কল্যাণীতে শো করতে গিয়েছিলেন রূপম ইসলাম। স্টেজ থেকে নামার পর তাঁর একান্ত সময়ের প্রয়োজন ছিল। বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। রূপমের মতো গায়করা যখন স্টেজ থেকে নামেন, তাঁদের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে ভক্তরা। করমর্দন থেকে শুরু করে সেলফি তোলার অনুরোধ করতে থাকেন তাঁরা। কিছু ক্ষেত্রে শালীনতার সীমা অতিক্রম করেন ফেলেন। হাজার-হাজার শ্রোতার সামনে পারফর্ম করার পর ক্লান্ত শিল্পীর বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেকটি স্টেজ পারফরম্যান্সের পর রূপম ইসলামের সেটা প্রয়োজন। অনেক সময় তাঁর কথা বলার মতোও অবস্থা থাকে না।
সেরকমই এক পরিস্থিতিতে শনিবার কল্যাণীতে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। টানা দু’ঘণ্টা ১৫ মিনিট পারফর্ম করার পর মঞ্চ থেকে নামেন রূপম। তখনও একজনকে সেলফি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তারপরেই শরীর খারাপ লাগছিল রূপমের। একটি বাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পিছন-পিছন ধাওয়া করে কিছু অনুগামী। বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে পড়েন তাঁরা। সেই সময় রূপমের স্ত্রীর রূপসা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেলফি তোলার এত হিরিক যে, রূপসার অনুরোধ উপেক্ষা করেন তাঁরা। এবং তারপরই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন রূপম ইসলাম। ‘আমাকে তো বাঁচতে হবে’ বলে আকুতি করেন তিনি। তারপরই এক পশুর নাম উল্লেখ করে গালিগালাজ করেন। বাছাই করা সেই ভিডিয়োটিই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে নেটমহলে। এবং বিষয়টিকে কটাক্ষও করেছেন কেউ-কেউ।
যদিও কটাক্ষের চেয়ে সহানুভূতি এসেছে বেশি। ‘প্রিয় গায়ককে বিশ্রাম নিতে দিন’, এমন আকুতিও করেছেন তাঁর অনুগামীরা। কেউ-কেউ লিখেছেন, “দাদার সেই সময় বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। এক ব্যক্তি লিখেছেন, “একটা ৪৯ বছর বয়সি লোক সারাক্ষণ স্টেজে দাপিয়ে প্রোগ্রাম করে গেলেন। এতটা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত তিনি। সেই সময় কার ভাল লাগে? উনিও তো মানুষ। ওনার রেস্ট প্রয়োজন। এমন সময় রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক!”
এরপর TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল রূপম ইসলামের সঙ্গে। তাঁর স্ত্রী রূপসা দাশগুপ্ত বলেছেন, “অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা। রূপমের স্টেজ শোয়ের পর ওঁর খুব শরীর খারাপ লাগে। কারণ, গানের সঙ্গে স্টেজে দাপাদাপি করেন তিনি। দু’ঘণ্টা ধরে একজন শিল্পীর এই পরিশ্রমের পর তাঁকে একান্ত বিশ্রাম দিতে হয়। সেই অবকাশ রূপম পাননি। ছবি তোলার জন্য হিড়িক পড়ে। আমার উপরও চড়াও হতে চায় ছবি শিকারীরা। সেই সময়ই রিয়্যাক্ট করেছেন আমার স্বামী রূপম। এটা কি কাঙ্খিত নয়? মেজাজ হারানোটা কি খুবই ভুল? মানুষের মধ্যে মানবিকতা কেন হারিয়ে যাচ্ছে? কেন তাঁরা বুঝতে পারছেন না শিল্পীরাও মানুষ। বিশ্রাম দিতে হয় তাঁদেরও। আমি তো অনেকক্ষণ ধরে অনুরোধ করছিলাম তাঁদের। বলেছিলাম, রূপম বিশ্রাম নেওয়ার পর আসুন। সেই ভিডিওগুলো তো নেট মাধ্যমে ছাড়া হয়নি। রূপমের ওইটুকু রিঅ্যাকশনকে পোস্ট করা হয়েছে। কী করতে? ওঁর সম্মান হনন করতে?”
কল্যাণীর এই শোতে অনেকবারই গিয়েছেন রূপম। টানা ২০ বছর ধরে সেখানে পারফর্ম করেছেন। অনেকটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছেন রূপম এবং আয়োজকরা। তবে একটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। রূপমের নিরাপত্তা। রূপসার কাকুটি, “যাঁরা ছবি তোলার জন্য এতটা অমানবিক হতে পারেন, তাঁরা তো আক্রমণও করতে পারেন।”