‘মরে না গেলে…’, কামব্যাকে কিসের ইঙ্গিত বাংলা ব্যান্ড পরশপাথরের?
রাত ঠিক ১০টা। ঠান্ডা কনকনে। মাথায় উলের টুপি অর্ধেকের। মঞ্চ অন্ধকার। এলইডি স্ক্রিনে ব্যান্ড মেম্বার্সদের একে একে ছবির প্রকাশ। জ্বলল আলো। গেয়ে উঠল পরশপাথর। শুরু হল ‘ছাদে রাখা টবের সারি’ দিয়ে। জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘প্রিয় বন্ধু’ অ্যালবামের গান দিয়ে।

রক্তিম ঘোষ
ভোট রাজনীতির হালহকিকত, আন্তর্জাতিক খবরের খুঁটিনাটি কিংবা ফিল্মি গসিপ যাঁরা গোগ্রাসে গেলেন, সেই পাঠকদের জন্য এই প্রতিবেদন মুচমুচে হবে না। এই প্রতিবেদন তাঁদের জন্য, যাঁরা দুপুরে মিঠে রোদে নস্ট্যালজিয়ার চাদর মুড়ি দিয়ে শীতের আমেজ নিতে চান। বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে সাম্প্রতীকে এমন নজির নেই। দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন করে পথ চলা, পারফরম্যান্স। বৃহস্পতিবার রাতে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল বাংলা ব্যান্ড ‘পরশপাথর’।
১৯৯৫ সালে মহীনের ঘোড়াগুলির গানের সংকলন নিয়ে নতুন করে অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। নাম দিয়েছিল ‘আবার বছর কুড়ি পরে’। হলুদ মলাটে ডানদিকে সমুদ্র অশ্বের ছবি। বাঁদিক জুড়ে লেখা আবার বছর কুড়ি পরে। সেই অ্যালবাম এখনও ব্যান্ডপ্রেমী বাঙালি উল্টেপাল্টে শোনে মাঝেমধ্যে।আর সেই অ্যালবাম প্রকাশের ৩০ বছর পর আরও এক বাংলা ব্যান্ড উদযাপন করল তাঁদের ‘আবার বছর কুড়ি পরে’।
বৃহস্পতিবার বাইপাসের ধারে কেসিসির খোলা আকাশের নীচে সন্ধের ঠান্ডাটা ধীরে ধীরে তখন গাঢ় হচ্ছে। দর্শক ঢুকছে ইতিউতি। নতুন প্রজন্ম ভিড় করে এমন বাংলা ব্যান্ডের শোতে-এতো অবাক করার মত কিছু নয়। কিন্তু এদিনের সন্ধেয় ভিড়ের গরিষ্ঠতা ছিল পাকধরা চুলধারীদের। কারও চুলের ঘনত্ব পাতলা হয়েছে। মেদ জমে চিবুকে জোড়া ভাঁজ। ৩৮ থেকে ৫৫-এই বয়সীদের ভিড়ের আনাগোনা। বৃহস্পতি সন্ধ্যায় নস্ট্যালজিয়ার মাদকতা হৃদয় অবধি সেবনে উদ্যত সেই প্রজন্ম। যেন একরাশ না দেখার, না পাওয়ার খিদে জমা হয়েছে তাঁদের। গত ২০ বছর ধরে।
সপ্তাহে কাজের দিন। পরের দিন শুক্রবার। ভরপুর কাজের চাপ। কিন্তু মধ্যবয়স্ক বাঙালি প্রজন্মের তাতে ‘ডোন্ট কেয়ার ভাব’। প্রথমে মঞ্চ মাতাল পৃথিবী। প্রথমে নিজেদের গান। শেষ করল এপার ও ওপার বাংলার কিংবদন্তী ব্যান্ডশিল্পীদের গানের কোলাজ দিয়ে। আর কোলাজের শেষ গান ছিল তাঁদের, যাঁদের ছিল লক্ষ্মীবারের রাতটা! পরশপাথর! আবার বছর কুড়ি পরে…
রাত ঠিক ১০টা। ঠান্ডা কনকনে। মাথায় উলের টুপি অর্ধেকের। মঞ্চ অন্ধকার। এলইডি স্ক্রিনে ব্যান্ড মেম্বার্সদের একে একে ছবির প্রকাশ। জ্বলল আলো। গেয়ে উঠল পরশপাথর। শুরু হল ‘ছাদে রাখা টবের সারি’ দিয়ে। জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘প্রিয় বন্ধু’ অ্যালবামের গান দিয়ে। এরপর ‘ভালবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি’, ‘বন্ধু’, ‘সুজন’, ‘আজও আছে’, ‘পদ্মা’ আরও কত কী!আর শেষ হল ‘ইচ্ছেডানা ’ দিয়ে। মঞ্চে তখন আবেগের অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে। চোখের জল তখন লাভাস্রোতের মত নেমে আসছে অয়ন, হামটু, পিকলুদের চোখে। একসাথে কাঁদছেন’পৃথিবী’-র কৌশিক। ২০ বছর পর পরশপাথরকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার অনেকটাই কৃতিত্ব যাঁর। শোয়ের শেষে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালকে জানালেন, ‘পরশপাথর ছিলই। কোথাও যাইনি। সময়টা শুধু দরকার ছিল। আমি শুধু বারুদের স্ফুলিঙ্গের কাজটা করেছি..’ সেই কাজটাই তো এতদিন হয়নি। আর তাই কামব্যাক শো শেষে তখন রাত ১২টা বেজে গিয়েছে। উত্তেজনায় তখনও টগবগ করে ফুটছে ‘পরশপাথর’। টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের সামনে ‘পরশপাথর’ ব্যান্ডের লিড সিঙ্গার অয়ন, ড্রামার চিরদীপ ও বাঁশিবাদক নির্মাল্য ‘হামটু’ দে-রা জানালেন, ‘দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। ভাগ্যিস ২০ বছর লাগল। আরও বেশি সময়ও লাগতে পারত..’। চিরদীপ মজা করে বললেন, ‘গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান অবশেষে ঠিক হল । পরশপাথর এক হল ’। দৃপ্তকন্ঠে অয়নের দাবি, ‘মহামারী,খরা না হলে, আমরা মরে না গেলে পরশপাথর আর থামবে না… ’
কে আর চায়, পরশপাথর থামুক। ২০ বছর আগেও তো চায়নি ভক্তরা। অবশেষে ফিরল। শীতের রাতে কুয়াশায় আবছা হয়েছে পথবাতির আলো। আর সেই আলো চিরে ফের আকাশে উড়ল ‘ইচ্ছে ডানা’ ।
