সুচরিতা দে
কৃতি ছাত্র মানে দিনরাত কেবলই লেখাপড়া করতে হবে কে বলেছে? আর্টস নিয়ে লেখাপড়া করে ২০১৮ সালে উচ্চ-মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছিলেন গ্রন্থন সেনগুপ্ত। এবার সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ফেলুদা স্পেশ্যাল ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন গ্রন্থন। ছবির সহ-পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন এই কৃতি। উচ্চ-মাধ্যমিকের কৃতি মানেই যেন হয় ডাক্তার, না-হয় ইঞ্জিনিয়র নয়। কলা বিভাগের গ্রন্থন ছক ভেঙে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে লেখাপড়া করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় জগতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি। জীবনে ছক ভাঙেন যাঁরা, মানুষ তাঁদের মনে রাখেন বেশি। গ্রন্থনও তাই। ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। অন্য একটি কারণেও তিনি লাইমলাইটে এসেছিলেন সে সময়। বিজ্ঞান, বাণিজ্য নয়… কলা বিভাগে পড়াশোনা করে প্রথম হয়েছিলেন। সেই ছকভাঙার নিয়ম কায়েম করে রেখেছেন বাংলার এই কৃতি সন্তান। TV9 বাংলাকে কী বললেন গ্রন্থন?
কবে থেকে স্বপ্ন?
মানসিকভাবে সিনেমায় আসি ক্লাস ৮-এ পড়ার সময়। ভাবতাম সিনেমা করব বা বানাব। কোনও না কোনওভাবে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিলাম। ছোট থেকে ফ্যান্টাসি ছিল, কলকাতায় এসেই বোধ হয় সিনেমায় কিছু একটা করে ফেলতে পারব। পরবর্তীকালে বুঝেছিলাম বাস্তব জীবনটা অনেকটাই কঠিন। বেশ কিছু মানুষের সান্নিধ্যে আসি। বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলি। সেই সব মানুষগুলোর জন্যই আজ অন্ততপক্ষে কাজ করার একটা সুযোগ পেয়েছি।
কীভাবে আসে সুযোগ?
আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এসভিএফ-কেও ধন্যবাদ জানাতে চাই সেই সঙ্গে। তাঁরাই আমাকে এই ছবিতে সহকারী পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফেলুদায় সহকারী পরিচালনার কাজ ছিল আমার। ক্যামেরার সামনে আমার যতখানি কাজ দেখা গিয়েছে, ক্যামেরার পিছনে রয়েছে আরও অনেকবেশি। সেটাই আমার মূল দায়িত্ব। কতটা করতে পেরেছি, কতটা করতে পারিনি, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন, যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। ক্যামেরার সামনের ওই ঝলকটা আমার কাছেও একটা বিরাট চমক।
কতখানি শিখলেন?
যতখানি পারছি শেখার চেষ্টা করছি। প্রচুর ভুল করছি। প্রচুর বকা খাচ্ছি। কিন্তু এখান থেকেই যতখানি আহরণ করে নেওয়া যায়, ততটা চেষ্টা করছি।
সিনেমার প্রতি এই ভালবাসা থাকবে বলে মনে হয় পরবর্তীকালে?
থিয়েটারের মঞ্চ ও ক্যামেরার সঙ্গে আমার যে ভালবাসা তৈরি হয়েছে, সেই ভালবাসাকে আমি বজায় রাখার চেষ্টা করব। সুযোগ পাব কি পাব না, সেটা তো পরবর্তী বিষয়।
চাকরি করবেন না?
পেটের খিদে মেটানোর জন্য কোনও চাকরি করতে হলে, কাজ করতে হলে অবশ্যই সেই পথে হাঁটব। সেটা আমার ইচ্ছাও। পড়াশোনার জগতে আমার থাকার ইচ্ছা রয়েছে। অধ্যাপনা করতে ইচ্ছুক আমি। কিন্তু সিনেমা কিংবা থিয়েটার ছেড়ে দেওয়ার একেবারেই কোনও ইচ্ছে নেই। সেখানে আমি জোঁকের মতো লেগে থাকতে প্রস্তুত।
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের কী বলবেন?
বলব, যে বিষয় নিয়ে তোমরা পড়তে চাও, সেই বিষয় নিয়ে পড়ো। আমাকে সায়েন্স নিতেই হবে, কমার্স নিতেই হবে, কিংবা আর্টস নিতেই হবে এরকম কোনও মানে নেই। কেউ যদি বলে লেখাপড়া করব না, না করার সেই ইচ্ছাশক্তিও থাকতে হবে। তবে কী করব, সেই ধারণা যেন পরিষ্কার থাকে।