ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি আর চোখের উপরেই সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। যে কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করে নেওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়াও শরীরের যাবতীয় ছাঁকনি প্রক্রিয়া চালায় কিডনি। যে কারণে কিডনি ভাল রাখতেই হবে। ডায়াবেটিস আর উচ্চরক্তচাপের জোড়া ফলকে কিডনির উপর চাপ পড়ে। প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না থাকতে পারলে পরবর্তীতে কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে কিডনির কার্যকারিতাও হ্রাস পায়। যা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হিসেবেই চিকিৎসা শাস্ত্রে পরিচিত। আজকাল সুগার আর হাই প্রেশারের সমস্যা ঘরে ঘরে। যে কারণে এই দুই রোগের হাত ধরে আসছে কিডনির সমস্যাও। কিডনি বিকল হতে শুরু করলে শে, অস্ত্র ডায়ালিসিস। কিন্তু তার আগে যাবতীয় সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারলে মুশকিল। কিডনির সমস্যা থাকলে তখনই বাড়ে রক্তচাপ। আর ডায়াবেটিসে গোপনেই শরীরের একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হয়ে যায়। নিয়মমাফিক পরীক্ষা না করালে সেক্ষেত্রে অজান্তেই কিডনির সমস্যা গুরুতর হয়ে যায়। আর কিডনির সমস্যা যে একেবারেই প্রথমদিকে ধরা পড়ে তাও নয়। একেবারে শেষের দিকে এসেই তা ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসারও তেমন থাকে না।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজের মধ্যে রয়েছে ওজন কমে যাওয়া, খিদে থাকে না, ক্লান্তি, গোড়ালি ফোলা, হাত আর পায়ে ব্যথা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, ঘুম না হওয়া, সারাক্ষণ ত্বকে চুলকোনো পেশীতে ব্যথা, মাথাব্যথা এসব-ই হল সাধারণ লক্ষণ। বর্তমান সমীক্ষা বলছে হাই ব্লাডপ্রেশারের সমস্যায় এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ এবং গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভুলছেন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। এরপাশাপাশি বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যাও। প্রায় ৮ কোটি মানুষ ভারতে এই মুহূর্তে ভুগছেন ডায়াবেটিসের সমস্যায়। আগামী ২৫ বছরে সেই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি বাড়বে, প্রায় ১৪ কোটি মানুষ আক্রান্ত হবেন সুগারে।
উচ্চরক্তচাপ আর কিডনির সমস্যা একসঙ্গে হলে সেখান থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ভারতে ১৫-৬৯ বছর বয়সের মধ্যে তিন শতাংশেরও বেশির মৃত্যুর কারণ হল এই কিডনির সমস্যা। এছাড়াও ভারতে প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির সমস্যা থেকে। আর এই সব মানুষরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেরাই আগে থেকে সতর্ক থাকেন না। কিডনির সমস্যার শেষ সমাধান হল ডায়ালিসিস। তবে সবার ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস করানোর সামর্থ্য থাকে না। এমনকী সব শরীরও এই প্রক্রিয়া নিতে পারে না। ডায়ালিসিস করতে গিয়েও মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে।
কিডনির সমস্যা হলে নিয়মিত ভাবে ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। শরীরে বকোন কোন লক্ষণের পরিবর্তন হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। সব সময় ওষুধ দিয়েই যে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এমন নয়। পাশাপাশি মেনে চলতে হবে ডায়েট চার্টও। এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ বাঞ্ছনীয়।