Bangladesh Situation: জাতীয় সঙ্গীত, সংবিধান! ক্রমশ পাকিস্তানের গোলাম হওয়ার পথে এগোচ্ছে ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশ?
ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাই-কমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু। মাঝে এক বিষধর সাপ আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। এখন আবার আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরবো।
সময়টা ২০২২-এর নভেম্বর। ইমরান খান তখনও জেলে যাননি। বিরোধী নেতা হিসাবে রাস্তায় নেমে শাহবাজ শরিফের ঘুম ছুটিয়ে দিচ্ছেন। ইমরানকে সেদিন বলতে শুনেছিলাম ১৯৮৯ সালে ভারতের সঙ্গে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে আমি ঢাকা যাই। দেখলাম স্টেডিয়ামে হাজির ৫০ হাজার দর্শক ভারত নয়, পাকিস্তানের জন্য গলা ফাটাচ্ছেন। স্বাধীনতার পর আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে অবিচার করেছিলাম। আর এবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাই-কমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু। মাঝে এক বিষধর সাপ আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। এখন আবার আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরবো।
পাকিস্তানি ডিপ্লোম্যাট যে বিষধর সাপ বলতে ভারতের দিকে ইঙ্গিত করছেন, তা তো আপনারা বুঝতেই পারছেন। সত্যি আর কী দেখব বলুন তো। মুজিবের মূর্তি ভাঙা দেখেছি। এবার দেখলাম ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহম্মদ আলি জিন্নার মৃত্যুদিন পালিত হচ্ছে। দাবি উঠছে, মুজিবর রহমান নয়। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে মহম্মদ আলি জিন্নাকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে হবে। আর সেখানে পাক ডেপুটি হাই-কমিশনার ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনার নিশানায় ছিল ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব। কারণ পাকিস্তান সেদিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল। এই জাতীয় প্রেস ক্লাব আটের দশকে বাংলাদেশে সেনাশাসক হুসেন মহম্মদ এরশাদকে সেনাশাহির জন্য দায়ী করে তাদের ক্লাবে ঢুকতে দেয়নি। আর এবার সেখানেই পালিত হল জিন্নার মৃত্যুদিন। দেখুন স্বাধীন বাংলাদেশে জিন্নার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন যে আগে হয়নি এমন নয়। মুসলিম লিগের উদ্যোগে বা খালেদা জিয়ার আমলে ছোট করে অনুষ্ঠান হয়েছে। তাও প্রতিবছর নয়। পরে তা বন্ধও হয়ে যায়। এবারই প্রথম এত বড় করে ঢাকা প্রেস ক্লাবের মত এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই অনুষ্ঠান হল। যেখানে দাবি উঠল মুজিবের বদলে জিন্নাকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে হবে। বাংলা নয়, পড়া হলো উর্দু কবিতা। পাঠ করা হল জিন্নার জীবনী। আর অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন পাক দূতাবাসের কর্মীরা।
জিন্না-জয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিল নবাব সলিমুল্লা অ্যাকাডেমি। ঢাকার যে নবাব সলিমুল্লার বাড়িতে তৈরি হয়েছিল মুসলিম লিগ। অনুষ্ঠানে অনেকে অনেক কথা বললেন। সবই মোটের ওপর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আর অন্ধ ভারত-বিরোধিতায় মোড়া। যেমন ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বরং ভারতের গোলাম হয়েছে। ১৯৪৭-এর ১৪ অগাস্ট এবং ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেন, এই দু-দিনই বাংলাদেশের আসল স্বাধীনতা দিবস। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে নতুন তৈরি হওয়া সংগঠন নাগরিক পরিষদের সভাপতি মহম্মদ সামসুদ্দিনের মুখে শুনলাম, জিন্না না থাকলে দেশভাগ হত না। আর দেশভাগ না হলে বাংলাদেশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অংশ হয়ে থেকে দিল্লির গোলামি করতে হত। ভারতের ইচ্ছেয় ঢাকার জিন্না অ্যাভিনিউয়ের নাম পাল্টে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ করা হয়। দেশের মানুষ এসব চায়নি।
বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা যে হচ্ছে, সেই খবর তো কারওই অজানা নয়। এবার নজর পড়েছে সংবিধানে। হয়ত সত্যিই একদিন জিন্না হবেন জাতির পিতা। আর দেশটার নাম পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ থেকে হয়ে যাবে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ বিরোধী ১৭ দলের জোট সংবিধান সংশোধনের দাবি নিয়ে ১ কোটি সই সংগ্রহ অভিযানে নামছে। আর তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস তাঁর সেকেন্ড অ্যাড্রেস টু দ্য নেশনে বলেছেন আগে সংবিধান সংশোধন, তারপর ভোট।