ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করতে মানসিক ভাবে অনেক বেশি বিধ্বস্ত হতে হয়: রজতাভ

Rajatava Dutta: সিনেমা বাস্তব ঘটনারই অংশ। বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন অনেক গল্পই বুনেছেন পরিচালকরা। বর্তমানে তিলোত্তমা ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত গোটা শহর। এই পরিস্থিতিতে পর্দার খলনায়কদের কথা কি কারও মনে পড়ছে? পর্দায় নির্যাতকের চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে ঠিক কেমন প্রস্তুতি লাগে? নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন বড় পর্দার অন্যতম দুঁদে খলনায়ক রজতাভ।

ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করতে মানসিক ভাবে অনেক বেশি বিধ্বস্ত হতে হয়: রজতাভ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 16, 2024 | 6:11 PM

তিলোত্তমা কাণ্ডে উত্তাল গোটা শহর। টলিপাড়ার অন্দরেরও বিভিন্ন ঘটনা আসছে প্রকাশ্যে। এই ঘটনার পর স্টুডিয়োপাড়ার নায়িকারাও একে একে টলি পাড়ার অন্দরের কালো দিক ফাঁস করছেন। প্রতিটা ঘটনা যেন সিনেমা পাড়ার এক একটা চিত্রনাট্য। এমনটাই তো হয়। এক জন নায়ক থাকেন। আর এক জন নায়িকা থাকেন। আর থাকেন এক জন খলনায়ক বা খলনায়িকা। যদিও বাংলা ছবিতে খলনায়কের আধিক্যই বেশি। যে দুষ্টু লোক গল্পের নায়িকাকে নির্যাতন করার একটা সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না। যদিও সিনেমার গল্পে নায়িকাকে বাঁচানোর জন্য নায়ক এগিয়ে আসে। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা একেবারে আলাদা। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। তবে বাস্তবের খলনায়ক এখনও অধরা! কিন্তু পর্দার খলনায়করা হাতের নাগালে।

সিনেমা পাড়ার এমনই এক দুষ্টু লোক হলেন রজতাভ দত্ত। বিড়ালের মতো কটা চোখ। ভিলেন হওয়ার জন্য যেন একদম ঠিক লুক। আসলে বাস্তবের ঘটনাগুলোই তো পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। বহু সিনেমায় দেখা গিয়েছে নায়িকাকে নাগালে পেয়ে তাঁকে নির্যাতন করতে ছাড়েনি পর্দার খলনায়ক রজতাভ। ক্যামেরার সামনে এক জন ধর্ষক বা দুষ্টু লোকের চরিত্র করতে গেলে ঠিক কেমন মানসিক প্রস্তুতি দরকার হয়? শুটিং সেটের প্রায় ৫০ জন সদস্য,আলো, ক্যামেরার ট্রলির আওয়াজ, প্রয়োজনে রি-টেক। এত কিছুর মাঝে নায়িকার উপর অত্যাচারের অভিনয় করা মুখের কথা নয়। ঠিক কী কী প্রস্তুতি লাগে?

বিস্তারিত জানতে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় টলিপাড়ার দুঁদে খলনায়ক রজতাভর সঙ্গে। তিনি তখন একটি শুটিংয়ে বাঁকুড়ায়। ফোনের নেটওয়ার্কের খুবই খারাপ অবস্থা। নিজেই কলব‍্যাক করে এত বছরের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন। বড় পর্দায় রজতাভর আগমন তপন সিনহা পরিচালিত ‘হুইলচেয়ার’ ছবির মাধ্য়মে। সেখানেও এমনই এক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রজতাভ। প্রশ্নের রেশ ধরেই বুঝিয়ে বললেন ধর্ষকের চরিত্র বা খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের আগের প্রস্তুতির কথা। নিজের অনুভূতির কথা।

রজতাভর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি…

যদি কোনও ডুয়েট নাচের দৃশ্যের অভিনয় হয়, দেখে মনে হয় অনেক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ওটা আসলে একটা কোরিয়োগ্রাফি। সেই দৃশ্যকে নিঁখুত করে তোলার জন্য কিন্তু অনেকটা পরিশ্রম করতে হয় কলাকুশলীদের। একটা দক্ষতারও প্রয়োজন হয়। পর্দায় দেখানো ধর্ষণের দৃশ্য বা নির্যাতনের দৃশ্যও অনেকটা কোরিওগ্রাফি বা নাচের মতো। যেমন ফাইটের দৃশ্য যখন ক্যামেরায় তোলা হয় তখন কি সত্যিই হিরোর সঙ্গে দুষ্টু লোকদের শত্রুতা থাকে? তা তো একেবারেই নয়। বরং বলা যেতে পারে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বই বেশি থাকে। তেমনই ধর্ষণ বা অবসিন দৃশ্যর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একেবারে তাই। সেই খলনায়ক এবং নায়িকাকে তো ক্যামেরার সামনে শুধু ছেড়ে দেওয়া হয় না। অনেক শট ডিভিশন থাকে। এমন দক্ষতার সঙ্গে এই দৃশ্যগুলো অভিনয় করতে হয় যাতে সেই অভিনেত্রীর কোনও সমস্যা না হয়। সে যেন কোনও ভাবেই অস্বস্তি বোধ না করে। অন্য দিকে দৃশ্যটাও যেন ভাল ভাবে শুট হয়ে যায়।

তপন সিনহার ‘হুইলচেয়ার’ ছবির মাধ্যমেই আমার প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। এমন একটা রেপ সিন ছিল লাবণী সরকারের সঙ্গে। যেখানে তাঁর মেরুদণ্ডের মাঝে আঘাত লাগে। বলা যেতে পারে অত্যন্ত সেনসিটিভ একটা দৃশ্য। তখন তো আমি নতুনJ খুব চাপ পড়েছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যাঁরা ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেন তাঁদের অনেক বেশি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হতে হয়। কারণ, সব সময় মাথায় চলতে থাকে উল্টো দিকে থাকা সেই নায়িকা বা অভিনেত্রীর যেন কোনও আঘাত না লাগে। তাঁর যেন কোনও ভাবেই মনে না হয় যে, অসঙ্গত ভাবে স্পর্শ করা হচ্ছে। শুরুর দিকে খুব ভয় লাগত। মানসিক চাপ লাগত। এ সব ক্ষেত্রে আমাদের চোট লাগে বেশি। তবে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে সেই দক্ষতা তৈরি হয়ে যায়। সুতরাং এটা অনেকটা কোরিওগ্রাফির মতোই। কিন্তু সমাজে যেটা হচ্ছে সেটাকে এটার সঙ্গে না মিলিয়ে ফেলাই উচিত। একটাই কথা বলতে চাই, বাস্তবের ঘটনাকেই অনেক সময় আমরা পর্দায় তুলে ধরি। তবে বাস্তবের এই ছবি আমরা কেউই চাই না।