লিলি চক্রবর্তী
অনেকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন তরুণবাবু। গতকালই খবরে দেখছিলাম। বুঝতে পারছিলাম উনি আর আমাদের মধ্যে থাকবেন না বেশিদিন। আজ সকালেই দুঃসংবাদ চলে এল। আমি একটা ছবিতে ‘তরু’বাবুর (ইন্ডাস্ট্রির সকলে তাঁকে ‘তরু’বাবু বলেই ডাকতেন) পরিচালনায় কাজ করেছি। সেই ছবির নাম ছিল ‘ফুলেশ্বরী’। আরও ছবি করার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই সব আর হয়ে ওঠেনি। সেটা নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। ‘ফুলেশ্বরী’ করার আগে আমি মুম্বইয়ে ছিলাম। সেখানে থেকে আমাকে তিনি কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন ওই চরিত্রটা করার জন্য। খুব ভাল লেগেছিল তরুণবাবুর সঙ্গে কাজ করে। ওঁর সব ছবিই আমি দেখতাম। একটা ছবিও বাদ দিইনি বলতে গেলে। খুবই ভাল লাগত আমার ওঁর কাজ।
খুবই মাটির মানুষ ছিলেন তরুবাবু। কোনওরকম অহংকার বলে কিছু ছিল না মানুষটার মধ্যে। আমার চরিত্রের সঙ্গে অনেক কিছু মিলে যায় তরুণ মজুমদারের। একই মেরুর মানুষ আমি আর তিনি। আপনারা তো জানেন আমি কী রকম মানুষ!
‘ফুলেশ্বরী’ করার সময় মেকআপ রুমে এসে তরুবাবু বলেছিলেন, “আপনি এত ভাল অভিনয় করছেন, দেখবেন আপনি বিএফজে অ্যাওয়ার্ড পাবেন”। কিন্তু আমি পাইনি পুরস্কার। তারও কারণ আমি জানি। একজনকে হ্যাটট্রিক (পরপর তিন বছর পুরস্কার পাওয়া) করানো হবে বলে একটা ফালতু ছবিকে পুরস্কৃত করেছিল ওরা। সেই জন্য অনেক বছর আমি বিএফজে অ্যাওয়ার্ডে যাইনি অভিমানে। পরে অনেক অনুরোধে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, যখন পাওয়ার ছিল, তখন তো দেননি। তবে জানেন তো, ফুলেশ্বরীর জন্য পুরস্কার পেলে তরুবাবুও খুশি হতেন।
পরবর্তীকালে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না আমার সঙ্গে তরুবাবুর। ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োর সামনে ওঁর গাড়ি আর আমার গাড়ি পাশাপাশি ছিল। আমরা হাত নেড়েছিলাম কেবল। সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তরুণ মজুমদারের। বিষয়টা আমরা জানতাম। মতের অমিল ছিল দু’জনের। সন্ধ্যা রায়ের ওঁকে বিয়ে করার একটা কারণও ছিল। একের পর-এক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তরুবাবুর পরিচালনায়। সেটাই হয়তো চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন হয়তো তরুবাবুকে বিয়ে করলে পরপর ছবিতে কাজ করতে পারবেন।
সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়িতে তরুবাবু খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। যে কারণের জন্য সন্ধ্যা রায় ওঁকে ছেড়ে গিয়েছিলেন, সেটা কষ্ট পাওয়ারও কথা। সেটা বলা যাবে এক্কেবারে।