Bengali Movie: ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ দেখে নতুন প্রজন্ম বাংলা রূপকথার সঙ্গে পরিচিত হবে: অর্পিতা

Arpita Chatterjee: আগামী ১০ অক্টোবর জলসা মুভিস-এ মুক্তি পেতে চলেছে দেব প্রযোজিত অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’। বোম্বাগড়ের রানি কুসুমকলি অর্থাৎ অর্পিতা এই ছবির জার্নি নিয়ে অকপট আড্ডা দিলেন TV9 বাংলার সঙ্গে।

Bengali Movie: ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ দেখে নতুন প্রজন্ম বাংলা রূপকথার সঙ্গে পরিচিত হবে: অর্পিতা
Follow Us:
| Updated on: Oct 08, 2021 | 3:35 PM

১) ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ কি কোথাও ডাউন মেমরি লেনের সফর ছিল?

না। সত্যি বলতে, ছবিটা যখন করতে শুরু করি, এটা আমার প্রথম ফিলিং ছিল না। বরং এটা করতে গিয়ে যেটা মনে হয়েছিল, আমাদের এখনকার জেনারেশন, ইয়ং স্টারস, কিডস… তারা বাংলা রূপকথা সম্পর্কে জানে না। তারা অনেক বেশি ইন্টারন্যাশনাল ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে খবর রাখে। যেখানে পোকেমন আছে বা ইন্ডিয়ান হলেও ছোটা ভীম বা ওই জাতীয় কিছু। কিন্তু বাংলায় রূপকথার জগৎ কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই নেই। এই ছবিটা করতে গিয়ে মনে হয়েছিল, বাংলা ভাষার রূপকথার সঙ্গে ওরা পরিচিত হবে।

২) আপনি বেছে কাজ করতে পছন্দ করেন। এই চরিত্রটা আপনার পছন্দ হয়েছিল কেন? কী ভাবে এই চরিত্র আপনার কেরিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে হয়েছিল?

কেরিয়ারের কথা ভেবে যে আমি ছবিটাতে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম, তা কিন্তু নয়। আমার মনে হয়েছিল এমন একটা কাজ, এমন একটা ফর্ম্যাট, রূপকথা, রাজা-রানি নিয়ে কাজ এবং যে কাজটার সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের বহু-বহু পুরনো কাজের কোথাও হলেও একটা মিল আছে, সে রকম একটা কাজ যে হচ্ছে বাংলা ভাষায়, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে, সেটা একটা দৃষ্টান্তমূলক কাজ বলে আমার মনে হয়েছিল। এই কাজটার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটাই ছিল রাজি হওয়ার প্রথম কারণ।

Arpita-web-inside-1

৩) এই ছবিতে ছন্দ মিলিয়ে সংলাপ বলা হয়েছে। সেটা অন্যরকম। সংলাপের এই ধরন আপনার কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল?

খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ অন্য ছবিতে আমরা যখন সংলাপ বলি, তখন মানেটা বুঝে নিয়ে নিজের মতো করে আমরা ডেলিভার করি। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ছন্দ, নির্দিষ্ট ফোনেটিক ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা থেকে নিজের মতো করে করার কোনও অবকাশই নেই। ফলে প্রত্যেকটা শব্দ, প্রত্যেকটা দাঁড়ি, কমা মুখস্থ করে আমাদের বলতে হয়েছে। সেটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আই ওয়াজ় অ্যাবসোলিউটলি রেডি টু টেক আপ দ্য চ্যালেঞ্জ। সেটা সম্ভবত শেষবার ‘হীরক রাজার দেশে’তে দেখেছি। ছন্দ মিলিয়ে একটা পুরো ছবি, স্ক্রিন প্লে, ডায়লগ হতে পারে, সেটা আমাদের একজন বিশ্ববিখ্যাত কিংবদন্তী দেখিয়ে গিয়েছেন। তারপরে এমন সাহস নিয়ে একটা জিনিস চেষ্টা করা, তার জন্য হ্যাটস অফ টু মাই ডিরেক্টর অনিকেত চট্টোপাধ্যায়।

৪) সব কাজের জন্য আলাদা প্রস্তুতি থাকে আপনার। এই ছবির জন্য নিজেকে কী ভাবে তৈরি করেছিলেন?

