প্রথমবার বড় সত্য সামনে আনলেন শতাব্দী রায়: তাপস পাল নয়, এই নেতার হাত ধরেই তৃণমূলে এসেছিলেন অভিনেত্রী
শতাব্দী তো রাজনীতির আবহে বেড়ে ওঠেননি। এর আগে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগসূত্রও ছিল না। তাহলে কি তাপস পালই গুরুদক্ষিণার নায়িকাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের চারপাশে সিনে ও টেলি দুনিয়ার সেলেবদের আখছার দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু একটা সময় যখন রাজ্যে বাম রাজত্ব, তখন মমতাই ছিলেন একমাত্র বিরোধী শক্তি। সেই সময় মমতার কাছে খুব একটা ঘেঁষতে দেখা যেত না সিনে জগতের মানুষদের। হ্যাঁ, তাপস পাল বিধায়ক হয়েছিলেন বটে, তবে তা সেই পর্যন্তই। এরপর সিঙ্গুর আন্দোলনে উত্তাল হল বাংলা। সেই সময় মমতা যখন ধর্নায় বসছেন, তখন মমতার পাশে দেখা যায় বাংলা সিনেমার অন্যতম সফল নায়িকা শতাব্দী রায়কে। কিন্তু শতাব্দী তো রাজনীতির আবহে বেড়ে ওঠেননি! এর আগে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগসূত্রও তো ছিল না? তাহলে কি তাপস পালই ‘গুরুদক্ষিণা’র নায়িকাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন?
এই প্রশ্নটা অহরহ মানুষের মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একসময় তো সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, তাপস পালই ছিলেন শতাব্দীর রাজনীতিতে আসার নেপথ্য নায়ক। কিন্তু তৃণমূল নেতা তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় শতাব্দী সরাসরি জানিয়ে দিলেন, তাঁর রাজনীতিতে আসার নেপথ্যে তাপস পালের কোনও ভূমিকাই ছিল না। ভূমিকা ছিল অন্য আরেক জনের।
কুণাল ঘোষ ও শতাব্দী রায়ের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। ‘গুরুদক্ষিণা’ ছবিতে শতাব্দীর দুরন্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু রাজনীতিতে শতাব্দীকে নিয়ে আসার আবহটা ছিল ২০০৭-০৮ নাগাদ সিঙ্গুরের আন্দোলন। ঠিক তখনই মমতার পাশে দাঁড়ানোর কথা শতাব্দীকে বলেছিলেন সংশ্লিষ্ট সাক্ষাৎকারের সঞ্চালক, তৃণমূল নেতা, তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। এই সাক্ষাৎকারে শতাব্দী বলেন, ‘আমি এই প্রথমবার কোথাও একথা বলছি।’ সঙ্গে সঙ্গে কুণাল ঘোষের মুখেও সম্মতিসূচক অভিব্যক্তি। শতাব্দী ফের বলতে শুরু করলেন, ”অনেকের ধারণা আমার তৃণমূলে আসা এবং সাংসদ হওয়ার নেপথ্যে তাপস পাল ছিলেন। কিন্তু আমি দায়িত্বের সঙ্গে বলছি, আমি তাপস পালের সঙ্গে ছবি করেছি, ওঁর সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বও ছিল, আমরা একসঙ্গে রাজনীতিও করেছি। কিন্তু আমার রাজনীতিতে আসা বা তৃণমূলে আসার সঙ্গে তাপস পালের বিন্দুমাত্র কোনও যোগ নেই। আমার যদি রাজনীতিতে আসা হয়, তৃণমূলে আসা হয়, সাংসদ হওয়া হয় এবং যার ভাবনায় এবং যে আমাকে বুঝিয়ে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন, তিনি কুণাল ঘোষ।”
এরপরের ইতিহাস সবার জানা, বাংলা সিনেপাড়ার ডাকসাইটে অভিনেত্রী রাজনীতিতে পা দিয়েও সফল। ২০০৯ থেকে পর পর চারবার তৃণমূল সাংসদ তিনি। কুণালের কথায়, আসলে শতাব্দী যেটাই করেন, খুব সিরিয়াসলি করেন। প্রথম নির্বাচনী প্রচারে বীরভূমের গ্রামে গ্রামে ঢুকে যাওয়া, আদিবাসীদের সঙ্গে নাচ, সিপিআইএমের যেখানে যেখানে ঘাঁটি ছিল সেখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলা, সেটাই ছিল শতাব্দীর আসল ম্যাজিক। আর সেই ম্যাজিককে সঙ্গে নিয়েই সিনেপর্দার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সফল শতাব্দী।
