হিন্দি মিডিয়ামের ছাত্র ছিলাম বলে সরস্বতীর বানান হিন্দিতে বলতাম
আমি ছোটবেলায় পাড়া কালচারে বড় হয়েছি। কসবায় থাকতাম। আমাদের পাড়ায় বড় করে সরস্বতী পুজো হত। বাচ্চাদের একটা গ্রুপ থাকত। নিজেরাই চাঁদা তুলতে যেতাম। ঠাকুর কিনতে যেতাম। বাজেটের মধ্যে একটা প্যান্ডেল বানানো হত। বাচ্চাদের তো সেইভাবে বাজেট থাকত না। যত কম টাকায় প্যান্ডেল বানানো যায় আর কী! কখনও দোলনার উপরে ঠাকুর বসানো হত। কখনও ঘর বানিয়ে ঠাকুর বসানো হত। তারপর আমি নিজে ব্রাহ্মণ। আমাকেই পুজো করতে বলা হত। আমি বই থেকে পড়ে-পড়ে পুজো করতাম। তারপর রাতে আমাদের ফিস্ট হত। এভাবে অনেকগুলো বসন্ত কসবায় বাসন্তী পুজো করেছি আমরা। খুব মজা করে কাটিয়েছি। এখন একটি আবাসনে থাকি। তবে কসবাকে খুব মিস করি।
এখন যে আবাসনে আমরা থাকি, সেখানে নিয়ম মেনে, সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতিতে পুজো হয়। নিজেরা চাঁদা তুলে পুজো তো আর হয় না। কসবায় চাঁদা তুলতাম। লোকজন বার্গেইন করত। আমরা একরকম টাকা চাইতাম, আর লোকে অন্য মূল্যের টাকা দিত। বলতাম, “দাদা প্লিজ় আমরা বাচ্চা! একটু বেশি টাকা দিন।” অনেকে তো আবার সরস্বতীর বানানও জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি হিন্দি মিডিয়ামের ছাত্র ছিলাম বলে সরস্বতীর বানান হিন্দিতে বলে দিতাম।
এখন অ্যাপার্টমেন্ট কালচারে অনেককিছুই তো পালটে গিয়েছে। বিয়ের পর বাড়িতে পুজো হয়। আমি ছোটখাটো কাজ করি। মা, তৃণা, ওরা কাজ করে বেশি। এবার তো আমাদের বিবাহবার্ষিকী পড়ে গিয়েছে। তাই ছুটি নিয়ে আমি-তৃণা আমরা বন্ধুদের সঙ্গে হুগলিতে বেড়াতে এসেছি।
প্রেম জিনিসটা কিন্তু সরস্বতী পুজোর দারুণ নস্ট্যালজিয়া। আমার মনে আছে। ছোটবেলায় টিউশনে যেতাম। সেখানে আমাদের নিমন্ত্রণ থাকতই। ছেলেমেয়েরা আসত। দেখতাম সব মেয়েরা শাড়ি পরে এসেছে। ওটা দেখতে খুবই ভাল লাগত। পড়তে তো হত না। প্রসাদ, ভোগ এসব খাওয়া হত। মিলিয়ে-মিশিয়ে আড্ডা, গল্প, ঘুরতে যাওয়া… সবই হত। গার্লফ্রেন্ড থাকত। তাঁর সঙ্গে প্রেমও থাকত। সবটা মিলিয়ে মজা হত খুব। আমার তো আবার অনেক গার্লফ্রেন্ড ছিল। সেসব নিয়ে চাপ ছিল না।
এবার যেহেতু সরস্বতী পুজোতে বিবাহবার্ষিকী এখনও আমরা হুগলিতেই আছি। বিকেলে পৌঁছব। তারপর অনেক জায়গায় যাব। সেসব প্ল্যান আছে। তবে বয়সের সঙ্গে, ম্যাচিওরিটির সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে জীবনে। খুব মিস করি সবকিছু।