শুধু ফুসফুসে সংক্রমণ নয়, কোভিডের জেরে রক্তে জমাট বেধে মৃত্যুর সম্ভাবনাও বাড়ছে!

aryama das |

May 09, 2021 | 4:42 PM

করোনাভাইরাসের জেরে ফুসফুস সংক্রামিত ( lung disease) হওয়া কোনও বিরল ঘটনা নয়। মারাত্মক সংক্রমণের জেরে তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শ্বাসকষ্টের জন্য কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

শুধু ফুসফুসে সংক্রমণ নয়, কোভিডের জেরে রক্তে জমাট বেধে মৃত্যুর সম্ভাবনাও বাড়ছে!
কোভিডের জেরে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা।

Follow Us

সাম্প্রতিক সমীক্ষা দেখা গিয়েছে, কোভিড ( COVID 19)  আক্রান্তের ফুসফুসে সংক্রমণ ছাড়া আরও কিছু মারাত্মক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত, তাঁদের শরীর সুস্থ থাকলেও, পরবর্তী কালে অন্য কোনও অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যেতে পারে। ফুসফুসে আদৌও সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়েছেন। ফুসফুস সুস্থ থাকলেও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দেখা দিতে পারে অন্য সমস্যা। চিকিত্‍সকরা জানাচ্ছেন, করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ দেশে আছড়ে পড়ার পরই করোনার উপসর্গ, করোনা আক্রান্তের পর রোগীর পরবর্তী কোনও সমস্যা নিয়ে নানান ভেল্কি দেখাতে শুরু করেছে। রক্ত জমাট (blood clots) হয়ে যাওয়া, আর্টিরিয়াল থ্রম্বোসিসের মতো নানান সমস্যা বর্তমানে দেখা দিতে শুরু করেছে। যা ফুসফুসের পাশাপাশি রক্তের নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বে নানান গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোভিড ১৯ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ১৮ থেকে ২৮ শতাংশ রোগীর রক্তে জমাট বাধার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। যা চিকিত্‍সাশাস্ত্রে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (Deep Vein Thrombosis(DVT) নামে পরিচিত। একই সঙ্গে ২-৩ শতাংশ রোগীর আর্টিরিয়াল থ্রম্বোসিসের (arterial thrombosis)  কেস ধরা পড়ে। দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ভেসেল এবং ইনার ভেসেল সার্জন ডাঃ অম্বরীশ সাত্বিক জানিয়েছেন, ”আমরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি এই জাতীয় কেস দেখছি। এখন তো প্রায় প্রতিদিন এই জাতীয় ঘটনা সামনে আসছে। ”

এই জাতীয় মারাত্মক রোগের কারণ এখনও সুস্পষ্ট নয়। দক্ষিণ-পশ্চিম দ্বারকার আকাশ হেলথকেয়ার বিভাগের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অমরিশ কুমার জানিয়েছেন, কোভিড রোগীর রক্তে জমাট বাঁধার কারণের পিছনে রয়েছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। তবে এখনও এটিকে নির্দিষ্ট কারণ বলে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। ডিভিটি হল এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের অভ্যন্তরে অবস্থিত স্নায়ুগুলির চারপাশে রক্ত জমাট বাঁধে। আর্টিরিয়াল থ্রম্বোসিস ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

ড. সাত্বিক আরও বলেছেন, কোভিডের জেরে ধমনীতে জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক, পক্ষাঘাত বা শরীরের অঙ্গগুলির কাজ করা বন্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছে ২-৫ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইও জানান, সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকেই বারবার এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, “রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত হয় করোনায়। এবং তার জন্য শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। সেই জমাট বাঁধা রক্ত থেকে হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হতে পারে। এছাড়া ব্রেইন অ্যাটাকে রোগী মারাও যেতে পারেন এ ছাড়া ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের মাধ্যমে পায়ের মধ্যে থ্রম্বাস জমা হতে পারে। সেখান থেকেও হার্ট বা ব্রেইন অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা যায়।” অনির্বাণবাবু জানান, এই সমস্যা করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও থাকতে পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অনেকের ক্ষেত্রে দেখছিলাম পোস্ট কোভিড পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে কেউ মারা যাচ্ছেন।”

শুধু তাই নয়, কোভিডের কারণে হাঁটুতে ব্যাথা, হাড়ের ক্ষয় হতে দেখা গিয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্তের কোষেও জমাট বাধতে থাকে। এইধরণে অবস্থাকে থ্রম্বোয়েম্বোলিজম  (thromboembolism (TE) বলে। কোভিড-১৯ এর কারণে এই ধরণের হার বেশি। মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেশি। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোভিড ১৯ কারণে শরীরে যে যে ক্ষতি গুলি হতে পারে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি সমীক্ষা চালানো হয়। চিন ও পশ্চিমী দেশগুলিতে কোভিডের কারণে ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

Next Article