বিজ্ঞাপন বিতর্ক এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড। সদ্য ভাইরাল হওয়া শট-এর বিজ্ঞাপন ঘিরে বচসা তুঙ্গে। বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্যে কীভাবে জায়গা করে নিল ধর্ষণের ইঙ্গিত, তা নিয়ে প্রশ্নের ঝড় বইছে সর্বত্র। সত্যি কি এমন কোনও বিষয় বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্যের অংশ হতে পারে! একজন মডেলের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটা থাকে! আপোস করে লাইম লাইট বজায় রাখা, না কি সহ্যের সীমা অতিক্রম করলেই প্রতিবাদকে অস্ত্র করা! কোন পথ কেরিয়ারের শুরুতেই বেছে নিয়েছিলেন মডেল তথা অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়।
সত্যি কি প্রতিটা স্তরেই এভাবে বিজ্ঞাপনকে দেখানো হয়! সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও তো অনেক ভাল বিজ্ঞাপনও তৈরি হচ্ছে। তাই দুদিকের কথা মাথায় রেখেই সুস্মিতা বলেন, ”আমি এটাই বলব যে, বিজ্ঞাপন সব সময় যেটা দেখিয়েছে বা দেখানোর চেষ্টা করেছে, সেটা যে শুধুই একপেশে চিন্তার প্রকাশ, তা নয়। বরং দু’টো দিক আছে> নিঃসন্দেহে একটা শ্রেণি যারা এমনটাই ভাবে। আবার অপর শ্রেণীও আছে, যারা অন্য কথা বলেন। সেই কারণেই আমার মত, যেহেতু এই বিষয়গুলো ঘটে এসেছে, সেহেতু এগুলোকে একরকমভাবে দেখা হচ্ছে। তবে এই বিষয়গুলো মেয়েদের মনে কোনও প্রভাব ফেলে বলে আমার মনে হয় না। কারণ আমার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাবই পড়ে না। যে যেভাবে দেখে…”
একজন মডেল বা অভিনেত্রীর কাছে যখন এই ধরনের কাজের প্রস্তাব আসে, তখন কি কোথাও গিয়ে মনে হয় মহিলা চরিত্রটিকেই আবেদনমূলকভাবে দেখানো হচ্ছে? সমাজে প্রতি মুহূর্তে নারী শক্তি নিয়ে এত কথা উঠছে, এত প্রতিবাদ চলছে, তখন কোথাও গিয়ে কি বিজ্ঞাপনের দৃষ্টিভঙ্গীতে কতটা বদল ঘটেছে? সুস্মিতার কথায়, ”হ্যাঁ, আমিও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, যখন শুরুতে অনেক জায়গা থেকে ডাক পেতাম। বিষয়গুলো যখন বুঝতে শুরু করলাম, তখন মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু হল: কেন এমনটা হয়! কেন এমনভাবেই পোর্ট্রে করা হয়! কিন্তু তারপর কাজ করতে-করতে এটাও দেখেছি যে, সব জায়গাই এক নয়। আমি সব জায়গাতেই যে খারাপ মানুষ পেয়েছি বা আমার খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে, এমনটাও নয়।”
তবে কোথাও কি খারাপ লাগা জন্মায় না! সত্যিই কি আপোস করাই একমাত্র উপায়! সুস্মিতার অকপট উত্তর, ”বিশেষ কিছু জায়গায় খারাপ লেগেছে ঠিকই। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে আমি বলব হয় মানিয়ে নাও, নয় মানিয়ে নিও না। মানিয়ে নিতে বলার অর্থ হল, কেউ যদি সহ্য করতে চায়, সে করবে। কেউ যদি না পারে, তবে প্রতিবাদ করবে বা সেখান থেকে সরে দাঁড়াবে। তবে কেউ যদি এই বিষয়গুলোকে মনের মধ্যে গেঁথে না নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, সে যাবে। আমি তো বলব এটাই ঠিক।” তাঁর আরও সংযোজন, ”কোনও কিছুর প্রভাব নিজের ওপর পড়তে দিও না। ঝেড়ে ফেলতে জানতে হবে। আমার মনে হয় যা অপছন্দের, তা মুখের ওপর জানিয়ে দিতে হবে। আর যদি মনে হয় তুমি শোনাতে পারছ না, তবে ওটা মুখ বুঁজে সহ্য করে নাও, কিন্তু পরবর্তীতে আর তুমি সেটা নিয়ে চিন্তা করো না। কষ্টটা বয়ে নিয়ে যেও না। এটাকে পাল্টাতে গেলে, এটাকে কাটিয়ে উঠতে গেলে এভাবেই ব্যালান্স করতে হবে। আমার ক্ষেত্রে তো আমি এভাবেই করে থাকি।”
তবে প্রথম যে বা যাঁরা এই বিজ্ঞাপন বা মডেলিং কেরিয়ারে পা রাখছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কি সত্যিই সম্ভবপর হয় প্রথমেই না বলে দেওয়াটা! একটা ভাল কাজের আশা, পরিচিতি পাওয়ার স্বপ্নটাই তো তাঁরা বুকে আগলে রাখে। সেক্ষেত্রে কি সত্যি তাঁরা পারে মুখের ওপর জবাব দিতে! উত্তর সুস্মিতা সাফ বলেন, ”না, এই মানিয়ে নেওয়া আর আপোস করার মধ্যে রয়েছে এক সুক্ষ্ম ফারাক। একবার আপোস করলে সব সময় তা করতে হবে। প্রথম যাঁরা আসছেন, তাঁদের কাছে এটা নিঃসন্দেহে কঠিন লড়াই, এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তবে প্রতিবাদটা তোমায় প্রথম থেকেই করতে হবে। নয় তো সেটা থেকেই যাবে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টা একটু সমস্যার হলেও, পরবর্তীতে এটাই পরিচিতি তৈরি করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আপোস করে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না।”