THE EKEN EXCLUSIVE: পোস্টারে ছয়লাপ শহর, একেনবাবুর লেখক অন্তরালেই! ধরা দিলেন TV9 বাংলায়

raktim ghosh |

Apr 14, 2022 | 12:22 PM

একেনবাবু লেখার অনুপ্রেরণা পান কোলাম্বো ( পোশাকি নাম লেফটেন্যান্ট কোলাম্বো, মার্কিন গোয়েন্দা চরিত্র) থেকে। কোলাম্বোর মগজাস্ত্র ছিল চমকপ্রদ। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে একেনবাবু। আমার গল্পে রহস্য কে অপরাধী সেটা নয়। কীভাবে অপরাধীকে ধরছে-সেটাই আমার গল্পের মূল রসদ।

THE EKEN EXCLUSIVE: পোস্টারে ছয়লাপ শহর, একেনবাবুর লেখক অন্তরালেই! ধরা দিলেন TV9 বাংলায়
গল্পের একেনবাবু বদলে গেলেন সিনেমায়। মাঝে একেনবাবুর লেখক সুজন দাশগুপ্ত (গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ)

Follow Us

রক্তিম ঘোষ

কলকাতাঃ কলকাতা জুড়ে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ। হোর্ডিং হোক বা দেওয়ালে সাঁটানো-শহর জুড়ে শুধুই দ্য একেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একেনবাবুর নতুন বাড়ি এবার রুপোলি পর্দা। প্রচার, প্রোমোশন জোরকদমে চলছে। কিন্তু একেন্দ্র সেনের মানসপিতা কোথায়? মানে, একেনের চরিত্র যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই সুজন দাশগুপ্ত! তিনি নিউ জার্সিতে নিজের বাড়িতে বসে। একদম অলক্ষ্যে। সত্যজিতের ফেলুদা বা শরদিন্দুর ব্যোমকেশের সিরিজ রিলিজ করলেই আলোচনায় উঠে আসে কিংবদন্তি লেখকদের নাম। কিন্তু একেন্দ্র সেনের লেখক সুজন দাশগুপ্ত এর থেকে অনেক দূরে। বড়পর্দায় একেন্দ্র সেন রিলিজের আগে সূদূর নিউ জার্সি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে সাক্ষাৎকার দিলেন অলক্ষ্যে থাকা সুজন দাশগুপ্ত মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে৭টায়।

 

প্রশ্নঃ সুজনবাবু, কলকাতা জুড়ে দ্য একেনের পোস্টারে ছয়লাপ। কিন্তু একেনের মানসপিতাই অন্তরালে। কেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ (হেসে)  লেখকরা তো সবসময় আড়ালেই থাকে। তৈরি করেছিলাম আমিই। কিন্তু সেটা তো বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারপর একেনকে নিয়ে পদ্মনাভ (দাশগুপ্ত) এবং টিমের বাকিরা তাঁকে মিডিয়ার উপযুক্ত করেছেন। আর আমার একেনবাবুর গল্পগুলো বেশিরভাগই নিউ জার্সি-নিউ ইয়র্ক বেসড ।লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই। আমি বেসমেন্টে বসে গল্প লিখি (হাসি)। আগে আমার গল্প কেউই পড়ত না। আমি মজা করে বলি, আমার গল্প পড়তেন ৩ জন। এক আমি, দুই প্রিন্টারের লোক আর তিন প্রুফ রিডার। এখন টুকটুক করে একটু পাঠক বেড়েছে। বাড়ছে।

