কটাক্ষ, নিন্দা, সমালোচনা— বর্তমানে শিল্পীদের জীবনে এই তিনটি শব্দ যেন ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে একটু এদিক ওদিক হলেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। কয়েক দিন আগেই একটি পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় গৌতম হালদারকে। সম্প্রতি’সারেগামপা’-এর মঞ্চে জয় গোস্বামীর জনপ্রিয় কবিতা ‘বেণীমাধব’ মঞ্চস্থ করেন তিনি। ব্যস সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্য়ে আসার পরেই ধেয়ে আসে একের পর এক সমালোচনা। কারণ, মঞ্চে তাঁর পারফরম্যান্স একেবারেই পছন্দ হয়নি দর্শকের লেই ক্ষোভই উগরে দেন নেটাগরিকরা।
এক ব্যক্তি এই পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘কতদিন ভেবেছি মিট্টি এক প্রেয়সী ছেড়ে বেণীমাধব ফুলপঞ্জিকা লিখলেন কেন? কাল বুঝলাম, ভাঁড়ামোরও একটা লিমিট থাকা উচিত। বন্ধ করুন বেণীমাধব নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট।’ আবার কেউ লিখেছিলেন, “বেণীমাধবের পিন্ডি চটকে দিয়েছে! এক্সপেরিমেন্ট এর নামে এইসব ছ্যাবলামি বন্ধ হোক।”
তবে শত কটাক্ষ, সমালোচনার মাঝেও গৌতম নিজের ধৈর্য হারাননি। TV9 বাংলাকে তিনি বলেন, “এ সব নিয়ে ভেবে কী লাভ হবে বলুন তো। এই কবিতা আমি আগেও মঞ্চস্থ করেছি। কবি জয় গোস্বামী শুনেছেন। তাঁর যখন কিছু মনে হয়নি। তাই এই বিষয়টাকে আমি গুরুত্বই দিতে চাই না।” কিন্তু সমাজমাধ্যমের পাতায় গৌতমের অপমানের ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। তাঁর কণ্ঠেও বহুবার দর্শক শুনেছেন ‘বেণীমাধব’।
গায়িকা নিজের বিরক্তি উগরে দিয়েছেন তাঁর ফেসবুকের পাতায়। একটি লম্বা পোস্ট করেছেন তিনি। গায়িকার বক্তব্য, “একজন সৃজনশীল নাট্যব্যক্তিত্ব , মননশীল শিল্পী গৌতম হালদার তাঁর মতো করে উপস্থাপন করেছেন, কবি জয় গোস্বামীর মালতিবালা বালিকা বিদ্যালয় কবিতাটি। সব কাজ সকলের ভাল না-ই লাগতে পারে। শিল্প- সাহিত্য, জীবনবোধ, সবটাই যেটা আমার ভাল, সেটা মন্দ তোমার কাছে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। ১৯৯৬ সালে আমার গাওয়া বেণীমাধবও শ্রোতাদের পছন্দ হয়নি। সমালোচিত হয়েছিলাম। কিন্তু অপমানিত হতে হয়নি। কোনও শালীনতা খর্বও হয়নি। সে সময় অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। থাকলে কী ঘটত জানি না। আমরা কি অসভ্য হয়ে উঠছি ক্রমশ।”
এই ঘটনার যে তীব্র বিরোধিতা করছেন তিনি, সে কথা স্পষ্ট করেছেন সমাজমাধ্যমের পাতায়। তিনি যোগ করেন, “আমরা আলোচনা করতে পারি, তাঁর উপস্থাপনা নিয়ে, কিন্তু , এরকম উচ্চমানের শিল্পীকে এভাবে কটূক্তি করতে পারি না।” শেষে আক্ষেপের সুরে লোপামুদ্রার বক্তব্য, “শালীনতা , সম্মান, ভাষার নিয়ন্ত্রণ, সমীহ, শ্রদ্ধা ইত্যাদি শব্দ কি আমরা পুরোপুরি ভুলে গেলাম! কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে।” গায়িকার এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্য়ায়ও। তিনি লেখেন, “এখন তো কটুক্তি আর সমালোচনা একে অন্যের পরিপূরক।”