যেহেতু পরিচালক একেবারে আলাদা একটা প্যাটার্ন ফলো করেছেন, সেহেতু অনেকবার করে পড়তে হয়েছিল। ইন্টার্নালাইজ় করেছিলাম। সেটার পর আমার অভিজ্ঞতা থেকে যেটা বুঝেছিলাম, কোনও বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে রিলেট করা উচিত হবে না। একেবারে রূপকথার চরিত্র, রূপকথার জগৎ, লার্জার দ্যান লাইফ ওয়ার্ল্ড। সেখানে আমাদের চেনা-জানা চরিত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া যাবে না। বরং ডায়লগগুলো ইন্টার্নালাইজ় করে নিজেকে একটা চরিত্র করে তোলার চেষ্টা করেছি। এটার কোনও ভিস্যুয়াল রেফারেন্স ছিল না আমার কাছে। বহু-বহু বছর এমন কাজ হয়নি। ওয়েস্টার্ন ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড থেকে ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড একেবারে আলাদা।

Arpita-web-inside-2

৫) ফ্রেমে অন্য একজন দারুণ পারফর্মার থাকলে, পারফরম্যান্স আরও ভাল হয়। এই ছবিতে রাজা, মন্ত্রী-সহ অসাধারণ অভিনেতাদের সমাহার। কার সঙ্গে অভিনয় করাটা কঠিন ছিল?

কঠিন আমার কখনও মনে হয় না। সব সময় আমার মনে হয় ভাল অভিনেতা, অভিনেত্রীরা থাকলে আমার কাজটা করতে অনেক সুবিধে হয়। কারণ সিনেমা তো ‘মাই নেম ইজ জান’-এর মতো একটা সোলো মিউজ়িক্যাল, একটা সোলো পারফরম্যান্স নয়। ইটস আ কালেক্টিভ ওয়ার্ক। সেখানে শুধু আমি ভাল অভিনয় করলাম। অন্য দিকের লোকটা ততটা ভাল করল না, তা হলে কিন্তু সিনটা ততটা ভাল হবে না। আমি সত্যিই ভাগ্যবান অপু (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) বা খরাজদা, শুভাশিসদা… এরা অসম্ভব বড় মাপের অভিনেতা। আমি তো বলব, অভিনেতা হিসেবে যতটা সম্ভবনা এদের আছে, বাংলা সিনেমা এখনও ততটা এক্সপ্লোর করতে পারেনি। এদের আরও অনেক দেওয়ার আছে। এমন বড় জাতের, বড় মাপের অভিনেতারা যখন থাকেন, তখন ভয়ের কারণ হয় না। আরও ভাল করার ইচ্ছেটা বেড়ে যায়। প্রত্যেকটা মুহূর্তে ওদের দেখে শিখি। সেটা নিজের কাজে ইনকর্পোরেট করার চেষ্টা করি। ওদের দেখে আরও ইন্সপায়ার্ড হই। সেটা আমাকে আরও সাহায্য করে।

৬) প্রযোজক দেবকে কেমন দেখলেন?

প্রথম কথা হল, প্রযোজক বা প্রোডিউসার শব্দটা দুর্ভাগ্যবশত আমরা একটু অন্য ভাবে ব্যবহার করি। আমরা ফাইনান্সার আর প্রোডিউসার—এই দু’টোকে গুলিয়ে ফেলি। প্রযোজক মানে আমরা ভাবি, টাকা দিচ্ছে, দ্যাটস ইট। আসলে সেটা প্রযোজকের সংজ্ঞা নয়। প্রযোজক মানে যিনি প্রযোজনা করছেন, যিনি ক্রিয়েটিভলি, প্যাশনেটলি পুরো কনটেন্টের মধ্যে ইনভলভ থাকছেন, ভ্যালু অ্যাড করছেন, কন্ট্রিবিউট করছেন এবং সেটা সফল করার জন্য সব কিছু করছেন। প্রযোজকের নিজের ভিশন থাকে। আর ফাইনান্সার যিনি টাকা দিচ্ছেন। দেব সেই সব প্রযোজকদের মধ্যে একজন, যে প্রযোজক সংজ্ঞাটার সঠিক মানে জানে। প্রথম দিন থেকে শুরু করে ও ভ্যালু অ্যাড করেছে, ডিরেক্টরের ভিশন, ওর ভিশন যাতে সফল হয়, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছে।

৭) এত বড় মাপের ছবি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে না, এটার পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিক কী কী বলে আপনার মনে হয়?

