: পঙ্কজ ত্রিপাঠী
‘মির্জাপুর’-এর ‘মকবুল’-ই তো এত জনপ্রিয়তা দিল?
‘মির্জাপুর’-এর আগেও ভাল সুযোগ পেয়েছি। ২০০৭-এ ‘যোধা আকবর’-এ ‘আদম খান’-এর চরিত্র করেছিলাম। তবে হ্য়াঁ, ‘মকবুল’ করার পর যে জনপ্রিয়তা পেয়েছি, তা এর আগে সত্যিই পাইনি। অনেক স্ট্রাগল করেছি। আমার ধারণা, সকলেই নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে চেষ্টা করেন। দেরিতে হলেও ভগবান স্বপ্ন পূরণ করেছেন। সত্যিই যখন আজ চরিত্রের নামে লোকে আমাকে চিনছে, খুব আনন্দ হয়। একজন অভিনেতার কাছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না।
গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার তৈরি করতে চেয়েছিলেন কেন?
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আকর্ষণ ছিল আমার। অ্যাটেনশন পেতে ভাল লাগত। মনে হত, কিছু আলাদা করতে হবে। ক্লাস সিক্স, সেভেন থেকেই প্রজাতন্ত্র দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। ছোটবেলায় গ্রামে নবরাত্রির সময় রামলীলা হত, সেখানে অংশ নিতাম। ফলে ইচ্ছেটা ছোট থেকেই ছিল।
‘মির্জাপুর’-এর ‘মকবুল’ ‘কালিন ভাইয়া’র রাইট হ্যান্ড। এর আগেও এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমন ধরনের চরিত্রই আপনাকে অফার করা হয় কেন?
আমি এর আগে এই ধরনের চরিত্র ‘তেবর’, ‘পিকে’, ‘মহেঞ্জোদারো’, ‘কাবিল’-এ অভিনয় করেছি। আমার মনে হয়, পার্সোনালিটি দেখে, হাইট দেখে লোকে হয়তো ভাবে এই রাইট হ্যান্ড, লেফট হ্যান্ড চরিত্রেই আমাকে ভাল মানাবে। আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে খুব তাড়াতাড়ি ইমেজ তৈরি হয়ে যায়। একবার যদি কেউ কোনও এক ধরনের চরিত্রে ভাল পারফর্ম করে, তখন সেই ধরনের চরিত্রেই বারবার সেই অভিনেতাকে ভাবা হয়। মির্জাপুরেও অফার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম, এই ধরনের চরিত্র অনেক করেছি। আর করব না। পরিচালক গুরুমিত সিং, আমার গুরু। স্যার বলেছিলেন, ‘সাজি, তুমি এর আগে এই ধরনের চরিত্র করেছ, কিন্তু আমি বলব, রাইট হ্যান্ড থেকে বেরিয়ে গিয়ে এই চরিত্রের গুরুত্ব আছে। তুমি করো।’ তখন মনে হয়েছিল, ঠিক আছে রাইট হ্যান্ড হলেও চরিত্রটা কেমন, কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমি কীভাবে করব, সেটা আসল বিষয়।
‘মকবুল’-এর মতো এত অনুগত মানুষ কি বাস্তবে থাকা সম্ভব?
(একটু ভেবে) মকবুলের মতো অনুগত মানুষ নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, সংখ্যায় তারা কম। আসলে আনুগত্যেরও অন্য মজা রয়েছে। আমি বলব, কিছু ক্ষেত্রে আনুগত্য ভাল। পরিবার হোক বা কাজ অথবা লাইফ পার্টনার, কোনও না কোনও জায়গায় অনুগত থাকা ভাল।
আপনি কি বাস্তবে কোনও ক্ষেত্রে এতটা অনুগত?
আমি আমার পরিবারের প্রতি অনুগত। আমার তো মনে হয়, আমি যাই-ই করি না কেন, যত বড় অভিনেতাই হই না কেন, আমার সঙ্গে পরিবার না থাকলে এসবের কোনও মানে নেই। কাজের প্রতিও আমি এতটাই অনুগত যে, সেটে আগে পৌঁছে গেলে ভাল লাগে।
‘মকবুল’-এর এত জনপ্রিয়তা দেখে স্ত্রী কী বললেন?
ও তো আগে থেকে জানে, আমি অনুগত (হাহ্, হাহ্, হাহ্…)। মির্জাপুর দেখার পর বাকিদের ফিডব্যাক শুনে ওর ভাল লেগেছে। ওর মনে হচ্ছে, হ্যাঁ, এতদিন তো আমি জানতামই, এবার গোটা পৃথিবী জানে মকবুল কত অনুগত (হাসি)।
আরও পড়ুন, কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জাজমেন্টাল হবেন না: শ্বেতা
‘মির্জাপুর’-এর পরের সিজনে ‘মকবুল’ নিশ্চয়ই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে?
