ছোটবেলায় নিউ আলিপুরের আদিবাড়িতে দু’টো ছাদ ছিল। একটা ছোট ছাদ। একটা বড় ছাদ। সেই ছোট ছাদে অনেক বড় করে সরস্বতী পুজো করতাম আমরা। বাবা-মা উদ্যোগ নিয়ে সেই পুজো করাতেন। আমাদের সেই বাড়িতে বেশ কয়েকজন ভাড়াটে ছিল। আমরা বাড়ির মধ্যেই ৮ জন বাচ্চা ছিলাম। আশপাশের বাড়ি থেকেও বাচ্চারা আসত অংশ নিতে। মনে আছে রংবেরঙের রিবন স্ট্রিংস দিয়ে সাজানো হত। রীতিমতো হইহুল্লোড় হত। সেটা ছিল একটা ইভেন্ট। খিচুরি রান্না হত। মেঝেতে বসে খাওয়া হত। খুউউউব মজা হত।
তারপর কুল খাওয়া, গায়ে হলুদ মেখে স্নান… এসব তো ছিলই। এখানে একটা কথা বলি, আপনারা কি জানেন, হলুদ কেন মাখতে হয়? কারণ ওটা অ্যান্টিসেপটিক। বসন্তকালে পক্স থেকে বাঁচার জন্য। আর কুল খেতে না করা হয় সম্পূর্ণ অন্য কারণে। সরস্বতী রাগ করেন সেটা কিন্তু কারণ নয়। এই সময় থেকে আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করে বলে… হঠাৎ যাতে ঠাণ্ডা না লেগে যায় তাই। এসব কিন্তু আমি ছোট থেকেই জানতাম।
ছোটবেলায় আমার সরস্বতী পুজোর একটা ছবি আছে আমার কাছে। সেখানে আমার ঠাকুরমা, ভাই, বোন, আমিও আছি। তখন চশমা পরতাম। মুখটা বেজার করে দাঁড়িয়েছিলাম ছবিতে। কারণ তার আগেই আমি বকুনি খেয়েছিলাম। ভীষণ রাগ হয়েছিল। ঠিক করেছিলাম ছবিটাই তুলব না। বাবা বিদেশে থাকতেন। পোলারয়েড ক্যামেরায় সেই ছবি তুলেছিলেন।
তারপর আস্তে-আস্তে বড় হলাম। স্কুলের সরস্বতী পুজোতে আমি খুব একটা যেতাম না। পাড়াতেই খুব মজা হত। তখন আর ভ্যালেন্টাইনস ডে বলে কিছু ছিল না। সরস্বতী পুজোতেই প্রেম। যার যাকে পুজোর সময় পছন্দ হয়েছে, অনেক সময় সরস্বতী পুজোর সময় পর্যন্ত টিকত। আমাদের পাড়ায় পুজোতেই প্রেম শুরু হত। সেটা চলত ক্রিসমাস পর্যন্ত। কারওর-কারও সরস্বতী পুজো পর্যন্তও টিকত। কারও তার আগেই কেটে যেত। যাদের টিকত, তারা আলিপুরের লাস্ট লেনে হাত ধরে ঘুরত। আমার তো পুজোর সময়তেই কেটে যেত। আমি একা-একা ঘুরতাম।
কিন্তু সরস্বতী পুজোতেও নতুন করে প্রেম হত। সেটাও একটা সূচনা। কিন্তু আমার কোনওদিন হয়নি। উল্টো কেস হয়েছিল। ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমরা স্কুলে গিয়েছিলাম। বিকেল-বিকেল হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরছিলাম। দেখি ব্রিজের কাছে কতগুলো ছেলে আমাদের দেখে টিজ় করল। রাগে, ভয়ে শাড়ি ধরে ছুট লাগিয়েছিলাম। সটান বাড়ি ঢুকে গিয়েছিলাম। বন্ধুরা বলল, ‘তুই ছুটলি কেন?’ আমি বোকা টাইপ ছিলাম। ভয়েই পেয়েছিলাম মনে হয়।
এখন ইনস্টিটিউটের সরস্বতী পুজোই আমার কাছে সব। করোনার জন্য দু’বছর হচ্ছে না। এবারও হবে না। তাই এবছর আমি একটা প্রোডাকশন হাউসের সরস্বতী পুজোতে যাচ্ছি। ওদের বড় করে পুজো হয়। সেটা খুব আনন্দ করে উপভোগ করব। সরস্বতী পুজোতে একা মোটে ভাল লাগে না!
আরও পড়ুন: Rahul Arunodoy Bandhopadhyay: ‘আজও বেমক্কা আশিকি হয়, নতজানু হয়ে কুঁচি ঠিক করে প্রেমিক’