১৫ অগস্ট গুজরাট সরকার তাদের ক্ষমা নীতি বা ‘মওকুফ নীতি’র অধীনে বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় একদিকে যেমন সরব হয়েছে বিরোধী শিবির, তেমনই অন্যদিকে আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজ়েনদের একাংশ। বিলকিস মামলায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে চিঠি লিখেছেন গুজরাটের তিন কংগ্রেস বিধায়ক। বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্তদের তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে সেই চিঠিতে। এবার অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট করলেন। ২০ বছর আগে বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় যে ১১ জনকে দোষী সাবস্ত্য করা হয়, তাদের এই মুক্তির ঘোষণায় একজন সাধারণ মহিলা নাগরিক হিসেবে মিমি ক্ষুব্ধ। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন হচ্ছে হর ঘর তিরঙ্গা অভিযান চালিয়ে। কিন্তু সত্যিই কি স্বাধীন দেশের মহিলারা?—কটাক্ষ মিমির। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের পর একজন মহিলা হিসাবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মিমির বক্তব্য এই ঘটনায় তিনি ‘ক্ষিপ্ত এবং ভেঙে পড়েছেন’।
সমগ্র জাতি যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছিল, তখন গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১১ জন দোষী ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মিমি এই বিষয় নিয়ে টুইট করে লিখেছেন, ‘‘১৫ই অগস্টের ভাষণটি কী নিয়ে ছিল??? আপনি নারীদের সম্মান প্রদর্শন এবং নারীর অধিকারকে সম্মান করার কথা বলেছিলেন, তা-ই না????? আজ একজন মহিলা হিসেবে আমি কথা বলছি এবং আমি ক্ষুব্ধ এবং ভেঙে পড়েছি।’’ মুহুর্তের মধ্যে তাঁর টুইট ভাইরাল হয়ে যায় কারণ নেটিজ়েনদের একাংশ ইতিমধ্যেই গুজরাট সরকারের এই নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী, মিমির বন্ধু এবং অভিনেত্রী-তৃণমুল সাংসদ নুসরাত জাহানও লিখেছেন, মহিলারা এখনও সুবিচার পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছেন।
11 men convicted of gangraping her were released on what grounds on what???!!!!
Than what was the 15th august speech about??? You said respecting and honouring women right?????This is just a woman talking today and i am furious and broken.1/1
— Mimi chakraborty (@mimichakraborty) August 18, 2022
বিলকিস বানো নিজেও পরে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে উল্লেখ করেছেন যে এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাঁর বিশ্বাস নড়ে গিয়েছে। ১৭ অগস্ট তিনি সেই বিবৃতিতে লিখেছিলেন: ‘‘দুই দিন আগে, ১৫ অগস্ট, ২০২২ সালে, গত ২০ বছরের ট্রমা আমার উপর আবার বয়ে গেল যখন আমি শুনলাম যে ১১ জন দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি যাঁরা আমার পরিবার এবং আমার জীবন ধ্বংস করেছে, এমনকী আমার থেকে আমার তিন বছরের মেয়েকেও কেড়ে নিয়েছে, তারা আজ মুক্ত হয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।’’ বিলকিস বানোর বিবৃতি তাঁর পক্ষের আইনজীবী শোভা জনসমক্ষে এনেছেন।
সমাজকর্মী, ইতিহাসবিদ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি ইতিমধ্য়েই সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানিয়ে বিবৃতি জারি করেছেন। ২০০২ গুজরাট দাঙ্গার সময়ে বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের আরও ৭ জনকে হত্যা করার অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বইয়ের এক বিশেষ সিবিআই কোর্ট অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। পরে সেই রায় বহাল রেখেছিল বম্বে হাইকোর্টও। ১৫ বছরের বেশি কারাবাসের পর, আসামীদের একজন সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারের কোর্টে বল ঠেলেছিল। গুজরাট সরকারকে তাদের সাজা মওকুফের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এরপর গুজরাট সরকার এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটিই ১১ জনের মুক্তির সুপারিশ করেছে।