প্রশ্নঃ বেসমেন্টে বসে গল্প লিখতেন। এটার গল্পটা একটু বলবেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ আমার অফিস ও লাইব্রেরি বাড়ির বেসমেন্টে। লেখার সূত্রে এখন হয়ত বিদেশবিভুঁই ঘুরছি ঠিকই। কিন্তু আঁতুড়ঘরটা বাড়ির বেসমেন্টেই। আমার লেখা বেরিয়েছিল বহুবছর আগে। ১৯৯০-৯১ সালে প্রথম আনন্দমেলায় বেরোয় একেনবাবুর গল্প। আসলে আমি তো লেখক নই, একজন প্রযুক্তিকর্মী। প্রথমে সহজ করে টেকনোলজির গল্প লিখতাম। তখন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ‘আনন্দমেলা’-র সম্পাদক। আনন্দমেলাতেও লিখতাম ‘কিশোর মন’ নামক এক পত্রিকাতেও লিখতাম। একদিন নীরেনবাবু বললেন, গোয়েন্দাকাহিনী লিখবেন? আমার গোয়েন্দা আসলে অস্ত্রহীন। যিনি যুক্তি দিয়ে রহস্য সমাধান করেন।

এই সেই বেসমেন্ট

 

আমি বহুবছর বেল ল্যাবে (নিউ জার্সি) কাজ করতাম। যখন আমি বেল ল্যাবে কাজ শুরু করি তখন সেখানে কাজ করতেন বেশ কয়েকজন নোবেলজয়ী, আর কিছু পণ্ডিত মানুষ। আর আমাদের মতো পিএইচডি হোল্ডাররা। প্রায় আড়াই হাজার পিএইচডি হোল্ডার যুক্ত ছিলেন বেল ল্যাবে। সে অনেক দিন আগের কথা। কাজ করতাম at&t সংস্থায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একসময় নামী মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা)। টেকনোলজি নিয়ে সহজ করে লিখতে লিখতেই একেনবাবুর সৃষ্টি।

একেনবাবু লেখার অনুপ্রেরণা পাই কোলাম্বো ( পোশাকি নাম লেফটেন্যান্ট কোলাম্বো, মার্কিন গোয়েন্দা চরিত্র) থেকে। কোলাম্বোর মগজাস্ত্র ছিল চমকপ্রদ। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হই। আমার গল্পে রহস্য কে অপরাধী সেটা নয়। কীভাবে অপরাধীকে ধরছে-সেটাই আমার গল্পের মূল রসদ। নব্বই সালে গোটা পাঁচ-ছয়েক একেনবাবুর গল্প ছাপানো হয় আনন্দমেলায়। তারপর বন্ধ হয়ে যায়।

ফের একেনবাবু শুরু করি ২০০০ সালের পর। সেই সময় দু’জন ছেলে আমার বই পড়ে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে একেনবাবু সমগ্র  প্রকাশ করতে চায়। আমি বললাম, “করো না, দেউলিয়া হয়ে যাবে, বই তো বিক্রিই হবে না (হাসি)।” কিন্তু দেখলাম সমগ্রের প্রথম সংস্করণ ঝড়ের বেগে বিক্রি হয়ে গেল। তখনই যোগাযোগ করলেন পরিচালক অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আমি একেনবাবুকে ওয়েবসিরিজে আনতে চাই। সেই থেকেই একেনবাবু পর্দায় আসার শুরু।

 

প্রশ্নঃ আপনি তো ১৯৬৭ সালে মার্কিন মুলুকে চলে যান। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউ জার্সিতে থাকেন। অনেক গল্পকারই বলেন, গল্পের চরিত্রগুলো তাঁরা আশেপাশেই দেখেছেন। সেখান থেকেই লিখেছেন গল্প। কিন্তু আপনি তো গত ৫০ বছরে কলকাতায় ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’। তবুও এরকম একজন আদ্যোপান্ত বাঙালি একেনবাবুকে চিনলেন কোথা থেকে?

