Riddhi Sen: নিজের স্কুলের অনুষ্ঠান বিচার করতে গিয়ে নিদারুণ অনুভূতি অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের; রইল তাঁর খোলা চিঠি

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Jan 24, 2023 | 5:01 PM

Riddhi Sen School: নিজের স্কুলে গিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন ঋদ্ধি। স্কুলের অন্দরের ছবি, ক্লাস রুমের ছবি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন ঋদ্ধি।

Riddhi Sen: নিজের স্কুলের অনুষ্ঠান বিচার করতে গিয়ে নিদারুণ অনুভূতি অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের; রইল তাঁর খোলা চিঠি
ঋদ্ধি সেন।

Follow Us

সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়তেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। অনেকগুলো বছর পর ফের ফিরে গেলেন স্কুলে। তাঁকে বার্ষিক অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্কুলে গিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন ঋদ্ধি। স্কুলের অন্দরের ছবি, ক্লাস রুমের ছবি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন ঋদ্ধি। সেই সঙ্গে তাঁর খোলা চিঠি।

ঋদ্ধির খোলা চিঠি:

কিছুদিন আগে আমার স্কুলের অ্যানুয়াল ডের উৎসবের একটা অংশ বিচার করার জন্য আমায় ডাকা হয়। স্কুলের সঙ্গে বিচারক বা জজিংয়ের মতো শব্দ শুনলেই কীরকম একটা অস্বস্তি বোধ হয়। স্কুল থেকে কোনও ফোন এলেই বয়েসের হিসেবটা হঠাৎ করে ঘেঁটে যায়। কীরকম মনে হয় নিমেষে আয়তনে ছোট হয় গিয়েছি। ভারী লাগে ‘বিচারকের’ মতো শব্দগুলো। তাও সাউথ পয়েন্ট জুনিয়র স্কুলের ওই নীল সাদা বিল্ডিংটায় যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। গরমের ছুটি শেষ হওয়ার পর মা বা বাবার হাত ধরে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ টলটল করে উঠত জলে। ছুটির পর স্কুল খুললে কার ভাল লাগে?

স্কুলে নিজের ফেলে আসা ক্লাসরুমে ঋদ্ধি।

আমি তখন মা-বাবার সঙ্গে একটা অদ্ভুত চুক্তি করতাম স্কুলে ঢোকার জন্য। তাঁরা যেন স্কুলের উল্টোদিকে ফুটপাথের একটা গাছতলার নীচে আমার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকে স্কুল শেষ হওয়া পর্যন্ত। এই কিম্ভূত চুক্তিপত্রের সই ছিল দু’গালে দুটো চুমু আর মিথ্যে জেনেও তাদের এই কথায় সম্মতি জানানোর ওপর এক সরল বিশ্বাস। এ এক অদ্ভুত অন্ধ নির্ভরশীলতা। যে যাই হোক না কেন, তাঁরা মনের গাছতলাটাতে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকবে। ছাতা হয়ে বা ছায়ার মতো। এখন স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে চোখের অবস্থা আবার শোচনীয়। তবে এখন কারণ অন্য। এখন এক অনন্ত গরমের ছুটি চলছে। শীতের ছুটি শেষ হচ্ছে না, বর্ষাকালে গলির জলটা জমেই আছে। অনেক কষ্টে এই ভাবনা পেরিয়ে এগোতেই দেখতে পেলাম চেনা মুখ। প্রথম দিন স্কুলে ঢুকে যে মুখটাকে প্রথম চিনেছিলাম, প্রথম প্রিন্সিপাল, মধু কোহলি ম্যাম। নার্সারিতে পড়াকালীন আমায় প্রথমবার প্রিন্সিপাল রুমে ডাকা হয়। তখন দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, খুব দুষ্টুমি করার সর্বোচ্চ শাস্তি মেলে প্রিন্সিপাল রুমে। কিছু স্মৃতিতে মরচে ধরে না। স্পষ্ট মনে আছে, হাত-পা ভয় কনকনে ঠান্ডা, গুটি-গুটি পায়ে রিসেপশন দিয়ে নেমে এগিয়ে যাচ্ছি প্রিন্সিপাল রুমের দিকে। করিডোরের নিস্তব্ধতাটা প্ৰায় ভূতের সিনেমার ‘জাম্প স্কেয়ার’-এর আগের নিস্তব্ধতার মতোই অস্বস্তিকর। দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখি এক সম্পূর্ণ অন্য চিত্র। কোহলি ম্যাম একগাল হেসে বসে আছেন। আমার দিকে এগিয়ে দিলেন একটা চকোলেটের বাক্স। আমি ভয় এবং হতভম্ব মেশানো এক অনুভূতি নিয়ে তুলে নিলাম একটা চকলেট। বুঝলাম যে প্রিন্সিপাল বন্ধুও হতে পারেন। ওনার জন্যই আমাদের স্কুলে শুরু হয়েছিল ‘অ্য়াক্টিভিটি ক্লাব’। প্রতি শনিবার নিয়ম করে শেখান হত থিয়েটার, গান , বাজনা, নাচ, ছবি আঁকা। ওনাকে এতদিন পরে দেখে কোনও বদল চোখে পড়ল না। কী অদ্ভুত! এতদিন পরেও ওনার হাসি আর জানলার আকার অনুকরণ করে করিডোরে পড়ে থাকা শীতকালের রোদটা এখনও একইরকম মিষ্টি। দু’জনের কেউই বুড় হয়ে যায়নি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওনার কাছে থেকে অনুমতি নিলাম একবার বিল্ডিংটা ঘুরে দেখার।

মধু কোহলি ম্যামের সঙ্গে ঋদ্ধি।

উনি বললেন, এতে অনুমতি নেওয়ার কী আছে? আমি যখন খুশি ঘুরে দেখতে পারি, এটা তো আমারই স্কুল। কী জানি, এটা আমার প্রয়োজনের থেকে বেশি নম্রতা নয়। স্কুলে অনুমতি নেওয়া বা পাওয়ার এক অদ্ভুত আনন্দ আছে। পাঁচতলা থেকে নামতে শুরু করলাম। ক্লাস ফাইভ থেকে নার্সরি ১, আক্ষরিক অর্থে ‘ডাউন দ্য মেমরি লেন’। ‘অক্সফোর্ড রিডিং সার্কেল’-এ পড়া জেরম কে জেরমের ‘থ্রি মেন ইন অ্যা বোট’ থেকে নেমে ‘সহজ পাঠ’ থেকে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ থেকে ‘মাই হ্যান্ডরাইটিং বুক’/’ওয়ার্ড পারফেক্ট স্পেলিং’ হয়ে সোজা একেবারে সেই ঘরে, যেখানে প্রথম শব্দ বলতে শেখা। বেঞ্চের আয়তন ছোট হতে-হতে গেছে, তার সঙ্গে ছোট হয়েছে নিজের অকারণ অহংকার আর ঠুঁটো কনফিডেন্স।
বেঞ্চগুলোতে বসলে এখন আর পা আটে না। তবে ক্লাসরুমে নিজেকে বেমানান লাগল না একদম। এটা কি শুধুমাত্র এক অকারণ নস্টালজিয়ায় ভোগা? সামনের দিকে এগোনোর বয়েসে বারবার এই পিছনের দিকে তাকানোর অর্থ কী? এটা কি শুধুই নিছক স্মৃতিচারণা? হয়তো এর কোনও সঠিক উত্তর নেই। তবে পিছনে তাকানোর অর্থ হয়তো বারবার সেই স্কুলের প্রথমবার ‘জানার’ বা ‘শেখার’ সরল আনন্দকে আঁকড়ে ধরতে চাওয়া। যা আমরা হারিয়ে ফেলি এবং ফেলছি খুব সহজেই। আমরা আর অবাক হই না একটা বয়সের পরে। আমাদের অবাক হওয়া এখন ‘অসাম’ বলার মতই সহজ। যেখানে কোনও সত্যিকারের ‘awe’ নেই। স্কুল কলেজের পাঠ শেষ হওয়ার পরেই আমরা শেখা বন্ধ করে দিই। তবে এখনও সব শিক্ষা একদিন সম্পূর্ণ বৃথা হবে জেনেও শেখার থেকে বড় আনন্দ, আশ্চর্য আর ম্যাজিক কিছুতে নেই। তাই শেখার সেই জন্মস্থানের কাছে বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। এমন একটা সময় আমরা পেয়েছি যে সময় ভয় গ্রাস করেনি আমাদের। ফ্রাঙ্ক ফুরহেদির ভাষায় এটা ‘কালচার অফ ফিয়ার’এর সময়। আমেরিকায় বহু মা-বাবারা একটা গোটা সময় বাচ্চাদের রোদ্দুরে খেলতে দিত না। কারণ তখন বলা হয়েছিল রোদ্দুর বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকারক। হয়তো আর কিছু বছর পর বাচ্চারা ‘রেইনি ডে’তে স্কুল থেকে জল ভরা জুতো পায়ে কাদা মেখে বাড়ি ফেরার আনন্দ অনুভব করতে পারবে না। হয়তো বৃষ্টি হয়ে যাবে ‘অ্যাসিড রেইন’। উন্নয়নের সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের জোর করে ভয় পেতে হবে ‘স্বাভাবিককে’। করোনা ভাইরাল এসে বহু বাচ্চার প্রথম স্কুলে পা রাখার অনুভূতি নষ্ট করে দিয়েছে। মাস্ক আর স্যানিটাইজ়ারের জন্য প্রত্যেকটা ক্লাসরুমের নিজস্ব গন্ধ তারা চেনে না। বন্ধুদের কাঁধ ধরে লাইন করে অ্যাসেম্বলি হলে যাওয়া হয় না তাদের। বাড়ছে কম্পিটিশন। হারিয়ে যাচ্ছে এক সুস্থ স্বাভাবিক শৈশব। ফুলে ফেঁপে উঠছে ভয়ের ব্যবসা। তাই জন্যই হয়তো এই বোকা নস্টালজিয়া, যা মনে করিয়ে দেয় শিক্ষার/পরীক্ষার আসল রেজ়াল্ট। এক ভয়হীন সরল মন।

Next Article