শহর সেজে উঠেছে রকমারি আলোতে। মন্ডপে এসে গিয়েছে প্রতিমাও। ওদিকে আবার সিনেমা হলগুলিও পসরা সাজিয়ে তৈরি। পুজোর মরসুমে একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে দুই সুপারহিট ‘প্যান-ইন্ডিয়া’ ছবি (একটি বলিউডের, অন্যটি দক্ষিণী)। অন্যদিকে টলিউডেও ওই দিনেই মুক্তি পাচ্ছে চার-চারটে বাংলা ছবি। বাংলা ছবির অবস্থা যখন প্রায় বেহাল তখন এক অবাক কাণ্ড! অনলাইন বুকিং প্ল্যাটফর্মে বুকিং অপশন খুলতেই ‘গুপ্তধন’ খুঁজতে নেমে পড়ল আপামর বাঙালি। ধ্রুব বন্দোপাধ্যায়ের আসন্ন ছবি ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ ছবির একদিনে বিক্রি হল কুড়ি হাজারটি টিকিট, বাংলা ছবির দুনিয়ায় যা বিরল– এমনটাই দাবি ছবিটির প্রযোজনা সংস্থার। দুই সুপারস্টার প্রসেনজিৎ-দেবের ছবি ‘কাছের মানুষ’-এর থেকেও অগ্রিম বুকিংয়ের নিরিখে এগিয়ে থাকল সোনাদা-আবির-ঝিনুকেরা। প্রযোজনা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ৭৫টি হলে মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। মোট শো-য়ের সংখ্যা দিনপ্রতি প্রায় ২০০-র কাছাকাছি।
আপ্লুত পরিচালক ধ্রুব। টিভিনাইন বাংলাকে বললেন, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য এর থেকে ভাল খবর আর কী বা হতে পারে! ‘বিক্রম বেধা’ অথবা ‘পিএস-১’-এর মতো ছবি আমাদের সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে। সেখানে কর্ণসুবর্ণের বুকিং ‘বিক্রম বেধা’র থেকে প্রায় দশ গুণ বেশি রয়েছে।” গর্বের সুর ধ্রুবর গলায়। যোগ করলেন, “উৎসবে মরসুমেও প্রতিটি এক্সিবিটার বম্বের হেডঅফিসে বুক ঠুকে বলতে পারছে বাংলা ছবিকে আমরা হিন্দি ছবির সমকক্ষ শো দিতে চাই অথবা প্রয়োজনে একটি শো বেশি দিতে চাই, এটাই তো প্রাপ্তি।” কিন্তু একটি বাংলা ছবির হাত ধরে কি টলিউড সত্যিই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? একই দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিশন এভারেস্ট’, ‘কাছের মানুষ’ অথবা ‘বৌদি ক্যান্টিন’ নিয়ে কী বলবেন ‘কর্ণসুবর্ণ…’-এর পরিচালক? ধ্রুবর কথায়, “পুজোর মধ্যে একবার যদি বাঙালি প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছে যান তবে তাঁরা বাকি ছবিগুলিও দেখবেন। হিন্দি ছবির আগে বাংলা ছবিগুলিকেই এগিয়ে রাখবেন বলে আমার ধারণা। আর বিশ্বাস করুন বাকি ছবিগুলি মানুষ দেখতে এলেও আমি ততটাই খুশি হব। কারণ আমার মতে একটি ইন্ডাস্ট্রি সবাইকে নিয়েই শুধুমাত্র এগোতে পারে।”
একদিকে যখন পরিচালকের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর, তখন অন্যদিকে কলকাতার দুই ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গল স্ক্রিন প্রিয়া ও নবীনায় কিন্তু এই ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত টিভিনাইন বাংলাকে জানান, ওই হলে পুজোর মরসুমে দেখানো হবে ‘কাছের মানুষ’ ও মিশন এভারেস্ট। কিন্তু কেন? কেন ব্রাত্য সোনাদা-রা? উঠে আসছে মাসখানেক আগের এক প্রসঙ্গ। সে সময় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মুক্তি পেয়েছিল। অরিজিতের অভিযোগ ছিল আলিয়া-রণবীরের ওই ছবির বাংলায় ডিস্ট্রিবিউটার (একই সঙ্গে কর্ণসুবর্ণের প্রযোজনা সংস্থা) এসভিএফ নাকি বাংলা ছবিকে সরিয়ে সেখানে ব্রহ্মাস্ত্রের অল শো চালাতে বলছেন। একই সুর ছিল নবীনা সিনেমা হলের কর্ণধার নবীন চৌখানির গলাতেও। সে জল গড়িয়েছিল অনেক দূর। অরিজিৎ দত্তের কথার জবাব দিয়েছিল এসভিএফের অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনিও। সেই কারণেই কি এসভিএফ প্রযোজিত ছবি ব্রাত্য ওই দুই সিনেমা হলে, সে সম্ভাবনাই উঠে আসছে। সে যাই হোক, আপাতত হাতে আর কয়েক ঘণ্টা। এরপরেই সোনাদা আবার দর্শকের দরবারে। ছবি মুক্তি পাওয়ার পরও কি টিকিট বুকিংয়ের এই অবিশ্বাস্য ট্রেন্ড ধরে রাখতে পারে ছবিটি? উত্তর দেবে সময়।