মনামী ঘোষ। ইদানীং যাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই মেলে নিত্য নতুন ফ্যাশন টিপস। অভিনয়ের দীর্ঘ জার্নিতে মনামী পরখ করেছেন অনেক কিছুই। চাক্ষুস করেছেন বদল, কখনও ইন্টারনেটের হাত ধরে ফ্যাশনে জোয়ার আসা, কখনও আবার ট্রোলিং-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বোল্ড লুকে ঝড় তোলা, মনামী মানেই ‘ভাইরাল’। আর তাই তাঁর জীবনে ফ্যাশনের ভূমিকা থেকে শুরু করে টলিউড ফ্যাশনের হাল হকিকত, সবটা নিয়েই খোলা মনে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বললেন মনামী।
TV9 বাংলা: ফ্যাশন বলতে মনামী কী বোঝে?
মনামী ঘোষ: আমার কাছে ফ্যাশনের নির্দিষ্ট কোনও মাপকাঠি নেই। যা নিজের ভাল লাগে, তা-ই পরি। আসল কথা হল আত্মবিশ্বাস। তুমি যেটা পরছ, তার সঙ্গে তুমি নিজে কতটা মানিয়ে নিতে পারছ। যদি পারো, তবে সেটাই তোমার জন্য পারফেক্ট ফ্যাশন। তাই আত্মবিশ্বাসটা চোখে-মুখে থাকাটা ভীষণ জরুরী।
TV9 বাংলা: কেরিয়ারের শুরু থেকেই তো মনামী ফ্যাশনিস্তা ছিলেন না। শেষ ১০ বছরে এই বদলের কারণ কি লাইম লাইট?
না না, ফ্যাশন কিন্তু আমার মধ্যে ছিলই। তবে কি বলো তো, আমি যে ধরনের কাজ অতীতে করেছি, সেখানে ফ্যাশন নিয়ে কিছু করার ছিল না। যেমনটা অভিনয়ের ক্ষেত্রে হয়। দেখবে, যে চরিত্রে অভিনয় করছ, সেই চরিত্রের মতোই তোমার সাজগোজগুলো হয়ে যায়। আর আজ থেকে ১০ বছর আগে কলকাতায় ফ্যাশন এতটা গুরুত্ব পেত না, সেটা একটা কারণ। অন্য কারণটা হল শেষ ১০ বছরে মনামী নিজে কেমন ফ্যাশন পছন্দ করে, সেটাই দেখাতে পেরেছি আমি—পর্দার চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে। জানো তো, ছোট থেকে ফ্যাশন আমার মধ্যে ছিল, কারণ একবার আমি পরিবারের সঙ্গে মানালি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে কুলুর বিয়াস নদীতে একটা ছবি আছে আমার, যেখানে আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি। কেন জানো, কারণ আমায় একটা সোয়েটার পরানো হয়েছিল, যেটা আমার পছন্দ নয়। তাই রেগে গিয়ে সব ছবিতে খারাপ পোজ় দিয়েছিলাম। আর তখন আমার বয়স মাত্র চার থেকে পাঁচ বছর। সেই কারণেই বলছি, ফ্যাশন আমার মধ্যে ছিলই। কিন্তু দেখানোর সুযোগ পেয়েছি এই শেষ ১০ বছরেই।
TV9 বাংলা: সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে কি ফ্যাশন এতটা জায়গা করে নিচ্ছে সকলের মধ্যে, তোমার কী মনে হয়?
আগে কলকাতায় ফ্যাশন এতটা চর্চিত ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়ার ফলে শুধু ফ্যাশনই নয়, যে কোনও ট্য়ালেন্টই জায়গা করে নিচ্ছে সকলের নজরে। নাচ, গান… সবটাই পাল্টেছে। লকডাউনে প্রত্যেকেই প্রায় বাড়ির ছাদে নেচে ফেলেছেন। এটার কারণ হচ্ছে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর একটা জায়গা পাওয়া গিয়েছে। আবার শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, ডিজিটাল মিডিয়া, ইন্টারনেটের কারণেও সকলের কাছে একটা নতুন দিক খুলে গিয়েছে। গোটা বিশ্বের ফ্যাশন, ট্রেন্ড… সবটা মানুষের হাতের মুঠোয় এখন। মানুষ দেখতে পাচ্ছে যে মেট গালাতে কী হচ্ছে, কান-এ কী হচ্ছে বা ফ্যাশনের নিত্যনতুন আপডেটট কী এবং কেমন। তা-ই এখন মানুষ নিজেদের কালচারের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের কালচারকে আপন করে নিচ্ছে।
TV9 বাংলা: অভিনেত্রী হিসেবে টলিউডের ফ্যাশন অগ্রগতিকে কত নম্বর দেবে?