 

সুজন দাশগুপ্তঃ আমি একেন্দ্র সেনকে চিনতাম না। আমি আসলে বেজায় ক্ষ্য়াপাটে, বুঝলেন তো! আমার স্ত্রী তো বলেন, আমার মধ্যে নাকি একেনবাবুর ভাব আছে (হাসি)। আসলে আমি নিজে এতবছর বিদেশে থেকেও ভীষণভাবে একজন বাঙালি। বাংলা ভাষাটাকে ভীষণ ভালোবাসি।

শুধু আমি নই, আমার মেয়েও ভীষণভাবে বাংলাপ্রাণা। ও নিজেও গল্প লেখে। নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলিং লেখক। নাম সায়ন্তনী দাশগুপ্ত। ওঁর কিরণমালা সিরিজ় নিউ ইয়র্ক টাইমসে বেস্টসেলার। ওর গোটা দশেক বই প্রকাশ পেয়েছে। এদেশে তো ওঁর লেখার কদর রয়েছে। সায়ন্তনী বিশ্বাস করে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা কতটা। ওঁর স্বামী একজন জার্মান। আমার নাতি-নাতনিরা কিন্তু ডয়েশ ও বাংলা ভাষা দু’টোতেই দিব্যি কথা বলে। আমার নাতি তো বাংলা নিয়মিত পড়ে। এটা আসলে, ভাষার প্রতি ভালবাসা, হেরিটেজের প্রতি ভালবাসা। সেই ভালবাসা যে কোনও কারনেই আমাদের থেকে দূরে চলে যায়নি। তখন দেশ থেকে অনেক দূরে থাকি না কেন!

আমার লেখায় অবশ্য প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয়। সেটা কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই। আমার কাছে কলকাতা আটকে রয়েছে ১৯৫৪ কিংবা ৫৫সালে। তারপর তো তেমনভাবে কলকাতাকে দেখিনি। আমি সেইসময়ের বাংলার সঙ্গে অভ্যস্ত। এখন তো ভাষার ধরনটাই বদলে গিয়েছে। একেনবাবুকে তো হঠাৎ করেই আমি কলকাতা থেকে মার্কিনমুলুকে নিয়ে আসি। ম্যানহাটানে মুনস্টোন গল্পে। একেনবাবু তো আমেরিকা চিনতেনই না। তাই ইংরেজি ও বাংলা ভীষণভাবে ব্যবহার হয়েছে।

আরেকটা কথা, আমি কলকাতায় বসে ব্যোমকেশ নিঃসন্দেহে পড়েছিলাম। কিন্তু ফেলুদা তেমন পড়া হয়নি। জটায়ুকে তো চিনতামই না। জটায়ু যখন গল্পে এসেছেন, তখন আমি এদেশে চলে এসেছি। ফলে তখন তেমন পরিচয় ছিল না। পরে অবশ্যই সত্যজিৎ আমি পড়েছি। আমি কিন্তু বরাবর ব্যোমকেশের ভক্ত।

 

প্রশ্নঃ বহুবার হয়ত এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, তবুও প্রশ্ন করছি। আপনার গল্পের একেনবাবুর সঙ্গে তো পর্দার একেনবাবুর কোনও মিল নেই। আপনার গল্পের একেনবাবু ছিপছিপে, মাথাভর্তি উস্কোখুস্কো চুল, গোঁফও নেই। আর পর্দার একেনবাবু গোলগাল, মাথায় চওড়া টাক আর গোঁফওয়ালা একটা মানুষ। প্রথমবার পর্দার একেনকে দেখে কেমন লেগেছিল?

সুজন দাশগুপ্তঃ আমাকে যখন অনিন্দ্য (বন্দ্যোপাধ্যায়) বলল, সুজনদা আপনার একেনবাবুর মতো কোনও মানুষ তেমন খুঁজে পাচ্ছি না। পাচ্ছি, তবে তাঁর অভিনয় ক্ষমতা তেমন উঁচু দরের নয়। কিন্তু একজনকে পাচ্ছি, যাঁর চেহারার সঙ্গে আপনার গল্পের একেনবাবুর কোনও চেহারাগত মিল নেই। কিন্তু খুব ভাল অভিনেতা। আমি বললাম, দেখো বাপু, যিনি অভিনয় করতে পারেন না, তাঁকে দিয়ে এই চরিত্র করিও না। অনির্বাণ দুর্ধর্ষ অভিনেতা। পদ্মনাভ (দাশগুপ্ত) তখন বলল, সুজনদা, এর চিত্রনাট্য আমি লিখে ফেলছি। চিত্রনাট্যে তো একেনবাবুর মুখে ভুলভাল প্রবচনও রয়েছে, যেটা গল্পের একেন বলে না। ওরা একেনবাবুকে বেশ একটা মাছে-ভাতে বাঙালি বানিয়েছে। ওরা বেশ চমৎকার প্যাকেজিং করেছে।

