পর্দার রোম্যান্টিক উত্তমকুমার জেঠা হিসেবে কেমন ছিলেন? ভাইঝির অভিজ্ঞতা অবাক করা…

Sneha Sengupta |

Jul 11, 2024 | 9:20 PM

Uttam Kumar Chatterjee: বাংলা ছবির রোম্যান্টিকতার পোস্টার বয় মহানায়ক উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জন্য আজও ব্যাকুল হাজার-হাজার মহিলা। এই মানুষটা জেঠামশাই হিসেবে কেমন ছিলেন, অভিজ্ঞতা জানালেন তাঁর ভাইঝি ঝিমলি, তথা অভিনেতা তরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা মনামী বন্দ্যোপাধ্যায়।

পর্দার রোম্যান্টিক উত্তমকুমার জেঠা হিসেবে কেমন ছিলেন? ভাইঝির অভিজ্ঞতা অবাক করা...
উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়।

Follow Us

বাঙালির ম্যাটনি আইডল মহানায়ক উত্তমকুমার। তিনি রুপোলি পর্দার এক অধরা দেবদূত। এমন এক তারকা, যাঁকে জনসমক্ষে দেখেছেন গুটি কয়েক মানুষই। আর দেখেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। যে মানুষটার রোম্যান্টিকতা আপামর বাঙালির মন স্পর্শ করেছিল, ব্যক্তিজীবনে তিনি কারও পুত্র, কারও স্বামী, কারও পিতা। তিনি আবার ঝিমলির জেঠামশাইও। কে এই ঝিমলি? তিনি মহানায়কের ছোট ভাই বুড়ো, তথা অভিনেতা তরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের একমাত্র কন্যা মনামী বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা তরুণ এবং জেঠা উত্তমের সঙ্গে কাটানো ছোটবেলার নানা স্মৃতি টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালকে জানালেন অকপট।

জেঠামশাই শব্দটার সঙ্গে গাম্ভীর্যের অদ্ভুত সংযোগ। শব্দটা কানে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক কঠিন মানুষের অবয়ব। যাঁর শিরদাঁড়া সোজা এবং কঠিন কণ্ঠস্বর! পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভয়ানক শাসনে রাখেন যিনি। উত্তমকুমারও কি সেরকমই ছিলেন? নাকি ভুবন ভোলানো হাসির অধিকারী মানুষটার ক্ষেত্রে জেঠামশাই সংজ্ঞাটা পাল্টে গিয়েছিল? জানলে অবাক হবেন, বাংলা ছবির রোম্যান্টিকতার পোস্টার বয় উত্তমকুমার ব্যক্তিজীবনে ছিলেন ভীষণরকম রক্ষণশীল। একই রকম রক্ষণশীল ছিলেন তাঁর ভাই বুড়োও। মনামীদেবী বলেছেন, “হতে পারেন আমার বাবা তরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়, জেঠা উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়, কিন্তু তাঁরা ছিলেন সাংঘাতিক কনজ়ারভেটিভ, রক্ষণশীল মানসিকতার মানুষ।”

সেই রক্ষণশীলতা ছিল কী ধরনের? মনামীদেবীর সংযোজন, “খুব ছোটবেলায় বাবা-জেঠা আমাদের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, যে ভাবে মানুষ অফিসে চাকরি করেন, তাঁদের কাজটাও সেরকমই। আলাদা একেবারেই নয়। ফলে তা নিয়ে বিহ্বল হওয়ার কিছু নেই। স্টুডিয়োর কথা স্টুডিয়োতেই রেখে আসতেন তাঁরা। বাড়িতে এই নিয়ে উচ্চবাচ্য ছিল না। এমনও হয়েছে, আমার মা আর বাবা সিনেমা নিয়ে কথা বলছেন, আমাকে দেখেই তাঁরা চুপ হয়ে গিয়েছেন।”

ছোটবেলায় বাড়িতে বহু নামী শিল্পীদের আনাগোনা ছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়াদেবী, সকলেই আসতেন। ঝিমলিরা তাঁদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাবড় তারকাদের সামনেই বড়রা তাঁদের বলতেন, “ওনাকে প্রমাণ করো। ইনি গুরুজন।” তারকা নন, চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ছোটদের কাছে সহকর্মী হিসেবেই চিরকাল পরিচিতি পেয়েছেন সুপ্রিয়া, সুচিত্রারা।

ঝিমলিরা যখন বড় হচ্ছিলেন, তখন পার্টির চল ছিল না। ঝিমলি পড়তেন কলকাতার লোরেটো হাউজ়ে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, আড্ডা দেওয়ার রীতি ছিল না পরিবারে। উত্তমকুমার-তরুণকুমারের বারণ ছিল। সেই সময় বিকেল ৪টে থেকে ৬টা পর্যন্ত টি-পার্টি হত স্কুলপড়ুয়াদের। বাবার সম্মতি পেতেন না ঝিমলি। কিন্তু মা অভিনেত্রী সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতিতে তিনিও গিয়েছিলেন এক-দু’বার।

আরও আছে। সিনেমা বাড়ির মেয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে যেতেন না সেইভাবে। প্রিমিয়ারের আগে প্রাইভেট শো হত ইন্ডাস্ট্রিতে। এখনবার মতো প্রচার পর্ব চলত না। জেঠিমা গৌরীদেবী (উত্তমকুমারের স্ত্রী)মেটাতেন ছোটদের আবদার। তাঁর প্রশ্রয়েই একবার-দু’বার বাবা-জেঠার সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ঝিমলিদের। ওই পর্যন্তই। শুটিংয়ে গিয়েছিলেন খুবই কম। তবে’পাতালঘর’-এ পুত্র জুপিটারের (অভিনেতা সৌরভ চট্টোপাধ্যায়) শুটিংটাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে দেখেন ঝিমলি। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রৌঢ়া ঝিমলি বলেন, “জানেন, ওই শুটিংটাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছিলাম…।”

Next Article