Exclusive Sourav Saha: চোখ বন্ধ করলেই মা ভবতারিনীকে দেখতে পাই, আমার কাছে আধ্যাত্বিকতার অর্থ সততা

TV9 Bangla Digital | Edited By: জয়িতা চন্দ্র

Oct 24, 2022 | 4:13 PM

Sourav Saha: আমি ছোট থেকেই পাড়ার একটা কালীপুজোর সঙ্গে যুক্ত। যুক্ত অর্থাৎ আবারও বলছি পুজো হিসেবে নয়, দায়িত্ব হিসেবে, এটা আমায় যত্নের সঙ্গে পালন করতে হবে।

Exclusive Sourav Saha: চোখ বন্ধ করলেই মা ভবতারিনীকে দেখতে পাই, আমার কাছে আধ্যাত্বিকতার অর্থ সততা

Follow Us

জয়িতা চন্দ্র

কখনও ‘বামাখ্যাপা’, কখনও আবার ‘শ্রী রামকৃষ্ণ’, মাঝেমধ্যে অবসরে যখন জীবনের ছোটছোট মুহূর্তগুলোকে বোনা হয়, দেখা যায় অদ্ভুত এক যোগসূত্র মা কালীকে ঘিরে। TV9 বাংলায় নিজের আবেগ উজাড় করে দিলেন ‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকখ্যাত ঠাকুর রামকৃষ্ণ সৌরভ সাহা।

পর্দার রামকৃষ্ণ বলেই কি কালী পুজোয় এত ব্যস্ততা?

আরে না না, সাধারণত উদ্বোধনে আমাদের ডাকা হয় কারণ মানুষ আমাদের ভালবাসে সেই জায়গা থেকেই। আমারও ভাল লাগে। কত নতুন-নতুন জায়গায় যাওয়া হয়, মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। আর কালীপুজোয় শুধু নয়, দুর্গাপুজোতেও ডাক আসে বহু জায়গা থেকে। আমাদের বাংলা কত সুন্দর, ক’টা জায়গাতেই বা যাওয়া হয় বলুন।

‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকে বেশ জনপ্রিয় হয় এই চরিত্র, ঠাকুর রামকৃষ্ণ চরিত্র মতাদর্শ কতটা মনে ছাপ ফেলে?

এই অনুভূতিগুলোকে না ভাষায় প্রকাশ করাটা ভীষণ কঠিন, অনেক কিছু মনে হয় বাকি থেকে গেল। আবার মনে হয় অনেক কিছু বাড়িয়ে বললাম।

তবে পরিবারে যেভাবে আমি আধ্যাত্মিকতাকে দেখে এসেছি, সেটা আমার কাছে ভীষণ আপন। যেমন আমার বাবা-মা বা পরিবারের কাউকেই জীবনে কখনও আমি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মিথ্যে কথা বলতে দেখিনি। কিছুটা তো অনুমান করা যায়, এটা একটু বানিয়ে বলল (বাবা-মা), তেমন কখনওই দেখিনি। এটা আধ্যাত্মিকতা নয়, তবে জীবনের চলার পথ কেমন হওয়া উচিত, সেটা শেখায়। আমি সেখান থেকে শিখেছি। আমার আবার স্কুলটা বেশ কিছু বছর মিশনে। ফলে সেখানে যাঁরা আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন, মিশনে পড়ার সৌভাগ্যবশত বন্ধুবান্ধব, এরা বেশিরভাগই তো রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যুক্ত।

কাজেই ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও উৎস যেখান থেকে, তিনিও হয়তো সেভাবে সমাজ, পরিস্থিতি, নিয়মনীতির মধ্যে আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকেননি। হয়তো ঠাকুর জীবনে বহু শিষ্য পেয়েছিলেন, যাঁরা ঈশ্বর দর্শনের আশায় তাঁর কাছে যেতেন। কিন্তু তিনি চিৎকার করে একটা সময় বলেছিলেন ‘তোরা কোথায়, তোরা আমার কাছে কবে আসবি’। যাঁরা পুজো দিতে এসেছেন, ঈশ্বরের টানে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে কিন্তু ঠাকুর কোনওদিন শিষ্য খুঁজে নেননি। ঠাকুর তাঁর শিষ্য খুঁজে নিয়েছিলেন মথুরামোহন বিশ্বাসের মধ্যে। যদিও রানী রাসমণি আধ্যাত্মিকতার পূজারী ছিলেন। তবে মথুরা, তিনি তো সেই অর্থে আধ্যাত্মিকতার পূজারী ছিলেন না। স্বামী বিবেকানন্দ, গিরিশ ঘোষ, রাখাল… একটু ভেবে দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়, এরা কিন্তু কেউ-ই আধ্যাত্মিকতার পূজারী ছিলেন না। কিন্তু এঁরা যখন জীবনের পথ খুঁজে পেলেন, তখন একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে গেলে কী করা উচিত, এই দর্শন তাঁরা রামকৃষ্ণদেবের থেকে পেলেন।

এতো কথা এজন্যই বলা, যে আমিও কখনও চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে জীবনটাকে আটকে রাখতে চাইনি, এখনও চাই না। আমি নিজের কাজ একশো শতাংশ প্রাণ ঢেলে করব। আমার কাছে আধ্যাত্মিকতার অর্থ সততা।

পর্দায় সকলের একটা করে জুটি তৈরি হয়, আপনার ক্ষেত্রে মা কালী। অ্যাকশন বলার পরই মা আপনার সামনে থাকা এক চরিত্র… কতটা একাত্মবোধ করতেন?

