আদপে একটি চরিত্র। অথচ দর্শকের দরবারে তাঁরা যেন সাক্ষাৎ ভগবান। কাছে ছুঁতে পাওয়ার উন্মাদনা আবার কখনও পায়ে হাত ধরে হাউহাউ করে কান্না— টেলিভিশনের আধ্যাত্মিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন যারা তাঁদের এ হেন অভিজ্ঞতা কম-বেশি হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই অকপট সৌরভ সাহা। পর্দায় যাকে আপনারা এই কিছু মাস আগেও ‘রামকৃষ্ণ’ রূপে দেখেছেন। কী বললেন সৌরভ? রইল…
সৌরভের বয়ানে…
কিছু চরিত্র শেষ হয়ে গেলেও তা আপনাকে ছেড়ে যায় না। ঠিক তেমনই আমার কাছে এই রামকৃষ্ণ চরিত্রটি। পাঁচ বছর ধরে একটা ধারাবাহিক তার কিছু প্রভাব যে দর্শকমনে পড়বে তা তো স্বাভাবিকই। আমি যদিও কিছু বছর পর এই ধারাবাহিকের অংশ হই। তবু এই ধারাবাহিক নিয়ে মজা এবং একই সঙ্গে ইমোশনাল ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমাকেই রামকৃষ্ণ ভেবে পায়ে হাত দিয়ে প্রমাণ, আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া এ সব তো রয়েছেই কিন্তু এরই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমন কিছু মানুষের স্মৃতি যাদের হয়তো আর ফিরে পাব না কোনও দিনই।
বাপ্পি দা আমার ধারাবাহিক দেখতেন নিয়মিত। উনি চলে যাওয়ার পর এ কথা আমায় নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম যে বলে বোঝাতে পারব না। এখানেই কিন্তু শেষ নয়, আরও কিছু বছর আগেকার কথা। তখন আমি এক চ্যানেলে ‘বামাখ্যাপা’র চরিত্রে অভিনয় করছি। হঠাৎই এক ফোন আসে। একজনের বাবা অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকদিনেই তাঁর বামাক্ষ্যাপা দেখা চাইই। কিন্তু সিরিয়াল শেষে একদিন তিনি আর উঠলেন না। আর তাঁর বামাক্ষ্যাপা দেখা হল না। মজার ঘটনাও কিন্তু আছে।
একবার এক মেয়ে তার মেয়েকে নিয়ে সোজা আমার বাড়ি চলে আসে। আমি তখন একেবারে বাড়ির পোশাকে। বাড়িতে তো আর মেকআপ নিয়ে থাকব না। আমাকে দেখেই রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে মেয়েটি। সঙ্গে সঙ্গে আমার স্ত্রীকে ডেকে আনি। ওকে ধরতে বলি। তারপর খানিক ধাতস্থ হতেই ওকে বোঝাই আমি খুব সাধারণ এক রক্তমাংসের মানুষ। মেয়েটি বেশ কয়েক ঘণ্টা ছিল। এতটাই সে রানী রাসমণী ধারাবাহিকটিকে ভালবাসত যে কখন কোনও প্রোমো রিলিজ হয়েছে, কতজন রয়েছেন সেই প্রোমোতে, কবে কোন গান রয়েছে… ইত্যাদি যাবতীয় হিসেব মনে রাখার জন্য রীতিমত ডায়েরি রেখেছিল সে। আমাকে সেই ডায়েরি কয়েকটা দিয়েও গিয়েছিল সে। এগুলোই তো প্রাপ্তি।
অনেকে বিশ্বাস করেছেন ওই ধারাবাহিক দেখেই নাকি তাঁদের রোগমুক্তি ঘটেছে। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও ওই যে ভালবাসা, ওই যে আবেগ সেটিই বা কম কীসের। অনেক পুলিশ আমায় বলেছেন সাড়ে ছ’টা থেকে সাতটা যে সময় রাসমণী হত সেই সময়টায় তাঁরা কোনও এফআইআর নিতেন না। এমনকি চিকিৎসকদের তরফেও একই কথা কানে এসেছে। সব মিলিয়ে চরিত্রটিকে নিয়ে যে উন্মাদনা, যে ভালবাসা পেয়েছি তা লাগামহীন। তাই অনস্ক্রিন ‘ভগবান’ হয়ে বিড়ম্বনা নয় আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ ওই মানুষগুলোর কাছে, তাঁদের ভালবাসার কাছে।