না, নম্বরে বাঁধব না আমি। তবে অনেক-অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে টিভির ক্ষেত্রে যদি বলতে হয়, আমার কেরিয়ারের শুরুর দিকে দেখেছি, যে কস্টিউমগুলো বানানো হত, ধরো পাঁচটা শাড়ি, তা-ই ঘুরে ফিরে নানা চরিত্রের গায়ে দেখা যেত। অন্য কোনও ধারাবাহিকে কেউ ধরো আগেই তা পরে ফেলেছে, কিন্তু পরের কোনও ধারাবাহিকে তেমনই পোশাক চাই, তাহলে ওটাই আনানো হত। তবে এটা গত ১০-১২ বছরে পাল্টে গিয়েছে। এখন এক-একটি চরিত্রের জন্য স্পেশ্যাল পোশাক ডিজ়াইন করা হয়। সিনেমার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই হয়। তবে টিভিতে ফ্যাশন ভীষণভাবে ঢুকে গিয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখবে, এখন দর্শকেরা চরিত্র অনুযায়ী পোশাক কিনতে যায়। অমুকের মতো শাড়ি, তমুকের মতো ব্লাউজ…।
TV9 বাংলা: ফিগার আর ফ্যাশন—অভিনয় জগতে টিকে থাকতে কী সত্যি এখনও প্রয়োজন বলে তুমি মনে কর?
না গো, এখন আর এটা হয় না। এটা এখন যার-যার ব্যক্তিগত বিষয়। পরিচালকদের যখন যেমন চরিত্র লাগে, তাঁরা তেমন অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজে নেন। শরীরের বাড়তি মেদ এখন অভিনয় জগতে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কখনওই নয়। এটা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমি এমন থাকতে পছন্দ করি, তা-ই থাকি। কেউ মনে করেন তিনি খেতে ভালবাসেন বা তাঁর একটু স্থুল চেহারাই পছন্দ, তিনি তা-ই করেন। বিশেষ করে ত্বকের রঙ… এখন আর এগুলো আলোচনা করাই হয় না, বিশ্বাস করো। যে চরিত্রের জন্য যেমন স্টার পছন্দ, তাঁকেই ডেকে নেওয়া হয়। অভিনয়টাই মূল কথা। সেটা জানলেই হবে। পর্দায় যাঁকে তুমি দেখছ, তিনি চরিত্র। আর ব্যক্তিগত জীবনে যে যেমন থাকতে চায়, তিনি তেমনভাবেই থাকেন। ভেতর থেকে সুস্থ থাকাটাই প্রয়োজন। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবে: ‘বেলাশুরু’তে তুমি দেখবে আমি বেশ মোটা, কারণ আমার চরিত্রটা বাড়িতে বসে থাকে, কোনও কাজ করে না। নিজের খেয়াল রাখে না, অশান্তি করে, ফলে তার মোটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটাই দেখানো হয়েছে।
TV9 বাংলা: এমন কোনও পোশাক আছে, যা বিশেষ যত্ন নিয়ে বানানো হয়েছিল তোমার জন্য?
সব পোশাকই ডিজ়াইনারের বানানো। তবে শেষ বছর ফিল্মফেয়ার অ্য়াওয়ার্ডে যে কাঁচের পোশাকটা পরেছিলাম, সেটার জন্য সকলে খুব খেটেছিলেন। একটা শো-এর বিচারক আমি, সেখানকার জন্য ওই পোশাকটা বানানো হয়েছিল। তবে শুটিংয়ে কাঁচে আলো রিফ্লেক্ট করবে বলে তখন তা পরা সম্ভব হয়নি। তাই ফিল্মফেয়ার-এর মঞ্চে পরেছিলাম। আমার এই পোশাকটা ভীষণ ভাইরাল হয়েছিল, ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই পোশাকগুলো বানাতেও অনেক সময় লাগে। আবার পোশাক পরার পরও তাতে বেশ কিছুটা কাজ থেকে যায়, যা সত্যিই বেশ কষ্টসাধ্য।
TV9 বাংলা: মনামীর ওয়ারড্রোবে থাকা সব থেকে দামি পোশাক?
আছে আছে, আমি সব থেকে বেশি দামি আমার একটা পোশাককেই বলি, সেটা খুব ছোটবেলার। সবার মতোই আমার ছোটবেলারও প্রচুর গল্প আছে। আমি যখন ছোট ছিলাম, দাদু বলতেন মাথার পাকা চুল তুলে দিলে একটাকা দেবেন। দিতেনও, আমি আমার ভাঁড়ে সেই টাকা জমিয়ে রাখতাম। এরপর তা জমে জমে ১০০ টাকা হলে, ওই টাকায় আমি নিজে প্রথম ডিজ়াইন করে একটা পোশাক বানাতে দিয়েছিলাম। আমার কাছে ওটাই সারা জীবনের জন্য দামি পোশাক হয়ে রয়ে গিয়েছে।
(সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশ আগামিকাল, 28.06.2022) অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