ছোট্ট চার পেয়ে কখন যে পরিবারের একজন হয়ে ওঠে বোঝা যায় না। পরিবারের ভাল মন্দ সবটুকু জুড়েই থাকে সেই সারমেয়। আর মালিকের সঙ্গে পোষ্যের সম্পর্কও অনন্য। বিশেষত ওই পোষ্য যখন হয় কোনও কুকুর। বাড়িতে একটা কুকুর থাকলেই পরিবারের সকলের মন ভাল করে দেওয়ার দায়িত্বভার সে নিজেই নিয়ে নেয়। কিন্তু জানেন কি মালিকের দেখা না পেলে মন খারাপ হয় কুকুরেরও। আর যখন সে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মালিককে দেখতে পায়, কুকুরের চোখ ভরে ওঠে জলে। আপনার দিকে যে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে কুকুরটি এটা হল আপনাকে দেখে তার খুশির কান্না। এটা কোনও ‘পেট লাভার’-এর বক্তব্য নয়। বরং এমনটা দাবি জানাচ্ছে নতুন গবেষণা।
কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ সময় পর মালিকের সঙ্গে কুকুরের দেখা হলে পোষ্যের চোখে দেখা যায় খুশির কান্না। ওই গবেষণায় শিরমার টেস্টের মাধ্যমে কুকুরের চোখের জলের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে, যেখানে চোখের পাতার নীচে একটি বিশেষ স্ট্রিপ রাখা হয়। পোষ্যকে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা তার মালিকের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। তারপর যখনই কুকুরের দেখা হয় তার মালিকের সঙ্গে প্রথম পাঁচ মিনিটেই কুকুরের কান্নার পরিমাণ বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কুকুরের মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ার পিছনে অক্সিটোসিন হরমোন দায়ী। অক্সিটোসিন হরমোন দু’জন মানুষের মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করতে এবং বিশ্বাস তৈরিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। আর এই ‘ভালবাসার হরমোন’ই কাজ করে পোষ্য ও মালিকের সম্পর্কে।
তবে এমনটা নয় যে দিনের শেষে মালিককে দেখতে পেলে শুধু কুকুরের চোখে ভরে আসে জলে। পাশাপাশি মালিকেরও মানসিক চাপ কমে যখন সে কিছুটা সময় তাঁর পোষ্যের সঙ্গে কাটায়। দৈনন্দিন জীবনে কাজের চাপ এবং আরও অন্যান্য মানসিক চাপ থাকে। এসব কিছুর মাঝে আপনি যদি মাত্র ১০ মিনিট সারমেয়ের সঙ্গে সময় কাটান তাহলে আপনিও কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
কুকুর আমাদের জীবনে সেই মানসিক শান্তি এনে দেয়, যার হদিশ আমরা সবসময় করে থাকি। এখন ভার্চুয়াল ভাবে মানুষ এতটা বেশি অ্যাক্টিটিভ হয়ে গিয়েছে যে বাস্তব জীবন গ্রাস করেছে একাকিত্ব। কিন্তু এই মুহূর্তে আপনার যদি একটা কুকুর থাকে, তাকে আলিঙ্গন করলেই দূর হয়ে যাবে সব অবসাদ। তখন একাকিত্ব দূর করার জন্য আলাদা করে বন্ধুর প্রয়োজন হবে না আর। যদিও এই বিষয়টাকে ‘পোষ্য থেরাপি’ বললেও খুব একটা ভুল হবে না।