Chiranjeet Chakraborty: ‘লোকনাথ বাবাও সুপারস্টার…’ বড় পর্দা মানেই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’, ‘জওয়ান’ মুক্তির আগেই টলিউড নিয়ে চাঁচাছোলা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

Sneha Sengupta |

Sep 06, 2023 | 7:06 PM

Chiranjeet on Tollywood: স্ক্রিন জুড়ে হিরো-ভিলেনের মারামারি, রক্তারক্তি এককথায় নতুন করে ভাবাচ্ছে সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকদের। হিরো কারা? সেই শাহরুখ, সানি, রজনীকান্তরাই।

Chiranjeet Chakraborty: লোকনাথ বাবাও সুপারস্টার... বড় পর্দা মানেই লার্জার দ্যান লাইফ, জওয়ান মুক্তির আগেই টলিউড নিয়ে চাঁচাছোলা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

Follow Us

 

স্নেহা সেনগুপ্ত

‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ বনাম ‘স্মার্ট বাংলা ছবি’ অথবা সহজ কথায় বলতে গেলে শহুরে অডিয়েন্সের জন্য মাল্টিপ্লেক্স মুভি। ‘পাশে’ দাঁড়াতে গিয়ে যেন প্রায়শই হোঁচট খাওয়ার অবস্থা। এই ‘স্মার্ট বাংলা ছবি’র সংজ্ঞাটা ঠিক কী? মননশীল, মার্জিত, রুচিসম্মত দর্শক (পড়ুন শহুরে শিক্ষিত মাল্টিপ্লেক্সে টিকিটের সঙ্গে পপকর্ন, কফি অথবা কোল্ড ড্রিঙ্কস কেনার ক্ষমতা রাখা জনতা)-এর মনের জমিতে পতাকা ওড়ানো। কাব্যিক কথায় গান, ঘুরিয়ে নাক ধরার মতো কঠিন সংলাপ। হিরোর নো ঢিসুম-ঢিসুম। ভিলেনের নো ‘অশ্লীল’ চাউনি অথবা নায়ক বা নায়িকাকে পদে-পদে সমস্যায় ফেলা এক টিপিক্যাল খলনায়ক। চিরঞ্জিতের ‘বউ হারালে বউ পাওয়া যায়’, মিঠুনের ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’ কিংবা পোয়েনজিতের (পড়ুন প্রসেনজিৎ) ‘মা আমি চুরি করিনি’র মতো সংলাপের অভাব। ফলে হলে আর সিটি পড়ে না। পয়সাও ছোড়েন না দর্শক।

বাংলা ছবির ‘ক্যাওড়ামি’ রুখতে গিয়ে শহুরে ‘ক্লাসি’ হয়েছে বিষয়। এবং এমনটা করতে গিয়ে বিপুল মাত্রায় মার খেয়েছে বাংলা সিনেমার বাণিজ্য, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ইন্ডাস্ট্রির একাংশের। বাংলা ছবির আসল দর্শক, অর্থাৎ শহরতলি এবং গ্রামগঞ্জের লোকেদের মাথার উপর দিয়ে অনেকক্ষেত্রেই যেন উড়ে গিয়েছে ‘শিক্ষিত’ চিত্রনাট্য। ঝপঝপ বন্ধ হয়েছে সিঙ্গল স্ক্রিন। দর্শকের পছন্দসই ছবি না থাকলে হলে চলবে কী, লোকে দেখবে কী… ফলস্বরূপ, ৭৫০টি সিঙ্গল স্ক্রিনের জায়গায় এখন ৪০টি হল ধুঁকছে কোনও মতে এই বাংলায়। সেখানেও সিংহভাগ হল মালিককে নির্ভর করতে হয় হিন্দির বড় বাজেটের, হিরো নির্ভর ছবির উপরই। বিগত এক বছরে ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’র থিয়োরি মেনেই ‘পাঠান’, ‘গদর ২’, ‘জেলর’ নাড়িয়ে দিয়েছে দেশের বক্স অফিস। একেবারে ‘লারেলাপ্পা’ ব্যাপার (তথাকথিত শহুরে, শিক্ষিত অডিয়েন্সের একাংশ যা দেখে অনায়াসে ভুরু কুঁচকে তাকাবেন)। স্ক্রিন জুড়ে হিরো-ভিলেনের মারামারি, রক্তারক্তি এককথায় নতুন করে ভাবাচ্ছে সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকদের। হিরো কারা? সেই শাহরুখ, সানি, রজনীকান্তরাই। ২০২৩-এর বক্স অফিস কাঁপানো এই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ তিন হিরোই ৫০ পেরিয়েছেন সেই কবে (শাহরুখ: ৫৭+, সানি: ৬৬+, আর রজনী ‘স্যার’: ৭২+)। ট্রেড অ্যানালিস্টদের ভবিষ্য়দ্বাণী, ধারা বজায় রেখে ‘পাঠান’-এর পর আবারও বক্স অফিসে সাইক্লোন আনতে চলেছে শাহরুখের নয়া ছবি ‘জওয়ান’। ছবি মুক্তির তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। গোটা বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছেন বাংলা ছবির একদা ‘মাচো ম্যান’ চিরঞ্জিত চক্রবর্তী? তাঁর সঙ্গে কথা বলল TV9 বাংলা।

