মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে (Breast Cancer) আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে— একথা আমরা সবাই জানি। সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বে প্রতিবছর ২৩ লক্ষ মহিলা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন ও প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ মহিলার প্রাণহানি ঘটে। এর ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগটি এখন বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের (Cancer) মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছেন কিছু কিছু চিকিৎসক। তাই বলে ব্রেস্ট ক্যান্সার যে শুধুই মহিলাদের হয় এমন ভাবলে ভুল হবে। পুরুষরাও ব্রেস্ট ক্যান্সারে (Mens Breast Cancer) আক্রান্ত হতে পারেন। মার্কিন মুলুকের দি সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্য অনুসারে আমেরিকায় প্রতি ১০০ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীর মধ্যে ১ জন পুরুষ। দেখা গিয়েছে, মহিলাদের মধ্যে যে অতিপরিচিত প্রকৃতির ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়, পুরুষদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রকৃতিও একইরকম।
ইনভেসিভ ডাকটাল কার্সিনোমা: এই ধরনের ক্যান্সারে ডাক্ট (যে পথে দুধ পরিবাহিত হয় ও স্তনবৃন্তে আসে)-এর মধ্যে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমশ ক্যান্সার ব্রেস্ট-এর অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ইনভেসিভ ক্যান্সার সেল শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইনভেসিভ লোবিউলার কার্সিনোমা: এক্ষেত্রে ব্রেস্ট-এর লোবিউল অংশে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে ও পরে ব্রেস্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়।
ডাক্টাল কার্সিনোমা: স্তনের এই অসুখের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে তা ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এর তথ্য অনুসারে, পুরুষের স্তনবৃন্তের পিছনের দিকে অল্প কিছু সংখ্যক কোষের মধ্যে কান্সার বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে বেশি দেখা গিয়েছে। তবে কম বয়সিরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
লক্ষণ
• ব্রেস্ট-এ বেদনাহীন লাম্প বা টিউমারের মত ফোলা অংশ।
• ব্রেস্ট-এর ত্বকে লাল ভাব, র্যাশ, খোসা ওঠার মতো ত্বকের আবির্ভাব।
• ত্বকে অস্বস্তিভাব।
• স্তনবৃন্ত থেকে রস বেরনো। মাঝেমধ্যে রসের সঙ্গে রক্তও মিশে থাকে।
• স্তনবৃন্তের ভিতর দিকে ঢুকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের অংশে ব্যথা।
• বগলে ছোট ফোলা অংশ বা গ্লান্ড ফুলে যাওয়া।
কাদের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি?
পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ দায়ী থাকতে পারে—
বয়স: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
মিউটেশন: বংশে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে বা জিনের মিউটেশন ঘটলে হতে পারে ব্রেস্ট ক্যান্সার।
রেডিয়েশন থেরাপির প্রভাব: বুকের অংশে অন্য কোনও ধরনের ক্যান্সারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিতে হলে তার প্রভাবেও ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
হর্মোন থেরাপি: দেহে মাত্রাতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হর্মোনের মাত্রা বাড়ানোর চিকিৎসা করালে বাড়ে পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা। প্রস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেকসময় ইস্ট্রোজেন হর্মোনের থেরাপি নিতে হয়।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম: বিরল ধরনের জিনগত এই অসুখে একজন ব্যক্তি বাড়তি এক্স ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এই পরিস্থিতি শরীরে বাড়তি ইস্ট্রোজেন তৈরি করে।
সিরোসিস: সিরোসিস অব লিভারের মতো অসুখ দেহে অ্যান্ড্রোজেন হর্মোনের মাত্রা হ্রাস করে। একইসঙ্গে এহেন পরিস্থিতি বাড়িয়ে দিতে পারে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা যা ব্রেস্ট ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ায়।
মাত্রাতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্ব: বয়স্ক ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই বয়সের কারণে এক্সারসাইজ করতে পারেন না। এর ফলে তাদের ওজন বেড়ে যায়। দেখা গিয়েছে স্বাভাবিক ওজনের পুরুষের তুলনায় স্থূলকায় পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা
অপারেশনই পুরুষের স্তন ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা। এক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে প্রথমে টিউমার বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজন বুঝে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি কিংবা উভয় থেরাপি দিতে হতে পারে।