আমি এখন যখন একেনবাবুর গল্প লিখতে বসি, তখন অনির্বাণের (চক্রবর্তী) মুখটাই ভেসে ওঠে। সেটা ওঁকে আমি বলেওছি। আমাকে তো এখন এটা বেশি ভাবতে হয়, গল্পের একেনবাবুর চরিত্র যেন লেখার সময় বিচ্যুত না হয়।

অনেকে বলেন, আপনি দুঃখিত হন না, এই বদল দেখে? আমি মজা করে বলি, আরে বাপু, পর্দার একেনবাবুকে দেখে তো আমার দু’টো বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। একটু টাকাপয়সা পাচ্ছি (হাসি)।

আমার অনেক বন্ধু তো ফেসবুকে তেড়ে গালাগালি দিয়েছে, একেনবাবুর এই আমূল বদল দেখে। আমি তাঁদের বলি, আরে অনির্বাণ তো আমার ফেসবুকে রয়েছে। ওঁকে কিছু বলো না। আর পদ্মনাভ তো একেনবাবুর স্ত্রীয়ের নামই বদলে দিয়েছে। গল্পে একেনবাবুর স্ত্রীর নাম ছিল মিনতি। আর পর্দায় একেনবাবুর স্ত্রীর নাম খুকু (হাসি)। অনির্বাণ তো একবার বলেই ফেলেছিল, সুজনদা আপনি আর পদ্মনাভ মিলে ঠিক করুন, আমার বউ আসলে কে (হাসি)।

এই কনফিউশন চিরদিন থাকবে-গল্পের আর ফিল্মের একেনবাবুকে নিয়ে। এটা কিন্তু আমার অজান্তে হয়নি। আর এটা তো ঠিক, একেনবাবুকে লোকে চিনেছে ওটিটির দৌলতে, বই পড়ে নয়।

 

প্রশ্নঃ ফেলুদা হোন বা ব্যোমকেশ-সময়ের নিয়মে প্রোটাগনিস্ট চরিত্ররা বদলে গিয়েছেন। যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে আজকের টোটা রায়চৌধুরি। কিংবা জটায়ু সন্তোষ দত্ত থেকে রবি ঘোষ-বিভু ভট্টাচার্য হয়ে আজকের অনির্বাণ চক্রবর্তী। কিন্তু ওটিটিতে একেনবাবু সিরিজে বাপি-প্রমথ হঠাৎই বদলে গেল সিনেমার পর্দায়। সৌম্য-বাবলের পরিবর্তে এখন সোমক-সুহোত্র। এটা কেমনভাবে দেখেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ এটা একটা সমস্যা। অনিন্দ্য (বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে বলেছিল। ওঁদের কিন্তু ইচ্ছে ছিল সৌম্য ও বাবলকে রাখার। শুনলাম, ওঁরা নাকি সময় দিতে পারেনি। বিশেষ করে সৌম্য়। ওঁর ব্যস্ত শিডিউলের জন্য। তাই পুরো জুটিটাই শুনলাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পর্দায় এই নতুন জুটিকে কেমনভাবে মানুষ নেবে আমি ঠিক জানি না।

কলকাতায় যখন থাকতাম, তখন দেখতাম, উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা হলে মাসের পর মাস চলত। এখন তো শুনি কোনও সিনেমা ২ সপ্তাহ কোনও হলে চললেই সেটা হিট। হ্যাঁ এটাও ঠিক, তখন সিনেমা চলত গুটিকতক হলে। এখন তো পর্দার সংখ্যাও বেড়েছে। এটাই তো শুনি এখন। আমার তেমন অবশ্য ধারণা নেই।

 

