‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলা থেকে ‘টুম্পা’, ব্রিগেড-আবেগ আজও অমলিন গানে-নাটকে

‘লাল’ ব্রিগেডের আবেগে মগ্ন নেতা-কর্মী-সমর্থকদের এ বারের ভাষা বদলে গিয়েছে অনেকাংশেই। তাতে কখনও উঠে আসছে গান, কখনও ফ্ল্যাশ মব আবার কখনও স্ট্রিট থিয়েটার।

‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলা থেকে ‘টুম্পা’, ব্রিগেড-আবেগ আজও অমলিন গানে-নাটকে
ছবি - ফেসবুক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 27, 2021 | 8:22 PM

“দিকে-দিকে কমরেড/গড়ে তোল ব্যারিকেড”-এর উচ্চকিত আহ্বান-ধ্বনি থেকে ভাইরাল গানের প্য়ারোডি “টুম্পা, ব্রিগেড চল”।

রবিবার বামেদের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, বাঁশের উপর যখন বাঁশ পড়ছে, তৈরি ম্যারাপ—তখন বর্ষীয়ান বাম-নেতা থেকে শুরু করে কমরেডদের অনেকের মনেই ফিরে-ফিরে আসছে ‘‌ও আলোর পথযাত্রী’ অথবা ‘পথে এবার নামো সাথী’র মতো ‘আইকনিক’ গানের লাইন। যদিও ‘লাল’ ব্রিগেডের আবেগে মগ্ন নেতা-কর্মী-সমর্থকদের এ বারের ভাষা বদলে গিয়েছে অনেকাংশেই। তাতে কখনও উঠে আসছে গান, কখনও ফ্ল্যাশ মব আবার কখনও স্ট্রিট থিয়েটার।

 

আরও পড়ুন ব্রিগেড-বৃত্তান্ত: ফেলে আসা ইতিহাস

 

বামফ্রন্ট সমর্থক তথা চিত্র-পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নিজের ফেসবুক ওয়াল ভরিয়ে দিচ্ছেন রাজনৈতিক টু-লাইনারে। শুক্রবার তিনি লিখেছেন,

শহর গ্রাম—বাংলা বাম

কাস্তে হাতুড়ি এক প্রতীক ব্রিগেড আগাম

জানিয়ে দিক।

আর এক কবিতায় কমলেশ্বর ব্রিগেডের ‘বিষয়’ নিয়ে লিখেছেন,

মধ্যমেধার/পদ্য কাটি

ছদ্মবেশী/নই তো সই

কাল ঘামেরা/পাল তুলেছে

লাল মলাটের /নৌকো ছৈ।  

পরিচালক কমলেশ্বরকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “১৯৪৩ সালে আইপিটিএ (ইন্ডিয়ান পিপলস্ থিয়েটার)-র মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মঞ্চ তৈরি হয়। আজকের এই সময় আমাদের ঠিক প্রাক-স্বাধীনতার কথা মানুষদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। শিল্পীরা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন শিল্পের মাধ্যেমে। যদি নিজের কথা বলি, তাহলে বলতে হয়—আমার লেখাগুলো কবিতা নয়। স্লোগানধর্মী ছড়া বলা যেতে পারে। যখনই ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন হয়, তখনই প্রতিবাদী প্রচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই জায়গা থেকে আমার এই লেখাপত্তর সামান্য অবদান বলা যেতে পারে।”

‘রেস্ট ইন প্রেম’ ওয়েব সিরিজ়ে ব্যবহৃত জনপ্রিয় গান ‘টুম্পা’ নিয়েও তুলকালাম কম হয়নি গত কয়েকদিনে। গানের সুর ‘টুকে’ রাজনৈতিক লিরিক্স বসিয়ে প্যারোডি করা হয়েছে বলে বামফ্রন্টকে ইতিমধ্য়েই এক হাত নিয়েছে বিজেপি-তৃণমূল। তবে এই টোকাটুকির বিষয় নিয়ে ‘টুম্পা’ গানের গীতিকার ও গায়ক আরব দে সম্প্রতি এক ফেসবুক লাইভে বলেছেন, “যে কোনও আর্ট যদি প্যারোডি হয়, তার জন্য আমাদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই… ভোটপ্রচারেও ব্যবহার করতে পারেন।” তবে বামকর্মী-সমর্থকের একাংশের প্রশ্ন: চটুল গানের সুরে কেন বাঁধা হবে রাজনৈতিক বক্তব্য?

 

 

 

 

তাঁদের এই খেদ মেটাতেই কি প্রকাশ পেল আরেক নতুন গান? জয়রাজ ভট্টাচার্যর লেখা এবং অর্ক মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘২৮শে ব্রিগেড চলো’। যোগাযোগ করা হলে জয়রাজ ভট্টাচার্য বলেন, “তড়িঘড়ি করেই যে এ গান তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ গানের যে ধাঁচা তা হল অ্যাজিটপ্রপ (Agitational propaganda)। তার মধ্যে একটা তাৎক্ষণিকতা আছে। এটা একটা ফর্ম। এবং এ কারণে মনে হচ্ছে এটা তড়িঘড়ি হয়েছে। তবে ‘টুম্পা’ গানের জন্য এ গান তড়িঘড়ি করে একেবারেই তৈরি হয়নি।।”

যোগাযোগ করা হয় বামপন্থী-নাট্যকর্মী সৌরভ পালোধির সঙ্গেও। তাঁর কথায়, “বহুদিন আগে এই নতুন গান নিয়ে প্ল্যান হয়েছিল। জয়রাজ বলেছিল আমি গান লিখব আর অর্ক গাইবে। ‘টুম্পা’র বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না।”

 

 

 

 

সৌরভ আরও সংযোজন, “শুধু গান-কবিতায় নয়। এবারের ব্রিগেড আরও বেশি সাংস্কৃতিক। একাডেমির সামনে বেলা বারোটা থেকে সাংস্কৃতিক সমাবেশ শুরু হবে। তারপর গান-কবিতা স্লোগানে ব্রিগেডমুখী হবেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পী। জেলা থেকে আসা যে সব শিল্পী ব্রিগেডের মঞ্চে পারফর্ম করবেন, তাঁদের ব্যবস্থপনার দায়িত্বে রয়েছি আমি এবং উষসীদি (প্রয়াত সিপিআইএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মেয়ে)।”

‘ব্রিগেড’কে কেন্দ্র করে গান-কবিতা-প্য়ারোডির এই প্রবহমানতাই আরও একবার প্রমাণ করে, রাজ্য়-রাজনীতির অভিধানে ব্রিগেড আজও এক অমলিন আবেগ।