জয়িতা চন্দ্র
জগদ্ধাত্রী না জ্যাজ়, কোন লুকে বাস্তবে বেশি পরিচিতি পাচ্ছেন অভিনেত্রী অঙ্কিতা মল্লিক? জি বাংলার ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’র কেন্দ্রিয় চরিত্র অঙ্কিতা এখন দর্শক-দরবারে বাজিমাত করছেন। বাস্তবে অঙ্কিতা ঠিক কেমন, জগদ্ধাত্রীর মতো নরম সাদাসিধে নাকি জ্যাজ়-এর মতো প্রতিবাদী ডানপিটে? জানাললেন TV9 বাংলাকে।
বাঘা-বাঘা ধারাবাহিককে পিছনে ফেলে টিআরপি-তে এগিয়ে ‘জগদ্ধাত্রী’…
প্রথমেই বলব ভীষণ ভাল লাগছে। খুব কম দিন হয়েছে যে ‘জগদ্ধাত্রী’ সম্প্রচারিত হচ্ছে। তার মধ্যেই যে দর্শকদের এই ভালবাসা পেয়েছি, এটা আমার কাছে আশীর্বাদ। সবাই বলছে ভাল লাগছে, টানটান এপিসোড। ভাল শুনতে কার না ভাল লাগে?
এখন অধিকাংশ ধারাবাহিকই নারীকেন্দ্রিক। নামকরণও হচ্ছে কেন্দ্রিয় চরিত্রকে মাথায় রেখেই: ‘পিলু’, ‘মিঠাই’, আপনার ক্ষেত্রেও নাম ‘জগদ্ধাত্রী’। তবে বাকিদের ক্ষেত্রে কোন ফ্যাক্টরটা আলাদা যা দর্শকের নজর কাড়ছে বলে আপনি মনে করেন?
দেখুন, সব চরিত্রের নিজের একটা গল্প থাকে। আমি কোনও একটা ধারাবাহিককে নিয়ে বলতে চাই না। টিআরপি তো একটা পরিমাপের ব্যাপার—হিসেব। আমার কাছে জনপ্রিয়তা, দর্শকের ভালবাসাটাই দিনের শেষে আসল কথা। তবে একটা কথা বলতে চাই। যে ধরনের গল্প বা ধারাবাহিক দর্শকেরা দেখে এসেছেন এতদিন, ‘জগদ্ধাত্রী’ তার থেকে অনেকটা আলাদা। একজন সাধারণ মেয়ে, যে বাড়িতে শান্ত হয়ে থাকে, সে যে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইরে শত্রুদমন করতেও সক্ষম, এটাই বেশ চমকের। প্রকৃত অর্থে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। দু’টো দুই মেরুর চরিত্র। সেটা যখন দর্শক প্রোমোতে দেখেছিল, প্রথমটায় বিশ্বাস করতে বেজায় অসুবিধে হয়েছিল। জগদ্ধাত্রী জ্যাজ় হতে পারে না। কিন্তু গল্পের গতির এগোতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্বাসটা দর্শকদের মনে ধীরে-ধীরে জন্তে শুরু করে। কিন্তু বাস্তবে এমন বহু চরিত্র রয়েছে। আমরা হয়তো জানিই না আমার পাশের ব্যক্তিটি ঠিক কোন অজানা জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। র-এজেন্টদের কি পরিচিতি থাকে সমাজে?
অভিনয় শুরু কীভাবে?
মডেলিং-এ প্রথম আসা, সেখান থেকেই কেরিয়ার শুরু। এক বছর মডেলিং করার সময়ই আমি অডিশন দিতে শুরু করি। বেশ কিছু অডিশন দেওয়ার পরই স্নেহাশিষদা (পরিচালক স্নেহাশিষ চক্রবর্তী)র অফিসে যাওয়া। এবং সেখান থেকেই দাদা অডিশন নেন, ওয়ার্কশপ করান… আমায় পুরো হাতে করে তৈরি করেছেন স্নেহাশিষদা। ফলে সবটাই আমার শেখা দাদার কাছ থেকেই।
মেগার অভিনেতাদের ক্ষেত্রে চরিত্রের পরিচয়ই বাস্তবের পরিচিতি হয়ে ওঠে। আপনার তো দু’টো পরিচয়, জ্যাজ় ও জগদ্ধাত্রী—কোন ডাকটা বেশি শোনেন?
