শাসকদলের কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায় না। বরং বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধেও (Mamata Banerjee) মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ হেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের (Swastika Mukherjee ) সাম্প্রতিক এক ক্রিয়াকলাপ নেটিজেনদের একটা বড় অংশের প্রতিবাদের কারণ হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উড়ে আসছে ধিক্কার, কেউ আবার দাবি করছেন, ‘স্বস্তিকার মূল্যবোধ বিকিয়ে গিয়েছে’। ঘোষিত বামপন্থী শ্রীলেখা মিত্রও ছুড়ে দিয়েছেন বিদ্রুপ। যদিও স্বস্তিকাও থেমে থাকেননি। পাল্টা উত্তর দিয়েছেন যাবতীয় ট্রোলের। কোথা থেকে, কী নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত? সম্প্রতি রাজ্য সরকার দ্বারা আয়োজিত রেড রোডের পুজো কার্নিভ্যালে হাজির ছিলেন স্বস্তিকা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ‘কুশল বিনিময়’-এর বেশ কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন অভিনেত্রী। লেখেন, “আমাদের সম্মানীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বহু বছর পর কার্নিভ্যালে দেখা হল। কলকাতা পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। সব সময় দিদির এই স্পিরিট ও আগুনে মনোভাবকে ভালবেসেছি। তাঁকে শুভ বিজয়া বলতেই আমায় চকলেট দিয়েছেন”। এরপরেই কার্যত শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। ‘হোক কলরব’-এ অংশ নেওয়া স্বস্তিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে নেট মাধ্যমে ভেসে আসে মন্তব্য, “আপনি ছিলেন প্রতিবাদী মুখের প্রতিনিধি । যে সময়ে এতগুলো মেধাবী ছাত্র ছাত্রী রাস্তায় বসে আছে , সরকারের একের পর এক মন্ত্রী দুর্নীতিতে যুক্ত… তখন আপনার মত ব্যক্তিত্ব ওখানে যাওয়াতে সকল প্রতিবাদী মানুষগুলো বোধ হয় মানসিক ভাবে আহত হলেন ।” অপর এক নেটিজেন লেখেন, “ভীষণ ভাবে অপ্রত্যাশিত,যে বরাবর স্পষ্টভাষী,প্রতিবাদী তাকে দেখে নিরাশ হলাম।”
এ প্রসঙ্গেই যখন চলছে একের পর এক আলোচনা তখন রবিবার প্রায় মধ্যরাতে এ নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন স্বস্তিকা। ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট করলেন তিনি। যে পোস্টের সারমর্ম, কার্নিভ্যালে দেখা হওয়ায় তাঁকে নমস্কার করে বিজয়া জানিয়েছেন নেহাতই ভদ্রতার খাতিরে। ঠিক কী লিখেছেন স্বস্তিকা? তিনি লেখেন, “আমি একটা ক্লাবের সাথে কার্নিভ্যালে গিয়েছিলাম, এই প্রথমবার। ৯৫ টার ও বেশি ক্লাব যেখানে অংশগ্রহণ করেছে, সেই সমস্ত প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুর দেখতে গেছেন, সেই সমস্ত ক্লাব আমাদের রাজ্যের। কালকেও উপচে পরা ভীড় ছিল। রাজ্যের কি খারাপ অবস্থা সেটা ভেবে কেউ বাড়িতে বসে পুজো বয়কট করেনি”।
স্বস্তিকা আরও লেখেন, “সিএম-এর সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁকে নমস্কার করে বিজয়া জানানোটা ভদ্রতা, সৌজন্য। আমায় দুটো চকলেট দেওয়াটা ওনার ইচ্ছে, সেটা খেয়ে নেওয়াটা আমার। চকলেট নিয়েছি ইলেকশন টিকিট নয়, চকলেট খেয়েছি মোটা টাকার ঘুষ নয়।” অভিনেত্রীর দাবি, ভবিষ্যতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হলেও তিনি একই ভাবে নমস্কার করবেন। সাফ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তাই বলে রাজনৈতিক মতোবিরোধিতার সঙ্গে আপস তিনি মোটেও করবেন না। অন্যায় হলে আবারও মুখ খুলবেন। তবে রয়েছে এক ‘কিন্তু’। স্বস্তিকার কথায়, “পৃথিবীর সমস্ত বিষয় নিয়ে আমায় জিহাদ ঘোষনা করতেই হবে নাহলেই আমার মেরুদন্ড ধ্বসে পরবে এমন কোনো দাসখত আমি লিখিনি। আর আমার ধ্যান ধারণা বিবেক বিচার আপনাদের কথায় ওঠা নামা করে না।”
এত ট্রোলিং, এত ধিক্কার– ভবিষ্যতে আবারও যদি দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কী করবেন স্বস্তিকা? তাঁর চাঁচাছোলা জবাব, “আমি আবারও ওনাকে নমস্কার জানাব এবং উনি চকলেট দিলে নেব এবং খাব। অসভ্য হওয়ার জন্য যে শিরদাঁড়াহীনতা লাগে সেটাও আমার নেই। তাই বেশ করেছি।”