ইউরিন পাস করার সময় গোপনাঙ্গে ব্যথা ও জ্বালা বোধ হওয়া কিন্তু সত্যিই চিন্তার ব্যাপার। নানাভাবে সংক্রমণ হলে এই ধরনের উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। কিছু সংক্রমণ সহজে সারতেও চায় না। এমনকী অন্যের দেহেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই উপসর্গ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা ও জ্বালাভাব একাধিক অসুখের দিকে ইশারা করে! সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেহের অন্যান্য অঙ্গে। দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। এছাড়া এই ধরনের শারীরিক লক্ষণের কারণে রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে কাজকর্মেও মনোযোগ দিতে পারেন না। দৈনন্দিন জীবন সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়। দেখা যাক কী কী কারণে এমন সমস্যা হতে পারে—
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)
পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক— যে কেউ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে (UTI) আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলাদের মধ্যে ইউটিআই-এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইউরিন পাসের সময় জ্বালাভাব ও তলপেটে ব্যথা হলে তা কিন্তু ইউটিআই-এর কারণেও হতে পারে। যোনিপথ বা পেনিস মারফত কোনও ব্যাকটেরিয়া ব্লাডারে প্রবেশ করলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। মূত্রথলিতে পৌঁছনোর পর ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে ও মূত্রকে অম্লধর্মী (অ্যাসিডিক) করে তোলে। তাই মূত্রত্যাগের সময় গোপনাঙ্গে জ্বালা ও ব্যথা করে। এছাড়া ইউটিআই-এ আক্রান্ত ব্যক্তি বারংবার মূত্রত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। মূত্রের বেগ আসলে তাঁর মূত্র ধরে রাখতেও কষ্ট হয়। অথচ মূত্রের মাত্রা বেশি হয় না।
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (STI)
ইউটিআই নয়, অথচ মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা ও ব্যথা হচ্ছে? তাহলে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক থেকে বাহিত সংক্রমণের কারণে। বহু মহিলাই এসটিআইকে ইউটিআই ভেবে ভুল করেন। অথচ এসটিআই-এর চিকিৎসা যত দ্রুত করা উচিত। এসটিআই-এর অন্যান্য লক্ষণ—
• গোপনাঙ্গে চুলকানি।
• ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জে দুর্গন্ধ।
• যোনিপথে ঘা।
সিস্টাইটিস
ব্লাডারে প্রদাহ হলে দেখা দিতে পারে সিস্টাইটিস। বহু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এই ধরনের সমস্যার উদ্রেক ঘটায়। ফলে মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা হয়। ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
কিডনি সংক্রমণ
মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা ও মূত্রের সঙ্গে রক্ত বেরলে বুঝতে হবে ইউরিনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে কিডনিতেও! এই ঘটনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিডনি সংক্রমণের অন্যান্য লক্ষণ হল জ্বর, পেটে ব্যথা, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সময়ে চিকিৎসা না হলে কিডনি সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে। এমনকী কিডনি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে রক্তেও! এর ফলে রোগীর প্রাণ নিয়েও টানাটানি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কিডনি এবং ব্লাডার স্টোন
ইউরিনে থাকা খনিজ জমে কেলাসের আকার নিলে দেখা দিতে পারে কিডনি বা ব্লাডার স্টোনের সমস্যা। ব্লাডারে থাকা স্টোন মূত্রথলির অন্দরের গাত্রে প্রদাহ তৈরি করলে বা কিডনিতে থাকা স্টোন বেরিয়ে এসে ভুল জায়গায় আটকে গেলে ইউরিন নির্গমন আটকে যেতে পারে! রোগী প্রবল বেদনা অনুভব করেন।
স্টোনের আকার ছোট হলে চিকিৎসকরা রোগীকে বেশি পরিমাণে জলপান করতে বলেন। আকার ছোট হলে নানা সময়ে ইউরিনের সঙ্গেই স্টোন বেরিয়ে যায়। তবে স্টোনের আকার বড় হলে অপারেশন করানোর দরকার পড়তে পারে।
যোনিপথে ক্ষত!
যোনিপথ শুকনো হয়ে গেলে তা নানাভাবে মহিলাদের বিব্রত করতে পারে। বিশেষ করে যৌন সম্পর্কের সময় যোনিপথের অন্দরে ক্ষত তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এর ফলে মূত্রত্যাগের সময় যোনিপথে জ্বালা বোধ হয়। বিশেষ করে মেনোপজের পরে মহিলারা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। মেনোপজ হলে মহিলাদের দেহে একাধিক হর্মোনের মাত্রার পরিবর্তন হয়। এর ফলে যোনিপথের দেওয়ালের গঠনেরও পরিবর্তন হয়। যোনিপথের ত্বক অনেক পাতলা হয়ে যায়। এরফলে যোনিপথে একাধিক ক্ষত হয় যা মূত্রত্যাগের সময় জটিলতা সৃষ্টি করে।
অতএব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন।