Bengali Movie: পপকর্ন বেশি বিক্রি হবে বলে দু’ঘন্টার সিনেমার মাঝে আধ ঘণ্টার ইন্টারভ্যাল দিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

স্বরলিপি ভট্টাচার্য |

Oct 09, 2021 | 12:27 PM

Saswata Chatterjee: আগামী ১০ অক্টোবর জলসা মুভিস-এ মুক্তি পেতে চলেছে দেব প্রযোজিত অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’। বোম্বাগড়ের রাজা হবুচন্দ্র অর্থাৎ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এই ছবির জার্নি নিয়ে অকপট আড্ডা দিলেন TV9 বাংলার সঙ্গে।

Bengali Movie: পপকর্ন বেশি বিক্রি হবে বলে দু’ঘন্টার সিনেমার মাঝে আধ ঘণ্টার ইন্টারভ্যাল দিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

Follow Us

১) ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’র মতো রূপকথার গল্পের আধারে ছবি অনেকদিন পরে বাংলায় হচ্ছে। যখন অফার এল, প্রথম কী মনে হয়েছিল?

ছোটবেলায় যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, আসলে এই ধরনের গল্প তো আমরা ঘুমোতে যাওয়ার সময় শুনতাম। এগুলো বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি গল্প ছিল। শুতে যাওয়ার সময় একটা স্বপ্ন থাকত। কেমন হবে রাজারানি, রাজত্ব… এত বছর বয়সে এসে সেই স্বপ্নের চরিত্র হয়ে ওঠার সুযোগ হল।

২) স্বপ্নের চরিত্র হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কেমন ছিল?

স্ক্রিপ্ট পড়ে বা শুনে চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারণা হয়, লোকটা কেমন হতে পারে। এক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছিল। স্ক্রিপ্ট পড়ে ধারণা হয়েছিল রাজার চরিত্র কেমন হতে পারে। খুব অমায়িক, ভাল মনের মানুষ, যে প্রজাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে কথা বলে। রানি সমেত রাস্তায় নেমে খোঁজ খবর নেয়। শুধু পোশাকে বা হাঁটা চলায় সে রাজা। এমনিতে প্রজাদের ভাল রাখাটা তার লক্ষ্য। নিজে টাকা রোজগার করাটা লক্ষ্য নয়। কে কত রাজস্ব দান করল, সেটা লক্ষ্য নয়। তার রাজ্যের প্রজারা যেন সুখে থাকে, সেটাই লক্ষ্য।

৩) বাস্তবে যে রাজাদের রাজত্বে রয়েছি আমরা, কেন্দ্র হোক বা রাজ্যে সেই রাজাদের সঙ্গে হবু রাজার কোনও মিল রয়েছে?

না! এখন তো পরিস্থিতি, সমাজ, মানুষ সব পাল্টে গিয়েছে। এখন তো মানুষ অল্পে সন্তুষ্ট নয়। এই মুহূর্তে সমাজে অস্থিরতা এত বেশি, গত দু’-তিন বছরে কোভিড সিচুয়েশনে থাকতে-থাকতে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছে মানুষ। অল্পেই সকলে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেটা পরিস্থিতির দোষ। কেউ তো খারাপ হয়ে জন্মায় না। বদমেজাজি হয়ে জন্মায় না। পরিস্থিতি অনেক সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে দেয় না। এখন তেমন একটা অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সেটা সত্যি। আর এরা তো রূপকথার চরিত্র। বাস্তব আর রূপকথা তো এক হয় না।

৪) যে গল্পগুলো নিজের ছোটবেলায় শুনেছিলেন, সেগুলো মেয়েকে ছোটবেলায় শোনানোর সুযোগ হয়েছিল?

একেবারেই না। ওরা অন্য লেভেলে বড় হয়েছে। ওদের ছোটা ভীম বা পোকেমন। আর একটু বড় হলে হ্যারি পটার। এই ছবির থ্রু দিয়ে যদি ইন্টারেস্ট পায়, তা হলে বইগুলো তো আছেই। প্রথমে তো ইন্টারেস্ট জন্মাতে হবে। ওরা যেটা দেখে, পড়ে বা শুনে বড় হচ্ছে, সেটা তো অন্য জিনিস। তার একটা কারণ হচ্ছে, আমরা এই গল্পগুলো ঠাকুরদাদা, ঠাকুমার কাছ থেকে শুনতাম। মা, বাবার কাছ থেকে শুনতাম না। এখন বেশিরভাগ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। কম জয়েন্ট ফ্যামিলি। সেখানে হতে পারে। আমার জানা নেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের ছেলেমেয়েদের সুযোগ থাকলে বাংলা মিডিয়ামে পড়াই না তো। দোষ তো আমাদের, তাদের নয়। এরা কেউ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসই তো পড়ল না, খুব কম পড়েছে।

৫) ছন্দ মিলিয়ে বলা ডায়লগ এই ছবির। কঠিন ছিল কি?

কঠিন ছিল। কারণ সকলের পক্ষে দুম করে বানিয়ে বলা তো সম্ভব নয়। তার থেকেও বেশি কঠিন ছিল, যে ভাষায় আমরা কথা বলেছি, সে ভাষায় আমরা নিজেরা আজকাল কথা বলি না। ফলে অভিনেতার পক্ষে প্রচণ্ড কঠিন ছিল। রিহার্সাল করে করেছি আমরা। রিহার্সাল করে মুখস্থ নয়, আত্মস্থ করা। মুখস্থ করলে শুধু মুখস্থ করা হবে। আত্মস্থ করলে অভিনয়টা হবে। এই যে শব্দটা বলছি, আত্মস্থ, এখন এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করি না তো আমরা। আমরা ভাগ্যবান, যে কয়েকজন আছি, হয়তো পুরনো বাংলাটা জানি। এখনও ভুলে যাইনি।

৬) ভাল অভিনেতাদের সমাহার। আপনার পারফরম্যান্স আরও ভাল করার পথ তৈরি করে আগেও বলেছেন। এ ছবিতেও কি তাই হয়েছিল?

অবশ্যই। উল্টো দিকে ভাল অভিনেতারা থাকলে খুবই হেল্প হয়। যাঁরা সত্যিই ভাল অভিনয় করতে চান, তাঁদের হেল্প হয়। শুভাশিসদার কথা বলব। ওঁকে এই ধরনের চরিত্রে আগে কেউ দেখেননি। কী অসাধারণ অভিনয় করেছেন, ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন। শুভাশিসদাকে দু’-একটা ছবি বাদ দিলে যে ভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহার করেছে, সেটা তো একটা টাইপের। সেটার বাইরে গিয়ে শুভাশিসদা কত বড় মাপের অভিনেতা, সেটা সম্ভবত ‘হারবার্ট’-এর পর আবার প্রমাণ হল।

৭) অভিনেতাদের টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কি কিছুটা বদলেছে এখন?

এটা আমি ‘না’ বলতে পারছি কি না, তার উপর নির্ভর করে। সকলের না বলার সুযোগ ছিল না। যে সময় শুভাশিসদা কমেডিয়ান হিসেবে হিট করে গিয়েছিলেন, পর পর এত ছবি এসে গিয়েছিল, তাঁকে করতে হয়েছে। কেন তখন না বলবেন? সেটাই হয়তো পরোক্ষে ওঁকে টাইপকাস্ট করতে হেল্প করেছিল। কোনও একটা জায়গায় গিয়ে ‘না’ তো বলতে হবে। সব সময় আমাদের পক্ষেও সম্ভব হয় না। অভিনেতা আমরা। যে ধরনের চরিত্র আসবে, করব। সেটাই আমার কাজ। অনেক ক্ষেত্রে না বললে সুবিধে হয়, আমি দেখেছি। যখন প্রথম ‘কহানি’ হয়, তার চার বছর পরে ‘জগ্গা জসুস’ করেছি। তার মানে চার বছরে অফার আসেনি, তা তো নয়। সেগুলোকে ‘না’ করেছিলাম। কোনও না কোনও বাহানা দিয়ে ‘না’ বলেছিলাম। আমার পছন্দ হয়নি। কখনও একই ধরনের চরিত্র এসেছিল। সেই সিরিয়াল কিলার। কখনও স্ত্রিপ্ট এত খারাপ, আমি পড়ে উঠতে পারিনি। আমার বাবা একটা কথা বলতেন, ‘ইউ শুড নো হোয়েন অ্যান্ড হোয়ার টু সে নো।’ আমি ‘না’ বলে জীবনে অনেক সুবিধে পেয়েছি। আমি হয়তো বলতে পেরেছি। সকলের পক্ষে বলা হয়তো সম্ভব হয় না।

৮) সিনেমা হলের জন্য তৈরি করা ছবি টেলিভিশনে দেখা যাবে, এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন?

আমার মনে হয় এই সময়ে এত বড়-বড় ছবি রিলিজ় করবে, এই সিদ্ধান্ত একদিক থেকে ভাল হয়েছে। টেলিভিশনে দেখে যদি এই ছবিটা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়, হয়তো দিওয়ালিতে রিলিজ় করল, কে বলতে পারে?

৯) তেমন সম্ভবনা রয়েছে?

সেরকম সম্ভবনা থাকলে আমি খুশি হব। এটুকু বলতে পারি। এতগুলো ছবি একদিনে রিলিজ় করছে, যদি হবুচন্দ্র রিলিজ় করত, তা হলে আমার নিজেরই দু’টো ছবি রিলিজ় করত। আমি এই লড়াইয়ে বিশ্বাসী নই। এমনিতেই বাংলা ছবির মার্কেট অনেক ছোট। সেখানে একে-অপরের সঙ্গে লড়াই করতে আমার মন চায় না। প্রত্যেককে জায়গা দেওয়া উচিত, যাতে প্রত্যেকের ছবি মানুষ দেখে। তাহলেই ইন্ডাস্ট্রি বাড়বে। লড়াই করে একে মেরে, তাকে মেরে আমি লং রানে বাঁচতে পারব না। এটা আমি বিশ্বাস করি। এই ভিড়ের মধ্যে রিলিজ় করছে না। এটা ভাল। আমার মনে হয় টেলিভিশনে দেখে এটা বড় পর্দায় দেখার ইচ্ছে জাগবে। তখন যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ইচ্ছে প্রকাশ করেন, আমার মনে হয় দেব সে ধরনের প্রোডিউসার, যে একটা রি-রিলিজ়ের চেষ্টা করবে।

১০) বড়পর্দায় দেখার ছবি ব্যবসায়িক কারণেই টেলিভিশন রিলিজ় হচ্ছে। কিন্তু এটাই যদি ট্রেন্ড হয়ে যায়, সিনেমা হলের সঙ্গে যুক্ত পেশাদাররা ক্ষতির মুখে পড়বেন না?

এখানে কথা হচ্ছে, হল বলতে তো আমরা সিঙ্গল স্ক্রিনকে ভুলেই গিয়েছি। এখন তো মাল্টিপ্লেক্স। মাল্টিপ্লেক্সে যে সিস্টেমে সিনেমা চালানো হয়, যে টাকাটা চার্জ করা হয়, সেটা কি সিনেমার পক্ষে ভাল? বোধহয় নয়। পপকর্ন কিনে, টিকিট কেটে, গাড়ি পার্কিংয়ের চার্জ দিয়ে মাথাপিছু হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে। এটা কি আমাদের বাবা-কাকাদের ফেস করতে হয়েছে? হয়নি। সিনেমা বাঁচলে তবে সিনেমা হল বাঁচবে, তবে হলের সঙ্গে লোক বাঁচবে। আগে সকলের উচিত সিনেমাটা বাঁচানো। দু’ঘন্টার সিনেমার মাঝে আধ ঘণ্টার ইন্টারভ্যাল দিচ্ছে। কেন? পপকর্ন বেশি বিক্রি হবে। আর দু’ঘণ্টা এক মিনিট হয়ে গেলে তিন ঘণ্টার গাড়ি পার্কিয়ের চার্জ দিতে হবে। এটা কি সিনেমার পক্ষে ভাল? সিনেমা বাঁচলে তাঁরা বাঁচবেন, এটুকু যেন তাঁরা মাথায় রাখেন।

অলঙ্করণ অভীক দেবনাথ।

আরও পড়ুন, Bengali Movie: ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ দেখে নতুন প্রজন্ম বাংলা রূপকথার সঙ্গে পরিচিত হবে: অর্পিতা

আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: অনুপম, ইমন, রূপঙ্কর, লগ্নজিতার ঘরে ফেরার গান

Next Article