ভানুর হার্ট অ্যাটাক, সৌমিত্রকে ফোন করলেন ভানুর স্ত্রী, এরপর সৌমিত্র যা করলেন তা অবিশ্বাস্য
অন্যদিকে আরেকজন ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বপ্নের নায়ক। যিনি পর্দায় কখনও অপু, কখনও ফেলুদা। তাঁর হিরোইজম ছিল সবাইকে তাক লাগানোর মতো। হ্যাঁ, একজন হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরেকজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

একজন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অসামান্য কৌতুক অভিনেতা। সারাটা জীবন সহঅভিনেতা থাকলেও, পর্দায় তাঁর ম্যাজিকে ঢাকা পড়ত সেই সময়ের অনেক দাপুটে অভিনেতার অভিনয়। অন্যদিকে আরেকজন ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বপ্নের নায়ক। যিনি পর্দায় কখনও অপু, কখনও ফেলুদা। তাঁর হিরোইজম ছিল সবাইকে তাক লাগানোর মতো। হ্যাঁ, একজন হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরেকজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সত্যজিৎ রায় একদা বলেছিলেন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বিদেশে হলে, তাঁর নামে আলাদা মিউজিয়াম হত। হ্য়াঁ, ছবির নায়ক না হয়েও, সহঅভিনেতা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে বিশাল ছাপ ছেড়ে গিয়েছেন এই প্রবাদপ্রতীম অভিনেতা। তবে অন্যদিকে, সত্যজিতের মানসপুত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়য়ের ক্যারিশমা কিন্তু সিনেপর্দায় নায়ক ইমেজের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছিল। এবং সত্যজিৎ নানা সাক্ষাৎকারে বার বার তা তুলে ধরেছিলেন। আর শুধুই কী সিনেপর্দায়, বাস্তবেও সৌমিত্রর হিরোইজমকে টেক্কা দিতে পারেননি কেউই। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর বিস্তর তুলনা হলেও, সৌমিত্র নিজেকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আর তার প্রমাণ এমন এক ঘটনা, যা সেই সময় টলিউডে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
সেই সময় সিনেমার পাশাপাশি থিয়েটারেও দাপিয়ে অভিনয় করছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মঞ্চে তাঁদের দেখার জন্য ভিড় উপচে পড়ত থিয়েটারে। ঠিক সেই সময় একদিন হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্য়ায়। চিকিৎসক অভিনেতাকে বললেন, কাজকর্ম ছেড়ে একেবারে বিশ্রাম নিতে হবে। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় একটানা বিশ্রাম নিতে পারবেন না। কেননা, তাঁর এক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। সেখানে না গেলে প্রযোজক বিশাল বিপদে পড়বেন। অভিনয়কে এতটাই ভালবাসতেন যে তিনি, স্বাস্থ্যের কথা মাথাতেও আনেনি। আর তাঁর এই ভালাবাসার জন্যই তিনি আজও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছেন। একে শরীর খারাপ, তার উপর অভিনয়টা নেশা, তাই ভানু বন্দ্যোপাধ্য়ায় সেদিন ভেবেছিলেন, প্রযোজককে রাগিয়ে দিলে, আর যদি কাজ না পান! ভানুর এমন ভাবনা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লেন তাঁর স্ত্রী নীলিমাদেবী। উপায় না দেখে, সোজা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে বসলেন। কেননা, অভিনয়ের বাইরেও ভানু ও সৌমিত্রর মধ্যে এক দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। শুধু তাই নয়, সেই নাটকে ভানুর সঙ্গে অভিনয় করছিলেন সৌমিত্র। এরপরই সৌমিত্রর এন্ট্রি একেবারে নায়কের মতোই। একটা কাজেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন ভানুর কথায় না হোক, নাটকের নায়কের কথাতে আসলে চিড়ে ভিজবে। আর হলও তাই। প্রযোজককে ফোন করে সৌমিত্র সটান বলে দিলেন, কয়েকদিন শো বন্ধ থাকুক। ভানুবাবু সুস্থ হলেই আবার নাটক হবে। ভানুর মাথায় প্রযোজকের লোকসান, কাজ না পাওয়ার ভয় কাজ করলেও, সেদিন সৌমিত্রর কাছে ভানুর স্বাস্থ্য গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি। আর তিনি যে সুপারহিট নায়ক, তা প্রমাণ পেল প্রযোজকের এককথায় রাজি হওয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়েই।