প্রশ্ন: ‘পাঠান’, ‘গদর ২’, ‘জেলর’… শাহরুখ খান, সানি দেওল, রজনীকান্ত—২০২৩-এর এখনও পর্যন্ত যা ট্রেন্ড, তা আবার প্রমাণ করল স্টারকে নিয়ে তৈরি করা ‘লার্জার দ্যান লাইফ মাস এন্টারটেইনার’-এর কোনও বিকল্প নেই বড় পর্দার ক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষ, সহজ কথায় common man বা common woman যাই-ই বলি না কেন, পর্দায় স্টারকে দেখতে সিনেমাহলে ভিড় জমাতে সাধারণ মানুষ প্রস্তুত আজও। OTT-র ভিড়ে বড় পর্দার স্টার আজও কতটা জরুরি আর প্রাসঙ্গিক?

চিরঞ্জিত: বড় পর্দা মানেই হল ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। যেহেতু পর্দাটা বড়, মানুষ ছোট কিছু দেখতে চান না। ‘শোলে’-র মতো ছবি ‘শোলে’ই হবে। ‘এক দুজেকে লিয়ে’ ‘এক দুজে কে লিয়ে’ই হবে। আমাদের আসলে স্টারের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের বাংলায় যেমন শেষ স্টার বলতে জিৎ এবং দেবকেই বলা যেতে পারে। এর পর আর স্টার তৈরি হয়নি। ছবির ট্রেন্ড পাল্টে গিয়েছে। এই প্রশ্নে যে তিনটে ছবির নাম বললেন, সবক’টাই কিন্তু ওল্ড স্টাইল ছবি। মাঝে যে এক্সপেরিমেন্ট করে ছবি তৈরি হচ্ছে, সেগুলো মাস (পড়ুন সাধারণ দর্শক)-এর ছবি নয়। মাস সাধারণ ছবি পছন্দ করে। লোকনাথবাবার জন্মতিথিতে দেখি, রাস্তায় লোকে বাঁক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তারকেশ্বরের উদ্দেশে। লোকনাথবাবাও মাসের ভগবান, তিনিও সুপারস্টার।

প্রশ্ন: ‘পাঠান’, ‘গদর ২’, ‘জেলর’-এর মতো ছবি অনেক দিন পর আবার ধুঁকতে থাকা সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগাতে পারল। মাল্টিপ্লেক্স আর পপকর্নের মাঝে সিঙ্গল স্ক্রিনের গুরুত্ব কতটা বক্স অফিসে?

চিরঞ্জিত: চিরকালই গুরুত্ব আছে। আমরা ছবি দিতে পারিনি বলে উঠে গিয়েছে হলগুলো। ছবি তৈরি করে হলগুলোকে ফের খোলার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। ৭৫০টা হাউজ় ছিল বাংলায়। এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৪০-এ। ৭০০ হল ফেরত আনা কঠিন।

প্রশ্ন: শাহরুখ খান, সানি দেওল, রজনীকান্ত—তিনজনের কেউই অল্পবয়সী হিরো নন। বরং তিনজনেই ৫০+। শিবাজী রাও গাইকোয়াড় অর্থাৎ রজনীকান্তের জন্ম তো সেই ১৯৫০ সালে। ‘ওল্ড ইজ় গোল্ড’ আজও। ‘পাঠান’, ‘গদর ২’, ‘জেলর’ কি আরও একবার প্রমাণ করল ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’?