জ্য়াজ়। আমায় প্রকাশ্যে সকলে এই নামেই বেশি ডাকে। জগদ্ধাত্রীকে সবাই অবশ্যই পছন্দ করছে। তবে জগদ্ধাত্রীর মতো চরিত্র দর্শক অনেক দেখেছেন। জ্যাজ়-এর মতো প্রতিবাদী মেয়ে খুব কম দেখা যায়। সেটাই হয়তো দর্শকেরা বেশি পছন্দ করেছে। একটা মেয়ে যে লড়াই করছে, ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার, এটা দর্শক বেশ পছন্দ করছে।
ব্যক্তি অঙ্কিতা কোন ধরনের—জ্যাজ় না জগদ্ধাত্রী?
আমি জ্যাজ় ও জগদ্ধাত্রী দুইয়ের থেকেই ভালগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে আমি প্রতিবাদ করি, করি না যে তা নয়। প্রয়োজনে চড়ও মেরেছি। কিন্তু জ্যাজ়-এর মতো অতটা বোল্ড নই। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি। জগদ্ধাত্রীর মতো অতটাও নিরীহ নই। দুই মিলিয়েই আমি। তবে হ্যাঁ, অনেক সময় অনেক কিছু প্রতিবাদ আমরা চেয়েও করতে পারি না, যেটা জ্যাজ় পারে। আর ওর তো জীবিকাও এটাই।
অ্যাকশনের জন্য আলাদা ট্রেনিং হয়েছিল?
হ্যাঁ, জগদ্ধাত্রী যেমন ঘরের সাধারণ মেয়ে, তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ লাগে না। তবে জ্যাজ় যে অ্যাকশন করছে, যে মারপিঠ করছে, পাঁচিল থেকে লাফিয়ে নামছে, তার জন্য ট্রেনিং লাগে। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। ফলে ওয়ার্কশপ করানো হয়, অনেক ছবি দেখতে বলা হয়। এই প্রসেসটা এখনও চলছে। যতদিন ধারাবাহিকটা চলবে, ততদিন এটা চলতে থাকবে।
পাল্টাচ্ছে ধারাবাহিকের বিষয়বস্তু। তবে কূটিল চরিত্র আজও মেগার পর্দায় বর্তমান। তেমন কোনও চরিত্রের জন্য ডাক পেলেও কী প্রস্তাব গ্রহণ করতে?
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি নিজেকে ভীষণ লাকি মনে করি যে আমার শুরুটাই হল এমন একটা চরিত্র দিয়ে। সত্যিই আমি চাই দর্শক এমন গল্প দেখুক, এমন গল্প হোক। প্রথমে বুঝতেই পারিনি যে আমি এতটা কঠিন চরিত্র করতে পারব। নিজেকে তৈরি করতে হয়। তবে অভিনেতা হিসেবে যে কোনও চরিত্রই করতে পারব, সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে ভিলেন হয়ে ওঠাটা আমার মনে হয় সব থেকে কঠিন। মিষ্টি কথা তো আমরা বাস্তবেও বলি। সত্যি বলুন তো ধারাবাহিকে যে দুষ্টুমিগুলো দেখানো হয়, সেগুলো কি সত্যি বাস্তবে কেউ করে? কী জানি, আমার তো মনে হয় না। তবে আমায় তা-ও যদি উত্তর দিতে হয়, আমি বলব প্রথম কাজটা হয়তো তেমন কোনও কূটিল চরিত্র দিয়ে শুরু করতাম না।