স্নেহা সেনগুপ্ত
আজ মহানায়ক উত্তমকুমারের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হত ৯৬ বছর। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায় মামাবাড়িতে জন্ম হয় উত্তমের। পিতৃদত্ত নাম ছিল অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। পর্দায় অভিনয় করতে এসে নাম পাল্টে হয় ‘উত্তম’। তারপর উত্তমকুমার থেকে সরাসরি মহানায়কের আসনে জায়গা করে নিলেন। অনেকে বলেন উত্তম ছিলেন শিশুর মতো সরল। পর্দায় কৃষ্ণেন্দু, প্রশান্ত, অলোক, অগ্নিশ্বরের মতো চরিত্রে অভিনয় করে অতি সহজেই দর্শকমনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন। বহু মহিলা তাঁকেই মনে-মনে ‘প্রেমিক’ বানিয়ে পুজো করতে শুরু করেছিলেন। অনেকে নাকি বিয়েও করেননি উত্তমকুমারকে ভালবেসেছিলেন বলে। উত্তম বিশ্বাস করতেন পর্দার অভিনেতাদের সাধারণ মানুষের সামনে আসা দস্তুর নয়। যে কারণে আজ পর্যন্ত উত্তমকে নিয়ে মানুষের আকর্ষণ কমেনি। অতি অল্প সময়ে, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে শুটিং করতে-করতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছিল মহানায়কের। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাইয়ের সেই দিন বাংলার বুকে নেমে এসেছিল হাহাকার মাখা কান্না। রাস্তায় লোকে লোকারণ্য। জনস্রোত নেমেছিল। সে দিনটা মনে পড়লে আজও অনেকের মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। অনেকে মনে রাখতে চান না। কেবল মনে রাখতে চান সেই ভুবন ভোলানো হাসি-মাখা মুখটাকেই। যে হাসির জোরে আজও আনন্দ ফুটে ওঠে কারও কারও মুখে। যেমন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের। বাংলা বিনোদন জগতের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী, স্বর্ণযুগের জীবন্ত কিংবদন্তি এহেন সাবিত্রীদেবী উত্তমের প্রিয় ‘সাবু’ এবং মহানায়কের কাছের মানুষ। উত্তমকুমারের জন্মদিন উপলক্ষে ফোন পেয়ে যিনি এক গাল হেসে বলেন, “হ্যাঁ বলুন উত্তমবাবুর জন্মদিন তো, জানি…”। তাঁকে কিছু প্রশ্ন করেছিল TV9 বাংলা। কী উত্তর দিলেন সাবিত্রী?
২৫ জুলাই বঙ্গবিভূষণ, বঙ্গভূষণ ও মহানায়ক সম্মান দেওয়া হয়েছে। আপনি জানেন?
সাবিত্রী: তাই ‘মহানায়ক’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে? আমি তো জানিই না।
জানেন কাকে দেওয়া হয়েছে?
সাবিত্রী: না—এটাও জানি না।
সোহম চক্রবর্তী ও নুসরত জাহানকে দেওয়া হয়েছে…
সাবিত্রী: কাকে? ও তাই.. আমি জানি না—সত্যিই। আমি দেখিনি এবং আমার কাছে কোনও খবরও নেই। আমার এগুলোতে কোনও রিঅ্যাকশন হয় না।
কেন রিঅ্যাকশন হয় না?
সাবিত্রী: কোনও রিঅ্যাকশনই হয় না, কারণ এখানে জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে কি কিছু হয়? হয় না।
আপনার কী মনে হয়, মহানায়কের জায়গা কি কেউ কোনওদিনও নিতে পারবেন?
সাবিত্রী: এখনও তো কেউ নিতে পারেননি। (আমার) মৃত্যুর পর কী হবে জানি না।
আরও একটি বিষয় রয়েছে – এখন একদল স্বঘোষিত টলিউড’প্রিয়’ বলছেন: বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান। আজ যদি উত্তম কুমার বেঁচে থাকতেন, তিনি কী বলতেন বলে আপনার মনে হয়?
সাবিত্রী: দেখুন উত্তমকুমার কী রিঅ্যাকশন দিতেন সেটা আমি হয়তো বলতে পারব না। আমরা শিল্পীরা সব সময়ই পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তবে আমাকে কিংবা উত্তমবাবুকে কখনও বলতে হয়নি ছবির পাশে এসে দাঁড়াতে। চিরকালই দর্শকের অনেক ভালবাসা পেয়েছি। অনেক কিছুই এখন দেখছি, আগে সে সব দেখিনি।