Health Benefits: ভোরের পাখি নাকি রাতের পেঁচা? কারা বেশি বুদ্ধিমান ও সফল হন জীবনে?

Morning People or Night Owl: সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার যেমন ফায়দা আছে তেমনই রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ারও কিছু সুবিধা আছে। দেখা যাক সেগুলি কী কী—

Health Benefits: ভোরের পাখি নাকি রাতের পেঁচা? কারা বেশি বুদ্ধিমান ও সফল হন জীবনে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 30, 2022 | 7:15 AM

২০১৪ সালে স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এক সমীক্ষা চালান। সমীক্ষায় বিষয়বস্তু ছিল, ‘মর্নিং পিপল’ এবং ‘ইভিনিং পিপল’-এর মধ্যে তুলনা। অর্থাৎ ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠেন এমন মানুষ এবং রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান এমন মানুষের মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য খোঁজা ছিল ওই সমীক্ষার মূল লক্ষ্য। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় ভোরের পাখি বা যাঁরা খুব সকালে বিছানা ছাড়েন তাঁরা অনেক বেশি নাছোড়বান্দা মানসিকতার অধিকারী হন। এই ধরনের মানুষের মধ্যে ক্লান্তি, হতাশা, এবং দুশ্চিন্তা কম থাকে। অবসাদেও আক্রান্ত হন কম। জীবনে তৃপ্তিভাবও অনেক বেশি। ড্রাগ এবং অন্যান্য নেশাতেও আক্রান্ত হন কম। অন্যদিকে রাত জাগা মানুষরা বেহিসেবি, মেজাজি, আবেগপ্রবণ হন। তবে এদের মধ্যে সর্বদা নতুন কিছুর সন্ধান ও অজানা পৃথিবীকে খোঁজার মানসিকতা লক্ষ করা যায়।

তবে উক্ত বিষয়ে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে। সেই গবেষণার ফলাফলও চমকপ্রদ। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার যেমন ফায়দা আছে তেমনই রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ারও কিছু সুবিধা আছে। দেখা যাক সেগুলি কী কী—

ভোরের পাখি

• সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিরা সাধারণত আনন্দে থাকেন। স্বাস্থ্যও ভালো হয়। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সকালে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তির জিনে বিশেষ কিছু উপাদান থাকে যা তাদের বেশ কিছু অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচায়। উদাহরণ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ও ডিপ্রেশনের কথা বলা যায়। মার্কিন মুলুকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে হওয়া এক স্টাডিতে এই তথ্য উঠে এসেছে। এমনকী দেখা গিয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে সকালে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিরা অনেক বেশি সবল হন। এমনকী তাঁরা স্থূলত্বের সমস্যাতেও পড়েন কম। ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কাও কমে। সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ভয়ও কম থাকে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার বল্যে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। বিশেষ করে ভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ঘুমের চক্রের এমন হেরফের কেন হয় তা নিয়ে গভীর গবেষণা প্রয়োজন।

• গবেষকরা মনে করিয়েছেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিরা রুটিন মেনে কাজ করেন। তাঁদের এক্সারসাইজ করার সময় ও খাবার খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট থাকে।

• অন্যান্য কিছু স্টাডিতে দেখা গিয়েছে যাঁরা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁদের শারীরবৃত্তীয় ঘড়িটি একেবারে সঠিক থাকে। ফলে রোগভোগে ভোগার আশঙ্কাও কমে যায়।

• সফল ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ করে দেখা গিয়েছে তাঁরা অনেক ভোরে ওঠেন। ফলে সারাদিনে দরকারি মানুষের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলার সময় পেয়ে যান।

• সকালে তাড়তাড়ি ঘুম থেকে উঠলে স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট খাওয়া যায়। হার্ভাড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে হার্ট ডিজিজ হওয়ার ঘটনা বেশি।

• পড়াশোনা হোক বা কাজ, সকালে ঘুম থেকে উঠলে মনঃসংযোগ করা সহজ হয়। দরকারি বিষয়গুলি স্মৃতিতে ধরে রাখতেও সুবিধা হয়।

• সকালে উঠলে সারাদিনের ব্যস্ততা থেকেও কিছুটা সময় বের করে নেওয়া যায়। ফলে পরিবারের জন্য সময় দেওয়া যায়। দেখা গিয়েছে রোজকার অভ্যেসের চাইতে মাত্র ১ ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠলে একবছরে ‘১৫টি বাড়তি কাজের দিন’ হাতে আসে। এই বাড়তি সময় এক্সারসাইজ, ধ্যান, ভালো ব্রেকফাস্ট খাওয়া ও খবরে নজর বোলাতে সাহায্য করে।

• তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিরা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে চলেন। ফলে এক ধরনের ছন্দে তাদের কাজ পরিচালিত হয়।

রাতের পেঁচা

• রাতে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার পিছনে রাতের পেঁচাদের একটাই যুক্তি থাকে— সকালে ওঠার পরেই একগাদা ইমেল, ফোন কলে দিশাহারা লাগে। নিজের পছন্দের কাজে সময় দেওয়ার অবসর পাওয়া যায় না। তার চাইতে রাত জাগলে মানুষের এত ফোন কল ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ঝক্কি পোহাতে হয় না। একটানা কাজ করা যায়।

• বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক সমীক্ষায় দেখেছেন, রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া ব্যক্তিরা মানসিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন।

• রাতে একাধিক বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করা, নিজের জন্য সময় বের করার ক্ষেত্রে রাত জাগা ব্যক্তিরা অনেক বেশি সক্রিয়। কারণ তাঁরা জানেন তাঁদের হাতে কাজ করার জন্য অনেকখানি সময় আছে।

• মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেরিতে ঘুমানো ব্যক্তিরা অনেক বেশি সৃজনশীল হন। চিরাচরিত চিন্তাভাবনার বাইরে বেরিয়ে কাজ করেন।

• একদল ব্রিটিশ গবেষক দেখেছেন, সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তির শরীরে কর্টিজল বা স্ট্রেস হর্মোনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। কারণ তাঁরা দিনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান যা তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে রাতে দেরিতে বিছানা নেওয়া ব্যক্তিরা জানেন কাজ শেষ করার জন্য অনেকটা সময় রয়েছে তাঁদের হাতে। ফলে তাদের দেহে কর্টিজলের মাত্রা কম থাকে।

• আই কিউ বেশি হতে পারে রাতজাগা পেঁচাদের! আমেরিকান মনোবিদ সাতোশি কানাজাওয়া জানিয়েছেন, বুদ্ধিমান বাচ্চারা পরবর্তীকালে রাতজাগা পেঁচায় পরিণত হয়। অবশ্য মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রাত জাগা ব্যক্তিরা ভোরেরর পাখিদের তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করেন!

• সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিরা সাধারণত বাড়ির বাইরে কাজে বেরন। অন্যদিকে রাতে দেরিতে ঘুমানো ব্যক্তিরা ঘরের মধ্যে ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটান। দুনিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁদের কাছে খবরও বেশি থাকে।

• অবশ্য গবেষকরা বলছেন সকলেই যে রাত জাগতে চান তা নয়। কিছু ব্যক্তির কাজই এমন যে তাঁদের রাত জেগে কাজ করতে হয়। অনেকের কাছেই রাজ জেগে কাজ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক। তাই রাত জাগা আদৌ কতটা ভালো তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।