এটা সবথেকে ভাল জানেন, পুনিত কৃষ্ণ। শো-এর রাইটার। তৃতীয় সিজনে চরিত্র হিসেবে মকবুলের আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা উচিত।
‘মকবুল’কে নিয়ে অনেক মিম তৈরি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, আপনি দেখেছেন?
(হাসি) হ্যাঁ, কিছু কিছু দেখেছি।
কোনটা ভাল লেগেছে?
মকবুলের উপর ব়্যাপ গান বানিয়েছে কেউ, সেটা দারুণ লেগেছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম নিয়ে এত চর্চা হয়। আপনার কি মনে হয়, নেপোটিজম রয়েছে বলেই ‘মকবুল’-এর মতো চরিত্র পেতে এত বছর সময় লাগল?
ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম আছে। সে জন্যই আমার মকবুলের মতো চরিত্র পেতে এত বছর লাগল, এটা সত্যি। কিন্তু পৃথিবীতে সব জায়গায় নেপোটিজম আছে। ২০০৭-এ যোধা আকবরে তো মকবুলের থেকেও বড় চরিত্র করেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, ট্যালেন্টের কদর আছে। হ্যাঁ, সময় লাগে হয়তো। কিন্তু সফলতা আসবেই। রাজনীতিতে গান্ধী পরিবার দেখুন, ইন্দিরা, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা সবাই রাজনীতিতে। পৃথিবীর সব রাজাই তো চান, আমার ছেলেই রাজা হবে। ইন্ডাস্ট্রিতেও তাই। বড় অভিনেতা বা তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো এই কাজ করতেই চাইবে।
আপনার সন্তানদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহ দেবেন?
আমার ছেলে ১৯ বছরের। মেয়ের বয়স ২২। মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গিয়েছে। ওর ব্যাঙ্কিংয়ে আগ্রহ আছে। ও তার জন্য পড়াশোনা করছে। ছেলে সেকেন্ড ইয়ারে। কী করতে চায়, এখনও কিছু ঠিক করেনি। ওদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ইচ্ছে থাকলে, আমি আটকাবো না। কিন্তু এটাও বলব, এটা একেবারেই সহজ কাজ নয়। নিজেকে অনেক তৈরি করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। গ্ল্যামার দেখে চলে গেলে ভুল হবে।
আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?
কাস্টিং কাউচ নিয়েও অনেক চর্চা হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। আপনি ফেস করেছেন?
প্রজেক্টের কথা হয়ে যাওয়ার পর বাদ পড়েছি, এটা আমার সঙ্গেও হয়েছে। কিন্তু সেটা কাস্টিং কাউচ কিনা বলতে পারব না। হয়তো আমার থেকে ভাল কাউকে পেয়েছিলেন, তাই আমি বাদ পড়েছিলাম।
সেই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে চাইবেন?
আসলে যোধা আকবরের পরে ‘গজনি’র অফার পেয়েছিলাম। মূল চরিত্রে কাস্ট হয়েছিলাম। পেমেন্টের কথা হয়ে গিয়েছিল। শুটিং ডেট পেয়ে গিয়েছিলাম। শুটিংয়ের তখন দু’দিন বাকি। ফোন পেলাম, আপনি করছেন না। অন্য কেউ করছেন। খুব খারাপ লেগেছিল। কেঁদে ফেলেছিলাম। অনেক দিন ধরে কেঁদেছিলাম। এত বড় সুযোগ হাত থেকে চলে গেল, খুব খারাপ লেগেছিল।
আপনার নতুন কী-কী কাজ আসছে?
‘ভিমা কোরেগাঁও’ নামে একটা ছবি করলাম। অর্জুন রামপাল রয়েছেন। আমার চরিত্রের নাম মুশির উল মুল্ক। রমেশ থাটে পরিচালক। কোভিডের আগে অর্ধেক শুটিং হয়েছিল। ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে বাকি শুটিং হবে। আর একটা প্রোজেক্ট শেষ করলাম। ছবির নাম ‘বাগাবাত’। লক্ষ্ণৌতে শুটিং ছিল। চরিত্রের নাম উদয়প্রতাপ সিং। দুটোই পিরিয়ড ফিল্ম। আরও দু-একটা সই হয়েছে। কিন্তু এখন বলতে পারব না।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধু কে?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি জানতে চান, একজনই। পঙ্কজ ত্রিপাঠি। আমার ভাই, বন্ধু সব…।
আপনার পদবী চৌধুরি। আপনি জানেন, বাঙালিদের মধ্যেও অনেক চৌধুরি রয়েছেন?
হ্যাঁ, জানি। আমার বাঙালি বন্ধু রয়েছে অনেক।
কলকাতায় এসেছেন কখনও?
না, যাওয়া হয়নি। তবে কলকাতা যাওয়ার ইচ্ছে আছে। আমার কাকা কাজ করতেন। চার বছর পোস্টেড ছিলেন। বহুবার যেতে বলেছিলেন। যাওয়া হয়নি। দুর্গাপুজোর সময় যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।