‘সত্যজিৎ অভিনয়টা পারে না, তুমি আমার কাছে আসবে…’, মাধবীকে কেন বলেছিলেন ঋত্বিক?
ঋত্বিকও মনে করতেন, সত্যজিতের ছবির নির্মাণ বুর্জোয়া ছবির ঘরানার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। যেখানে ঋত্বিকের ছবি অনেক বেশি তুলে ধরে বাস্তবকে।

ঋত্বিক ঘটক ও সত্য়জিৎ রায়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত লড়াই চলত। নাহ, আজকালের পরিচালকদের মধ্যে বক্স অফিসের লড়াই নয়। বরং এই লড়াইয়ের অনেকটাই জুড়ে ছিল দুই পরিচালকের ক্রাফ্টম্যানশিপ। ফিল্মসমালোচকরা বলে থাকেন, ঋত্বিকের সঙ্গে সত্যজিতের ছবির ক্রাফ্ট একেবারে সুমেরু-কুমেরুর দুরত্ব। ঋত্বিকও মনে করতেন, সত্যজিতের ছবির নির্মাণ বুর্জোয়া ছবির ঘরানার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। যেখানে ঋত্বিকের ছবি অনেক বেশি তুলে ধরে বাস্তবকে। তবে ঋত্বিকের এমন ভাবনা নিয়ে বিস্তর বিতর্কও রয়েছে। সব বিতর্ককে দূরে সরিয়ে এই দুই পরিচালকই যে বাংলা চলচ্চিত্রের মূল কাণ্ডারী তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। আর সেই কারণেই সত্যজিৎ ও ঋত্বিকের সম্পর্ক নিয়ে নানা ঘটনার সাক্ষী বাংলার সিনেপাড়া। ঠিক যেমন সাক্ষী ঋত্বিক ও সত্যজিতের প্রিয় অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়।
সময়টা ছয়ের দশক। সত্যজিৎ রায় তৈরি করছেন কালজয়ী ছবি ‘চারুলতা’। মাধবী তখন সবে চিত্রনাট্য হাতে পেয়েছেন। হঠাৎই মাধবীকে ফোন করলেন ঋত্বিক। দেখা করতে বললেন সত্ত্বর। মাধবীও ছুটলেন ঋত্বিকের সঙ্গে দেখা করতে। মাধবী ঘরে ঢুকতেই ঋত্বিক বলে উঠলেন, ”শুনলাম তুই সত্যজিৎবাবুর ছবি করছিস!” হ্য়াঁ, মাধবীকে তুই সম্বোধনই করতেন ঋত্বিক। আর মাধবী তাঁকে ডাকতেন ঋত্বিকদা। ঋত্বিকের প্রশ্ন শুনে মাধবী বললেন, হ্যাঁ, ছবির নাম ‘চারুলতা’। তারপরই ঋত্বিক যেটা বলেছিলেন, তাতে বেশ অবাক হয়ে যান মাধবী।
মাধবীকে সামনে ডেকে ঋত্বিক সোজা বলে উঠলেন, শোন সত্যজিৎ ভাল ছবি বানালেও অভিনয়টা জানে না। তোকে দৃশ্যটা বোঝাতে পারবে না। তাই চিত্রনাট্যটা আমার কাছে নিয়ে আসিস। আমি তোকে তৈরি করে দেব!
ঋত্বিকের মুখে এমন কথা শুনে মাধবী সেদিন চুপ করেই ছিলেন। এরপর চারুলতার শুটিং শুরু হয়। সত্যজিতের দৃশ্য বোঝানোর কায়দা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান মাধবী। সত্যজিতের অভিনয় সম্পর্কে ঋত্বিক ঘটক যা বলেছিলেন, তা যে একেবারেই সত্যি নয়, তা পুরোটাই মাধবীর চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