নেগেটিভ দিক হল বড় স্ক্রিনে এই গ্র্যাঞ্জারটা দেখার যে অভিজ্ঞতা দর্শকের হত, সেটা কম্প্রোমাইজ়ড হবে। এটা একমাত্র নেগেটিভ দিক। বাকি সব কিছুই পজ়িটিভ। একটা সিনেমা কতগুলো সিনেমা হলে রিলিজ় করলে কতজন লোকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, সেটা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। আবার আমি বলব, একটা স্যাটেলাইট, যেটা বলা হচ্ছে, বাংলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল, টিভি চ্যানেল, তার যত লক্ষ, যত হাজার সাবস্ক্রাইবার, সেটা এক মুহূর্তের মধ্যে কত সংখ্যক লোকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে…। সিনেমার একমাত্র উদ্দেশ্য় যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে, দর্শকের কাছে পৌঁছনো। আর কিন্তু সিনেমার অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। সেটা যদি দেখি, কোনও একটা নির্দিষ্ট চ্য়ানেলে টেলিকাস্ট হওয়ায় অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এখনও সিনেমা হলে ৫০ শতাংশ অক্য়ুপেন্সি। ফলে আমি মনে করি স্যাটেলাইটে রিলিজ়ের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্র্যাকটিক্যাল, লজিক্যাল, ওয়াইজ় ডিসিশন। অল্প কম্প্রোমাইজ় করে অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। শিশু হোক বা মধ্যবয়স্ক… এত বড় রেঞ্জের মানুষ এই ছবিটার সঙ্গে নিজের মতো করে কানেক্ট করতে পারবে। বাচ্চারা তো একা-একা সিনেমা দেখতে যেতে পারে না। কাউকে নিয়ে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা সিনেমা হলে নিয়ে যেতে ততটা কমফর্টেবল নন। করোনা এখনও রয়েছে। আমি অন্তত চাইব, আমার ছেলে বাড়িতে বসেই সিনেমা দেখুক। শুধু সিনেমা হলে রিলিজ় করলে হয়তো কোথাও বাচ্চাদের, ওই গ্রুপ অব অডিয়েন্সকে মিস করতাম। বাড়িতে সেফ এনভায়রনমেন্টে অন্তত তারা দেখতে পারবে।

Arpita-web-inside-4

৮) দর্শককে সিনেমা হলমুখী করার যে প্রয়াস গোটা ইন্ডাস্ট্রি নিচ্ছে, সেখানে এই ছবি টেলিভিশনে মুক্তি পাওয়ায় অন্যান্য প্রযোজকও যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে সিনেমা হলের সঙ্গে যুক্ত পেশাদারদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে আপনি করেন না?

স্যাটেলাইট আর হল রিলিজ়ের মধ্যে আমার কাছে কোনও কনফ্লিক্ট নেই। আমি কী ভাবে দেখি, খুব সহজ ভাবে বলছি। বাড়ির রান্নাঘর আর রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া। প্রতিদিন আমরা বাড়ির রান্নাঘরে রান্না করে খাই। আবার অকেশনালি রেস্তোরাঁয় গিয়েও খাবার খাই। সেটাও দরকার। দু’টোই আমাদের জীবনের অংশ। ফলে সিনেমা হলে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে সিনেমা দেখা, অনেকটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়ার মতো। আর প্রত্যেকদিনের বিনোদনের খিদে মেটায় স্যাটেলাইট। ফলে এই দু’টোর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।

অলঙ্করণ অভীক দেবনাথ।