প্রশ্নঃ এখনও একেনবাবু লেখার সময় একই রোমাঞ্চ অনুভব করেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ সত্যি কথা বলতে কি, একেনবাবু লিখে-লিখে এখন ক্লান্তি এসে গিয়েছে। গতবারই বলেছিলাম আর লিখব না। কিন্তু লিখতে হচ্ছে। বলতে পারেন, খ্যাতির বিড়ম্বনা। অনুরোধ আসছে, আরেকটা উপন্যাস লিখুন দাদা।

এখন আমার ৭৮ বছর বয়স। স্মৃতিশক্তি আমার কোনওকালেই তেমন ভাল নয়। লিখতে-লিখতে যদি ভুলে যাই, কে খুন করেছিল-সেটাই তো আমার স্ট্রাগল। রাম খুন করেছে, ধরল যদুকে। তখন সেটা হাসির গল্প হবে, গোয়েন্দা গল্প হবে না (হাসি)।২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সিলিকন ভ্যালিতে বছর দুয়েক কনসালটেন্ট ছিলাম। এখন আমার হাতে বিস্তর সময়। আর এই বয়সে যদি কোনও কাজ না থাকে, তাহলে হয় বউকে জ্বালাব বা অন্যদের জ্বালাব (হাসি)। তার থেকে খাতা-পেনসিল নিয়ে বসে থাকা ভাল।

 

প্রশ্নঃ একেনবাবু তো এবার দার্জিলিংয়ে যাচ্ছেন। সুজন দাশগুপ্ত শেষ কবে দার্জিলিং গিয়েছেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ আমি দার্জিলিংয়ে গিয়েছি বহু বছর আগে। যখন আমার বয়স, বছর ১০ কি ১২। সুতরাং দার্জিলিংয়ের স্মৃতি আমার শূন্য। আমাকে তো অনেকেই গালাগালি দিয়ে বলে, আপনি তো কোনও দিন ঢাকায় যাননি, তবুও আপনি ঢাকার রহস্য উন্মোচন করেছেন। আপনার সাহস তো কম নয়! আমি হেসে বলি, আরে বাবা, ওখানে তো আমার পিতৃপুরুষের ভিটে ছিল (হাসি)। আমার ঢাকার কানেকশন আছে (হাসি)।

আমি তো একবার গুসকরাকে বীরভূমে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পাঠকরা আমাকে বলেছিলেন, দাদা গুসকরা তো বর্ধমানে। আমি তাঁদের মজা করে বলেছিলাম, গল্পের গরু তো গাছে চড়ে (হাসি)।

 

প্রশ্নঃ বাংলা ফিল্মে এখন গোয়েন্দাদের রমরমা। আপনি একেনবাবুর মানসপিতা। আপনার কাছে একেনবাবুর ইউএসপি কী?

সুজন দাশগুপ্তঃ আমার ধারনা, একেনবাবু একটা ভিনটেজ ক্যারেক্টার। আমি তো আমেরিকায় এসেছি সেই ১৯৬৭-তে। আমার গল্পে বারবার পুরনো কলকাতা ধরা পড়ে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে মিশে যায় এখনকার টেকনোলজি। গল্পে সেটা খুব সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হয়।  আমি পাঠককে সেই আধুনিক টেকনোলজি বোঝাতাম সহজ ভাষায়। যাতে মনে না হয়, জ্ঞান দিচ্ছি। পুরনো বাঙালিয়ানা আর আধুনিক প্রযুক্তি-এটাই বোধহয় ইউএসপি। আমি তো ভাই বেসমেন্টে বসে আছি (হাসি)।

 

প্রশ্নঃ পর্দায় একেনবাবু লড়াই করবে অপরাধীর সঙ্গে। আর পর্দার বাইরে একনবাবুকে লড়াই করতে হবে কেজিএফ-চ্যাপ্টার টুর সঙ্গে। আপনি লেখক। তাই কি সিনেমা হিট হল না ফ্লপ-তা নিয়ে আপনার মাথাব্যথা নেই। নাকি সন্তান একেনের সাফল্য নিয়ে মানসপিতা চিন্তিত?