চিরঞ্জিত: পুরনো চাল বলে কিছু নয়। সুপারস্টার সুপারস্টারই থাকেন। অমিতাভ বচ্চনের এখন সেই জায়গা নেই। তিনি লিড হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। সাদা দাড়ি, সাদা চুলের জন্য তিনি লিডটা ছেড়ে দেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে অনায়াসেই আর-একটা ‘জেলর’ তৈরি করা যেতে পারে। ভাবা হচ্ছে না, সেটাই পার্থক্য। আমাদের এখানেও তাই।

প্রশ্ন: ‘জওয়ান’-এর প্রি বুকিংকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় অবস্থিত সিঙ্গল স্ক্রিন ‘উমা টকিজ’-এর মালিক শিবপ্রসাদ ঘোষ TV9 বাংলাকে বলেছেন, “প্রথমে দিন (৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার) চারটে করে শো রেখেছিলাম। প্রথম শো ছিল বেলা ১১টায়। কিন্তু পাবলিকের যা ডিমান্ড, তাতে শো এগিয়ে আনতে বাধ্য হলাম। ৯.৩৫-এ দেখাব প্রথম শো।” সিঙ্গল স্ক্রিনকে কেন্দ্র করে শহরতলি, গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের যে উত্তেজনা, তার জন্য টলিউডকে সেভাবে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না কেন?

চিরঞ্জিত: আমাদের বাজেট নেই। খরচ করা যায় না। বাকিদের লেআউটটাই আলাদা মানের। আমরা এখানে সেটা পারি না। তার উপর আবার পেশাদারিত্বের অভাব। বাজেট বেড়ে গেলে আরও পেশাদার মানুষ মিলতে পারে। কিন্তু সেটা হয় না। এই একটি হল হয়তো চারটে শো টাইম দিচ্ছে। কিন্তু ছবির স্থায়িত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। হিন্দি ছবি সারা ভারতবর্ষে রিলিজ় করলে সাতটা শোতেই ছবিতে ব্যয় হওয়া অর্থ ওঠাতে পারবে। কিন্তু আমাদের এখানে তো হলই নেই। ছবি দেখানো হবে কোথায়?

প্রশ্ন: সিনেমা রিলিজ়ের আগে প্রচারে, সপ্তাহান্তে সিনেমাহল ভিজ়িটের সময়, সোশ্যাল মিডিয়ায় টলিউডের তাবড় শিল্পীকে প্রায়শই বলতে শোনা যায় ‘বাংলা ছবির পাঁশে দাঁড়ান’—অথচ বাস্তবে বিগ বাজেট হিন্দি ছবি রিলিজ় করলে মাল্টিপ্লেক্স থেকে কমতে শুরু করে বাংলা ছবির শো-এর সংখ্যা। কীভাবে দাঁড়ানো সম্ভব ‘বাংলা ছবির পাশে’?

চিরঞ্জিত: কোনও রাস্তাই দেখতে পাই না। কেবল একটাই রাস্তা আছে আমাদের হাতে। সাধারণ দর্শকের জন্য ছবি তৈরি করতে হবে। একবার ক্লিক করে গেলে ছবি চলতেই থাকবে। কোনও ব্যাপারই হবে না তখন। আমরা তো ঠিক মতো ছবি তৈরি করতেই পারছি না। দেব একটা ‘প্রজাপতি’ বানিয়েছে। ভালই লেগেছে। ‘ব্যোমকেশ’ কিন্তু চলবে না। শহরের মানুষ দেখতে পারেন। কিন্তু গ্রামে চলবে না। দেবকে বারবার ‘পাগলু’ তৈরি করতে হবে। সেটা ও করছে না… মেদিনীপুরে ফাংশন করতে গিয়েছিলাম। সেখানকার স্থানীয় মানুষ ‘প্রজাপতি’ দেখতে পারেনি। কারণ, হল নেই। জিতেরও একই অবস্থা। বাংলা ছবি চালাতে গেলে আরও সিঙ্গল স্ক্রিন দরকার আর দরকার দর্শকের বোধগম্য বাণিজ্য়িক গল্প।

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ

Next Article