প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মঙ্গলবার সকাল থেকে সঙ্গীত কিংবদন্তীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার খবর আসে। বিকেলে তা আরও খারাপ হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে মাতৃহারা হল বাংলা তথা গোটা দেশের সঙ্গীত জগৎ।
আমাদের কাঁধে এখন দায়িত্ব চলে এসেছে। গানের জগতে ওঁরা যা করে গিয়েছেন, সেই ধারাকে বজায় রাখা। জানি না কতটা কী করতে পারব আমরা। কিন্তু চেষ্টা তো করাই যায়। কেবল ভাল কাজ করে তাঁদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে পারি।
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে, পরিবারের কেউ আজ চলে গিয়েছেন। প্রত্যেক মাসেই ১-২বার কথা হত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও ফোন করে একদিন বললেন, ‘আমার দু’টাকার ফোন। আমি তো হোয়াটসঅ্যাপ বুঝি না। তোমাকে আমি আমার দুটো গান পাঠাচ্ছি। আমাকে তুমি শুনে বলবে কেমন লাগল?’ আমি অপ্রস্তুত। বললাম, ‘আপনি কী বলছেন… আপনি আমাকে গান পাঠাবেন, আর আমি শুনে মতামত দেব!?’ তারপর নাতনির ফোন থেকে পাঠিয়েছিলেন।
আমাদের জীবনে ইন্দ্রপতন ঘটল। আপামর বাঙালির হৃদয় খালি করে দিয়ে চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমি মিথ্যা ভাষণ দিতে পারি না। ওঁকে মাতৃ আসনে বসিয়ে রাখতাম। আমার মায়ের মতো ছিলেন। আমি ‘দিদিভাই’ বলে ডাকতাম। অন্তর থেকে মা মনে করতাম। আজ মার্তৃহারা হলাম আরও আবার।
আমার গুরুবোন ছিলেন। আমরা একসঙ্গে গান শিখতাম। ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খানের পুত্র ওস্তাদ মুনাওয়ার আলি খানের কাছে আমরা দু’জনেই গান শিখতাম। সন্ধ্যাবেলায় গান শিখতে আসতেন সন্ধ্যাদি। সন্ধ্যাদি খেয়াল গান গাওয়া শিখেছিলেন। পুরোদমে খেয়াল গাইতেন। ঠুমরি গাইতেন। লতাজি যেমন ফিল্মে গান করেছেন, সব ধরনের গান গেয়েছেন, সন্ধ্যাদি খেয়াল গানের অনুষ্ঠান করতেন। বহু ঠুমরি গানের অনুষ্ঠানও করেছেন। লখনউ, হায়দরাবাদ, দিল্লি, কানপুর.. নানা জায়গায়।
প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay Death)। মঙ্গলবার কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। সঙ্গীত জগতের এক নক্ষত্র পতন হল মঙ্গলবার। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশের সঙ্গীত জগত। শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (PM Narendra Modi)। টুইটারে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমরা সকলে অত্যন্ত শোকাহত। আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎ আরও অসহায় হল। তাঁর সুরেলা সঙ্গীত পরিবেশন আগামী প্রজন্মকে মুগ্ধ করবে। এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবার ও গুণমুগ্ধ ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।”
আরও পড়ুন : ‘তাঁর সুরেলা সঙ্গীত আগামী প্রজন্মকেও মুগ্ধ করবে’, সন্ধ্যার প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রীর
“অনেক সুখস্মৃতি আছে তাঁকে নিয়ে। আজ যেন সব মনে পড়ছে এক এক করে। এত ভাল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও গাইতেন। বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাবের কাছে গান শিখেছেন। কোন রাগটা কীরকম হবে, কেমন হওয়ার দরকার সব যেন ছিল নখদর্পণে। এক এক দিন আট ঘণ্টা ধরে গান গেয়ে যেতেন। আমি ফোন ধরে আছি। উনি গেয়েই যাচ্ছেন। এত ভাল লাগত।”
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ দিন প্রকাশ কওর হয় এক বিবৃতি। শোকবার্তায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উপমহাদেশে গানের মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
শোকাহত সঙ্গীতশিল্পী রসিদ খান। তাঁর কথায়, “১০-১১ বছর থেকে আমি সন্ধ্যাদিকে দেখে আসছি। ওঁর গান শুনে বড় হলাম। কী মিষ্টি গলা ওঁর। বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাবের কাছে গান শিখেছেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও এত ভাল গাইতেন। আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি”।
মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে মমতার। শোকবিহ্বল মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খুব খারাপ লাগছে। একদিনে হঠাৎ কী হয়ে গেল। এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে যাবেন, তা ভাবিনি। তাঁর যে নিয়মানুবর্তিতা ছিল, তা শিক্ষণীয়।”
প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই বাঙালির ঘরে পৌঁছল এই দুঃসংবাদ। এ দিন সন্ধে সড়ে সাতটা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
আরও পড়ুন : চলে গেলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতজগৎ আজ ‘মাতৃহারা’