প্রয়াত সত্যজিতের রায়ের সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমেন্দু রায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে ভুগছিলেন। বুধবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে নিজের বাসভবনেই প্রয়াণ ঘটে তাঁর। সৌমেন্দুর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ টলিউড এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা।
১৯৫৪ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে সৌমেন্দু রায়ের। সত্যজিতের প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’তে সুব্রত মিত্রের সহকারী হিসবে কাজ করেছিলেন সৌমেন্দু। স্বাধীনভাবে সত্যজিতের সঙ্গে কাজ শুরু করেন ১৯৬১ সালে। সেই বছর ঘটনাচক্রে ছিল রবীন্দ্র শতবর্ষও। রবীন্দ্রনাথের উপর তখন তথ্যচিত্র করেছিলেন সত্য়জিৎ রায়। সেই সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিও – ‘তিনকন্যা’। সত্যজিতের সঙ্গে মোট ১৫টি ছবি করেছিলেন সৌমেন্দুবাবু। তৈরি করেছেন শর্ট ফিল্ম এবং তথ্যচিত্রও। কেবল সত্যজিৎ নয়, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদারের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
রূপকলা কেন্দ্রের সিনেম্যাটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান ছিলেন সৌমেন্দু রায়। তাঁর ছাত্র সংখ্যা অগুনতি। সেরকমই এক ছাত্রের নাম সৈকত বিশ্বাস TV9 বাংলাকে বলেছেন, “আধঘণ্টা ৪০ মিনিট আগে মৃত্যু ঘটেছে স্যারের। অনেকখানি বয়স হয়েছিল তাঁর। ৯০ পেরিয়ে গিয়েছিল। শরীরে বয়সজনিত সমস্যা ছিল।”
সৈকত আরও জানিয়েছেন, অবিবাহিত ছিলেন সৌমেন্দু। দাদার পরিবারই ছিল তাঁর সবচেয়ে আপন। ক্যামেরার কাজ, সিনেমার কাজ নিয়েই মেতে থাকতেন। বহু পুরস্কার পেয়েছেন। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। বহুদিন থেকেই নানাবিধ বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। বুধবার বেলা গড়াতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি। রেখে গেলেন সিনেমা নিয়ে তাঁর কাজ। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন সৌমেন্দু। তেমনটাই বলছেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা।
খুব কাছ থেকে সৌমেন্দু রায়কে দেখেছেন উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি আর্কাইভের কর্ণধার অরিন্দম সাহা সর্দার। তিনি বলেন, “সৌমেন্দু রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ২০০৬-০৭ সালে। ওনার ওপরে একটি দীর্ঘ তথ্যচিত্রের জন্য আমি ও কল্যাণ বন্ধু মিত্র ওনার কাছে যাই। সেই সময়ে ওনার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার মাথায় একটা আইডিয়া ডেভালপ করে, ওনাকে নিয়ে একটা আর্কাইভ করলে কেমন হয়! উনি যে সব চলচিত্রে কাজ করেছিলেন সিনেমাটগ্রাফার হিসাবে তার সিডি, ডিভিডি জোগাড় করা শুরু করি। স্যারও এ বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন। এবছরই ২০২৩ এ সেই আর্কাইভ উদ্বোধন হয়। জীবনস্মৃতির একটা ঘরজোড়া ‘সৌমেন্দু সিন্দুক'( আর্কাইভের নাম)। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। সৌমেন্দু রায় তাঁর বাড়ি থেকে ওই আর্কাইভের ঘরের নামপত্রটি উদ্বোধন করেন। সেই ঘরটি আমাদের চলচিত্র তৈরির রান্নাঘর বা এডিটিং রুম।”