কাকভোরে ভানুর দরজায় জোড়া ইলিশ পাঠালেন ছবি বিশ্বাস, সন্ধ্যায় এলেন সশরীরে! তারপর…
ইন্ডাস্ট্রিতে এমনও একটা সময় ছিল যেখানে পর্দার বাইরেও অভিনেতাদের মধ্য়ে গড়ে উঠত দারুণ সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্ক থেকেই ঘটত এমন সব মজার কাণ্ড যা কিনা সিনেমার ইতিহাসকে উজ্জ্বল করে তুলত।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মানেই ইঁদুর দৌড়। এক অভিনেতাকে পাশ কাটিয়ে আরেক অভিনেতার এগিয়ে যাওয়া। এমনকী, রটনা রয়েছে, সিনেমার সুযোগ পাওয়ার জন্য নাকি সহঅভিনেতাদের নিয়ে নানা গসিপ করতেও পিছপা হন না, অন্য অভিনেতারা। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে এমনও একটা সময় ছিল যেখানে পর্দার বাইরেও অভিনেতাদের মধ্য়ে গড়ে উঠত দারুণ সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্ক থেকেই ঘটত এমন সব মজার কাণ্ড যা কিনা সিনেমার ইতিহাসকে উজ্জ্বল করে তুলত। এমনই এক মধুর সম্পর্ক ছিল ভারতীয় চলচ্চিত্রের দুই প্রবাদপ্রতীম অভিনেতার মধ্যে। একজন হলেন ছবি বিশ্বাস ও আরেকজন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
সময়টা পাঁচের দশক। তখন একের পর এক ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন ছবি বিশ্বাস। অন্যদিকে বাঙালিকে হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভানু। তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমার কমেডি কিং। ছবি বিশ্বাস ও ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনে একসঙ্গে অনেকগুলো ছবি করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লাখ টাকা’, ‘বসু পরিবার’, ‘নতুন ইহুদি’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘সদানন্দের মেলা’। তবে একসঙ্গে অভিনয় করা ছাড়াও, সিনেপর্দার বাইরে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল ছবি ও ভানুর।
একদিন সকাল সকাল কলিং বেল বেজে উঠল ভানুর বাড়ির। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই ভানু দেখলেন, দরজার সামনে দুটো বড় সাইজের ইলিশ হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি লোক। একগাল হেসে লোকটি ভানুকে বললেন, ছবিদা (ছবি বিশ্বাস) এটি পাঠিয়েছেন! কিছু বোঝার আগেই ভানুর হাতে ইলিশ ধরিয়ে, রওনা দিলেন লোকটি। ব্য়াপারটি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না ভানু। ভানুর স্ত্রী জানালেন, নিশ্চয়ই ছবিদা রাতে আসবেন, তাই এই ইলিশ প্রাপ্তি!
ভানু স্ত্রীয়ের যেমন কথা, ঠিক তেমনই হল। সন্ধ্যা নাগাদ ভানুর বাড়িতে এলেন ছবি বিশ্বাস। পরনে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। ঘরে ঢুকেই ভানু ও তাঁর স্ত্রীকে দেখে একগাল হাসি। তারপর বলে উঠলেন, ভাইটি ঘটির রান্না আর পছন্দ হচ্ছে না। তাই বাঙালের হাতের ইলিশ খেতে এলাম! সেদিন সরষে দিয়ে ইলিশ ভাপা এবং ইলিশের পাতলা ঝোল বানিয়ে ছিলেন ভানুর স্ত্রী। ডিনার টেবিলে চলেছিল আড্ডাও। দুই অভিনেতার এমন বন্ধুত্ব সত্য়িই যে খুবই বিরল, তা যেন প্রমাণ করে এমন ঘটনা।