সুজন দাশগুপ্তঃ  সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। একেনবাবু যে লোকে এখন পড়ছে বা দেখছে-সেটা তো আমি কোনওদিন চিন্তাও করিনি। ভাবিওনি। আমি একেনবাবু লেখা শুরু করেছিলাম, নিজের আনন্দের জন্য।

আপনার কাছে শুনলাম কেজিএফ টু-র কথা। আমার মনে হয়, বেশিরভাগ লোকে কেজি এফ টু-ই দেখবে। একেনবাবু যদি দু’-একজন লোক দেখে আমি অবাকই হব। আমার টেনশন এতটুকুও নেই। আমার মজা লাগছে, লোকে একদিন তো হলে দেখবে। সেটা দু’জন হোক বা চারজন।

 

 

প্রশ্নঃ আপনি একেনবাবুকে কবে দেখবেন পর্দায়?

সুজন দাশগুপ্তঃ (হেসে) আমার তো সুযোগ নেই। ওয়েব সিরিজ দেখেছি। কিছু লোক বলছে নিউ জার্সিতে একেনবাবুর স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করুন না!

 

প্রশ্নঃ এখন সবাই সিনেমা হল থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকছে। আপনার একেনবাবুর অবস্থা ঠিক উল্টো। তিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বড়পর্দায় যাচ্ছেন। এটা কি উত্তরণ নাকি সময়ের থেকে উল্টো দিকে হাঁটা বলবেন?

সুজন দাশগুপ্তঃ  এটা ঘটেছে। আমেরিকার কথা আমি বলতে পারব। মিস্টার বিন তো টেলিভিশন সিরিজ থেকে বড়পর্দায় হয়েছে। কোলাম্বোও তাই।  বাংলার কথা সত্যি বলতে পারব না। হয়ত, দর্শকদের ভালো লেগেছে বলে বড় পর্দায় তা করার চিন্তা ভাবনা হয়েছে।

আমি কিন্তু বড়পর্দায় একেনবাবুর আবির্ভাব নিয়ে নির্লিপ্ত। শুধু ফেসবুক-টেসবুক থেকে খবরটবর রাখি। এই আর কি! শুনলাম এই ফিল্মে একজন নায়িকাও রয়েছেন। পায়েল সরকার। আমার গল্পে এই চরিত্রটি ছিল। শুনলাম তিনি খুব সুন্দরী। আর আমি সুন্দরীদের একটু এড়িয়েই চলি (হাসি)। এই বয়সে সুন্দরী আমার শরীরের পক্ষে ভালও নয় (হাসি)।

এই বিষয়ে একটা গল্প বলতেই হবে। আমার ব্লাড প্রেসার বেশি বলে আমি ট্রেড মিলে ১ ঘণ্টা হাঁটি। আর হাঁটার সময় যাতে বোর না হই, তারজন্য আমার সামনে একটা টিভি সেট রাখি। যেখানে বাংলাদেশের নাটক চলে। সেখানে দেখি বেশ সুন্দরী অভিনেত্রীরা অভিনয় করেন। আমি তখন হাঁটার আনন্দ পাই। এই ভেবে আনন্দ পাই, যে হেঁটে ওদের কাছে পৌঁছতে চাইছি, কিন্তু পৌঁছতে পাচ্ছিনা (হেসে)। এটাতেই আনন্দ। কাছে গিয়ে হাত ছুঁলেই তো সব আনন্দ শেষ। (সজোরে হাসি)

 

প্রশ্নঃ আপনি ৮০ ছুঁইছুঁই। আপনি একজন প্রাণবন্ত মানুষ। একেনবাবুই কি সুজন দাশগুপ্তের বয়স কমিয়ে রাখে?

সুজন দাশগুপ্তঃ দেখো বাপু, আমার মনের বয়স বাড়েনি। সুন্দরী দেখলে আমার মন উদ্বেলিত হয়। আমার মনটা কাঁচাই আছে।

Next Article