স্নেহা সেনগুপ্ত
শনিবার থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবস্থল নন্দন। সকাল ৯টা থেকে গেট খুলেছে প্রাঙ্গনের। তারপর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। কাদের ভিড়? সাধারণ দর্শকের… যে দর্শককে এপার বাংলার নির্মাতাদের সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার অনুরোধ করতে শোনা গিয়েছে, ‘বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ান’। তবে আমাদের টলিপাড়ার কোনও ছবির জন্য এই ভিড় তৈরি হয়নি। ভিড় ছিল মূলত বাংলাদেশের একটি ছবির জন্য। ছবির নাম ‘হাওয়া’। সবাই বলছেন বাংলা ছবির ‘হাওয়া’ বদলে দিল বাংলাদেশ। এ বিষয়ে TV9 বাংলাকে অভিনেতা চিরঞ্জিতও বলেছেন, “হাওয়া তৈরি হয়েছে বটে একটা। বাংলাদেশের ছবি, সাউথের ছবি, হিন্দি ছবি নিয়ে হাওয়া তৈরি হয়েছে… আর আমাদের ছবি… থাক আর বললাম না!”
বাংলাদেশের নাটক, বিষয়ভাবনার উপর নির্মিত চলচ্চিত্র এককথায় মোহিত করেছে এপার বাংলার দর্শককে। সেই কারণেই নন্দনে হুড়মুড়িয়ে দর্শকের ভিড়। অভিনেতা চিরঞ্জিতের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে TV9 বাংলা। দক্ষিণী ছবির অঞ্চলিকতা, তাঁদের ডাব করা ছবি মানুষের ঘরে-ঘরে ঢুকে যাওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলতে-বলতে চিরঞ্জিতের সখেদ উক্তি, “সাউথ বাদ দিন। দেখুন, ওপার থেকে এপারে বাংলাদেশের লোকজন চলে আসছেন। তাঁরা এখানে কাজ করতে শুরু করেছেন। চঞ্চল চৌধুরী, মোসারাফ হুসেন সকলেই চলে এসেছেন এখানে। আমরা কিন্তু ওদের ওখানে গিয়ে দাঁত ফোঁটাতে পারছি না। কিন্তু ওঁরা চলে আসছেন… আমরা এখানেও কিছু করতে পারছি না…”
চিরঞ্জিত বলেছেন, “আমাদের ছবি একটা সময় সুপারডুপার হিট হত, কারণ আমরা সাধারণ মানুষের জন্য ছবি তৈরি করতাম। সেই জিনিসটাই এখন ওঁরা তৈরি করছে। এবং সাধারণ লোক সেটা গ্রহণ করে নিচ্ছেন। সাধারণ দর্শক যা পছন্দ করবে, শেষমেশ সেটাই তো চলবে, তাই নয় কী?”
বাংলাদেশের নাটক এবং টেলিফিল্ম নিয়েও আলোচনা করেন চিরঞ্জিত। বলেন, “আমি নিয়মিত বাংলাদেশের নাটকের দর্শক। ট্রেডমিলে এক্সারসাইজ় করতে-করতে বাংলাদেশের নাটক দেখি। ৪০-৪২ মিনিট হাঁটি আর সামনে একটা বাংলাদেশের নাটক চালিয়ে দিই। আমাদের এখানে তো ৪০-৪২ মিনিটের ছবিই তৈরি হয় না। ওরা সেটা তৈরি করে। ওই ফরম্যাটটা আসলে সুবিধে। তাই দেখতে-দেখতে হাজার-হাজার দর্শকের মতো আমারও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। দেখার মতো অভিনয়। পরিচালক অতনু ঘোষও বলেছেন, তাঁরও ভাল লাগে।”
ওপার বাংলার মতো কেন দর্শক তৈরি করতে পারছে না এবার বাংলা? উত্তরে চিরঞ্জিত বলেছেন, “আমাদের আসলে বদনাম হয়ে গিয়েছে। একবার আমরা টেলিফিল্ম তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম। সেটা চলেনি। টিভি চ্যানেলগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ কিন্তু তা-ই তৈরি করছে এখন। আমাদের টেলিফিল্ম ছিল intellectual, ওদের সেটা নয়। যে কোনও লোক বুঝতে পারবে। এই হল ওদের সঙ্গে আমাদের তফাৎ।”