সুস্থ থাকতে ঘুমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ। সারাদিন যতই ডায়েট, প্রাণায়ম করুন না কেন রাতে যদি টানা ৬-৭ ঘন্টা অন্তত ঘুমোতে না পারেন তাহলে শরীর বিগড়ে যাবেই। ওজন তো কমবেই না, উল্টে ওজন বাড়বে। সেই সঙ্গে গ্যাস, অম্বল, বদহজম এসব লেগেই থাকবে। এছাড়াও কম ঘুম আমন্ত্রণ জানায় অন্যান্য শারীরিক সমস্যাকেও। ঘুম কম হলেই উলটো-পালটা চিন্তা, স্ট্রেস বাড়বে। আর এই কম ঘুমের পিছনে কারণ হিসেবে অনেকটা জায়গা দখল করে রাখে মোবাইল। মোবাইলের প্রতি আসক্তি কিন্তু আমাদের ঘুম কেড়েছে। স্ট্রেস বাড়লেই শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোনগুলো ঠিক মত কাজ করবে না। বিশেষত কর্টিসোল হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মত হয় না। হরমোনের তারতম্য হলেই থাইরয়েড, পিসিওডির মত একাধিক সমস্যা আসে।
আমরা প্রত্যেকেই কাজ করি ভাল থাকার জন্য আজকাল প্রত্যেকের জীবনেই নানা রকম চাপ। সেই সঙ্গে বেড়েছে কর্মব্যস্ততাও। অফিসেই কেটে যায় অধিকাংশ সময়। ফলে বাড়ি ফিলে সব কাজ ম্যানেজ করে ঘুমনোর মত সময় থাকে না। আর কীভাবে নিজের মতো করে সময় বার করে নেবেন তা কিন্তু আপনাকেই করতে হবে। নিয়মিত যদি এই কম ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তাহলে তা কিন্তু ক্লিনিক্যাল হয়ে যায়। অর্থাৎ তখন চিকিৎসের পরামর্শ মত চলতে হবে। ঠিক কোন কারণে ঘুম হচ্ছে তা তা খুঁজে বের করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন হলে ওষুধও খেতে হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা কিন্তু সব সময় ঘুমের ওষুধ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দেন। বরং জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনতে পারলেই আপনি এই সমস্যা থেকে অনেকখানি মুক্ত হতে পারবেন। আর সেই পরামর্শই দিচ্ছেন আর্য়ুবেদ বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন এই পাঁচ নিয়ম মেনে চলতে পারলে ঘুম যেমন ভাল হবে তেমনই কিন্তু শরীরও থাকবে সুস্থ।
প্রাণায়ম- প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রাণায়ম করুন। খাটের উপর বসেই করুন। মেরুদণ্ড সোজা করে বেসে একবার শ্বাস নিন, একবার শ্বাস ছাড়ুন। এই পদ্ধতি মেনে অন্তত ১৫ মিনিট এভাবে শরীরকে প্রাণায়মে অভ্যাস করান। এতে শরীরে রক্তসঞ্চালন যেমন ভাল হবে তেমনই কিন্তু মস্তিষ্কেও চাপ কম পড়বে। সেই সঙ্গে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকবে। ফলে মস্তিষ্ক শান্ত থাকবে এবং ঘুম তাড়াতাড়ি আসবে। প্রতিদিন অনুলোম, বিলোম, কপালভাতি, ভ্রামরি রাখুন তালিকায়।
ডিপ ব্রিদিং- একবার লম্বা শ্বাস নিন। আবার ছাড়ুন। সেই সঙ্গে একেবারে ভেতর থেকে ওম বলুন। পেটের ভেতর থেকে শব্দ আসবে। একবার ওম বলে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড রাখুন। এভাবে করতে থাকুন টানা ১০ মিনিট। এতে একাগ্রতা বাড়বে। সেই সঙ্গে মন শান্ত হবে। যখন এই এক্সসারসাইজ করবেন তখন কিন্তু চারিদিক নিঃশব্দ হওয়া দরকার। এতেই আপনি ভাল ফল পাবেন।
ভাল করে পা ধুয়ে নিন- বাড়িতে থাকলেও ঘুমোতে যাওয়ার আগে গোড়ালি পর্যন্ত জল দিয়ে ভাল করে পা ধুয়ে নিন। এতে যেমন পায়ের নোংরা বিছানায় যাবে না তেমনই তা কিন্তু ঘুমের জন্যেও সহায়ক। পা ধুলে পেশি শিথিল হয়, স্নায়ুর চাপ কমে। এক ফলে ঘুম ভাল হয়। শীতকালে যদি প্রতিদিন রাতে ইষদুষ্ণ জলে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে বসুন। জলের মধ্যে একটু এপসম সল্ট ফেলে দিন। এতে পায়ের ময়লা পরিষ্কার হবে আর পা আরাম পাবে।
মোবাইল এড়িয়ে চলুন- আজকাল আমাদের সারাদিনই কাটে মোবাইল, ল্যাপটপের সঙ্গে। আর তাই রাতের বেলা মোবাইল কিন্তু একেবারেই এড়িয়ে চলুন। অফিস এবং প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হয়ে গেলে ফোন থেকে দূরে থাকুন। ঘুমনোর আগে ফোন ঘাঁটা কিংবা সিনেমা দেখা কিন্তু খুবই খারাপ অভ্যাস। বরং হালকা কোনও মিউজিক শুনতে পারেন।
অয়েল ম্যাসাজ- এখন নানা রকম আর্য়ুবেদিক তেল পাওয়া যায় বাজারে। এছাড়াও পাওয়া যায় এসেন্সিয়ল অয়েলও। এই তেল দিয়ে সপ্তাহে একবার ম্যাসাজ করুন। কপাল আর কাঁধের কিছু পয়েন্টে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে পেশি শিথল হয় এবং ঘুম শান্তির হয়।
আরও পড়ুন: Sugar Cravings: কমবে মিষ্টির প্রতি লোভ, নিয়ন্ত্রণে থাকবে সুগারও! যদি মুখে রাখেন একটুকরো লবঙ্গ