জয়িতা চন্দ্র
অভিনয় থেকে মিউজ়িক—’বল্লভপুরের রূপকথা’য় এই দুই ক্ষেত্রেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে দেবরাজ ভট্টাচার্য। তবে নিজেকে তিনি কোন পরিচয়ে এগিয়ে রাখতে বেশি পছন্দ করেন: অভিনেতা নাকি সঙ্গীত পরিচালক? জানালেন TV9 বাংলাকে।
‘বল্লভপুরের রূপকথা’কে যে দর্শক এভাবে গ্রহণ করছে, আপনি কী মনে করেন থিয়েটার আপনাদের টিমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার ফলেই সেটা হল?
না, ঠিক তা নয়। বর্তমানে যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই থিয়েটার থেকে আসছেন। বিশেষত বাংলার ক্ষেত্রে। ফলে আলাদা করে এটা বলা মুশকিল যে, এ তো থিয়েটার করেনি, এর তো থিয়েটারের প্রশিক্ষণ নেই, ফলে ও খারাপ অভিনেতা। পার্থক্যটা হল, কেউ ছবিতে বেশি কাজ করে, কেউ থিয়েটারে। কেউ-কেউ আবার দু’টোই করে চলেছেন সমান তালে। এই মেলবন্ধনটা আমার ক্ষেত্রে হয়নি। তার কারণ আমি ২০১৩-তে ‘মিনার্ভা’য় ঢুকি। যেখানে অনির্বাণও ছিল একটা সময়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। ওখানে ঢুকলে আর অন্য কোথাও কাজ করা যায় না। এরপর আমার ক্যামেরার সামনে কাজ করা শুরু। ফলে ক্যামেরার সামনে আমি নবীন। তাই বলব, ‘থিয়েটারের সকলে কাজ করেছে বলে এত ভাল হয়েছে’, যেটা লোকে বলাবলি করছে, আমার মতে এই প্রসঙ্গটা না ওঠাই ভাল। সকলেই দিনের শেষে পারফর্মার।
‘বল্লভপুরের রূপকথা’ কী এমন দিল, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেল বলে আপনি মনে করেন?
এর উত্তর আমরা গানে- গানে ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছি। ‘ডার্ক হল, লাইট হল, হল ডিটেকটিভ, লৌকিক থেকে ক্লাসিক হয়ে শূন্য দিকবিদিক’। সব হয়ে গিয়েছে। সব জঁরের কাজই দেখেছে দর্শক। পুরনো ছবিতে যে কমেডির ধাঁচ ছিল, তা যেন কোথাও গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছিল। ছবিটায় দেখবেন কোনও অশ্লীল শব্দ নেই। সমস্তটাই খুব সহজ কমেডি। এই সরল বিষয়টারই বোধহয় বেশ কিছু দিন ধরে অভাব ঘটছিল। চিত্রনাট্য পছন্দ হওয়ার পিছনেও মূল কারণ বোধহয় এটাই।
বেশ কিছু ছবি থেকে যায়। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ও কি সেই তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হল?
ছবিটা অনেকদিন থেকে যাবে কি না, এটা অনুমান করা খুব মুশকিল। কারণ মানুষ এখন খুব দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। অধিকাংশ জিনিসই পিছনে ফেলে এগোচ্ছে। ফলে অনেকদিন পরই এর উত্তর পাওয়া যাবে। মানুষ খুব সহজে ভুলতে পারে। আবার মনেও তাঁরাই রাখেন। আর এখন এত অপশন বেড়ে গিয়েছে… চারিদিকে কত প্রকার বিনোদন তো, তাই দু’-তিন বছর পরই বোঝা যাবে ‘পাতালঘর’ বা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর মতো দর্শক এই ছবিকেও মনে রাখল কি না।
সহজ গল্প, খুব যত্ন নিয়ে সুক্ষ্ম কাজ, সাউন্ডের একটা বড় ভূমিকা থাকে। বিশেষত যখন টানটান উত্তেজনা, ভয় এই প্রসঙ্গগুলো ওঠে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িকের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা সবার প্রথম মাথায় রাখা হয়েছিল?
সবার আগে আমরা ইন্ট্রুমেন্টেশনটা মাথায় রেখেছিলাম। সেটা কেমন… এই গল্পটা যেমন ষাটের দশকের। ১৯৬১ সালের পটভূমি। আমরা এটাই মাথায় রেখেছিলাম: তখন ঠিক কেমন মিউজ়িক চলত। কী-কী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হত। আমরা সেটা নিয়ে পড়াশুনা করেছিলাম। তাই বাংলা গানের পুরনো মেলোডিটাকেই মূল ধরে এগিয়েছিলাম। তাই সরদ, সেতার, সারেঙ্গি, হারমোনিয়াম, দোতারা… এগুলো দিয়েই বুনেছিলাম গানগুলো।
অনেক ছবির ক্ষেত্রে গানই হয়ে ওঠে মূল হাতিয়ার। এই ছবির গানগুলো বেশ জনপ্রিয়। ছবির গল্পের চাহিদাতেই কি গানগুলো এভাবে সাজানো নাকি গানও এই ছবির এক ভিন্ন পরিচিতি হয়ে উঠুক, এটা ভেবে বোনা?
দেখুন বাদল সরকারের নাটকে তো তেমন কোনও গান নেই, অনির্বাণ যেভাবে সাজাতে চেয়েছে, সেটাই হয়েছে। ওর তো একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী ছিল, সেটার সঙ্গে সামিল হয়েছি আমরাও। যেমন ‘সাজো সাজাও’, এটা তো ছন্দা ও রাজবাড়ির প্রেক্ষাপট থেকে তৈরি, সেটা যে এতটা সুন্দর করে দৃশ্যায়ণ হবে, অনির্বাণ আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল। সেই অনুযায়ীই ও লিখেছিল। পুরনো ফ্লেভারের সেই লেখা। যেটা শোনার পরই বুঝেছিলাম, কেমন হবে গানের ছবিটা। আবার ‘বাদল সরকারের গান’টা নিয়ে বলতে পারি, কোনও ট্রিবিউট নয়, কারণ ওঁর সৃষ্টির অন্যতম এই নাটক। ফলে এটা ফিল্মে করেই যে তাঁর বিশাল পরিচিতি সামনে আনছি, এমনটা তো নয়। আমরা যে চেষ্টাটা করেছি তা হল, যাঁরা জানেন না, তাঁদের কাছে বাদলবাবুকে সামান্য চেনানো। খুব সামান্য এবং খুব সহজ।
অভিনেতা দেবরাজ কি ডাক পাচ্ছেন এবার টলিউড থেকে?
না না, ডাক আসেনি। যখন ‘বিবাহ অভিযান’ করেছিলাম তখন তো বল্লভপুর করিনি। ফলে এতটা পরিতিচি ছিল না আমার। এখন দেখা যাক, ভাল কাজের প্রত্যাশা কে-ই বা না করে?