রাজ্যজুড়ে চলছে ভোটের গরম হাওয়া। ভোট-বাগানে এখন দুই ফুল: ঘাস ফুল আর পদ্ম ফুল। দুই ‘ফুল’-এর ঝাপটায় বাংলার সংস্কৃতিমহল এখন দ্বিধাবিভক্ত। অবশ্য ‘লাল সেলাম’ও জানাচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্য়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য গান বাঁধলেন ‘বিতর্কিত’ গায়ক তথা রাজনৈতিক ব্য়ক্তিত্ব কবীর সুমন। প্রসঙ্গত কামদুনি-ঘটনার সময় মমতার বিরোধিতা করে গান বেঁধেছিলেন তিনি। সে বার মুখ্য়মন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর সরাসরি প্রশ্ন ছিল: “কোথায় ছিলে নেত্রী তুমি/একটিবার কি দেখতে গেলে/সবই তবে পালটে গেল/যেই না তুমি রাজ্য পেলে।”
বাংলার সংস্কৃতিমহল আজ স্পষ্টতই ‘রাজনৈতিক’। প্রতিদিনই কেউ-না-কেউ কোনও-না-কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন। শিল্পীরা হয় রাতারাতি বদলে ফেলছেন তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ অথবা দলগত অবস্থান। আজ যিনি ‘অমুক’দলে, কাল তিনিই আবার ‘তমুক’দলে। এমতাবস্থায় ‘মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ সুমন মমতার জন্য গান বেঁধে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন, “বাংলা ও মমতার জন্য আমার গান। সুর করে নিয়েছি। রেকর্ড করার কথা আসছে শনিবার। এ্যারেঞ্জমেন্ট আমার। গাইবেন নবীনরা – সঙ্গে এই বুড়ো।” কবীর সুমন শুধু মমতার জন্যই যে গান লিখেছেন তা নয়, বাংলার জন্য নিজের তৈরি করা ‘জয় বাংলা’রাগে খেয়াল আঙ্গিকে এই গান বেঁধেছেন তিনি।
একসময় তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কবীর সুমন। জিতেওছিলেন। কিন্তু দলের সঙ্গে কিছু মনমালিন্য হওয়ায় তৃণমূল ছেড়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ফের ‘মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ হয়ে ওঠেন তিনি। কামদুনি-ঘটনার সময় মমতার বিরোধিতা করে যিনি গান বেঁধেছিলেন, সেই সুমনের এ বারের গানের প্রথম দু’টো লাইন এ-রকম: “বাংলা থাকুক বাংলায়/বাংলা থাকুক মমতায়।” গানের প্রতিটি লাইনে বাংলার জয়ধ্বনি। কবীর সুমনকে ফোনে ধরা হলে TV9 বাংলাকে তিনি বলেন, “আজ আমি ৭৩। চুল-দাড়িতে পাক ধরেছে। কিন্তু ৫৩-এ কি আমি এরকম ছিলাম? অতীতে মতপার্থক্য হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা সারাজীবন থেকে যাবে, তা তো কোনও কাজের কথা হতে পারে না। বরং কী হয়েছিল, তা ভুলে যান। মন থাকলে মনের বদল হবে এটাই স্বাভাবিক।”
গানটি রের্কডিঙের দায়িত্ব নিয়েছেন সরোদ-বাদক পণ্ডিত দেবজ্যোতি বসু। গানটি গাইবেন নবীন শিল্পীরা। সঙ্গে গলা মেলাবেন কবীর সুমন নিজে। দেবজ্যোতি বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সুমনদা চমৎকার গান বেঁধেছেন। খুব তাড়াতাড়ি আমরা রেকর্ড করব। একটা রাজনৈতিক দলের ভাল-মন্দ থাকবেই। কিন্তু এটা খুব সত্যি কথা মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের শিল্পীদের পাশে যে ভাবে দাঁড়িয়েছেন, ভারতের আর কোনও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী তা করেননি।”
আরও পড়ুন :‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলা থেকে ‘টুম্পা’, ব্রিগেড-আবেগ আজও অমলিন গানে-নাটকে