রামকৃষ্ণ চরিত্রটা করার সময় যে কোনও দৃশ্যেই এটা ঘটত। তবে এমন কিছু কিছু পর্ব থাকত, যেখানে আমার মনে হতো, আমার বোধ বুদ্ধি দিয়ে আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব কি না! মনে সন্দেহ হতো। তখন আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থণা করতাম, আমি মা ভবতারিণীর কাছে প্রার্থনা করতাম, আমি মা সারদার কাছে প্রার্থণা করতাম, আমি যেন করে উঠতে পারি এই দৃশ্য। পরে দেখতাম সেই দৃশ্যগুলো দারুণভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আমি মনে-মনে জানতাম, এর কৃতিত্ব আমার নয়, আমি প্রার্থণা করেছি ও একশো শতাংশ চেষ্টা করেছি। এখন আমার মনে হয়, কার বোধবুদ্ধি কী হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করেন ঈশ্বর।

ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনা কি ছোট থেকেই?

আমার কাছে না ঈশ্বরের ভাগটা স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিকভাবে হয়তো বুঝতে পারি। তবে সেটা রঙের রাজনীতি নয়, ধর্মের ক্ষেত্রে, সমাজ জীবনে চলতে গেলে, সমাজ গড়তে গেলে যে রাজনীতির প্রয়োজন, সেই সংজ্ঞাটা আমার কাছে স্পষ্ট। যে কোনও ধর্ম, জাতিকেও তো একটা রাজনীতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এগুলোকে বাদ রেখেই বলব, আমার কাছে এগুলো গুরুত্বহীন। স্কুলের কারণেও হতে পারে, কখনও পদবি খুব একটা ভাবায়নি। সেটাও নাম, জাতিভেদে পরিচিতি নয় আমার কাছে। মাথাতেই আসেনি কখনও। শর্টকাট আমার রক্তে নেই, চিন্তাতেও নেই। ফলে সবাইকে আপন, সবাইকে সমানগুরুত্ব দিতেই পছন্দ করি, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষ সকলেই মানুষ। আমার কাছে ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে বিশ্বাস শব্দটাই দৃঢ়।

এখন তবে ভবতারিণীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, এই আস্থাটা রামকৃষ্ণ চরিত্র থেকেই?

হ্যাঁ, মূলত রামকৃষ্ণ চরিত্র থেকেই। এতে কোনও দ্বিমত নেই। এর আগে যদিও বামাখ্যাপার চরিত্রেও অভিনয় করেছিলাম। সেটাও ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন সেই চরিত্রটাও সফল ছিল। রাসমণিতেই শুধু নয়, স্মার্ট জোড়ি-তেও মাকে ডাকতাম: উদ্ধার করে দিও মা। এই দেখুন না, এখন বসে কথা বলছি, আমি বালি ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, মা ভবতারিণীর মন্দিরটা আমার সামনে জ্বলজ্বল করছে। এখন আমি চোখ বুজলেও মাকে দেখতে পাই। জীবনের অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে আমি মায়ের আশীর্বাদ পেয়েছি। তবে কী জানেন তো, আমরা বিশ্বাস করি বা না করি কোথাও থেকে তো এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়।

কালীপুজোয় কী ভবতারিণীর দর্শন করার পরিকল্পনা রয়েছে?

না, তেমন তো নেই। ইচ্ছে তো হয়। তবে আমি ছোট থেকেই পাড়ার একটা কালীপুজোর সঙ্গে যুক্ত। যুক্ত অর্থাৎ আবারও বলছি পুজো হিসেবে নয়, দায়িত্ব হিসেবে, এটা আমায় যত্নের সঙ্গে পালন করতে হবে। সে-ই আমার কাছে মা ভবতারিণী। মা তো মা-ই হয়, রূপভেদে আলাদা নামমাত্র। আমি কালীপুজোয় রাতের মধ্যেই আমার ভবতারিণীর দর্শন করব।

পথে ঘাটে রামকৃষ্ণ বলে ডাকেন কেউ?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। কেউ আসল নামটা না জানার জন্য ডাকেন। পর্দায় চরিত্রটা জনপ্রিয় হওয়ার পর আমার পরিচিতি ওটাই। বন্ধুবান্ধবও মাঝেমাঝে মজা করে ডেকে থাকে। আসলে আমরা মিশনের জন্য ভীষণ কাছ থেকে রামকৃষ্ণদেবকে জানার সুযোগ পেয়েছি। পর্দায় যখন সেই যোগসূত্রগুলো পেতাম, খুব রিলেট করতে পারতাম। সেটাও আমাদের সকলের কাছে বেশ ভাললাগার বিষয়।

Next Article